বাংলাদেশে অব্যাহত রাজনৈতিক সহিংসতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন।
এক বিবৃতিতে সংস্থাটি সব রাজনৈতিক দলের প্রতি সংযম প্রদর্শন এবং অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল শান্তিপূর্ণভাবে তাদের বিরোধ মিটমাটে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই সংঘাত বাড়ছে বলে বিবৃতিতে বলা হয়। এ সংঘাতকে উদ্বেগজনক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন মানবাধিকার কমিশনের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি।
গতকাল জেনেভায় এক সংবাদ বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। বিবৃতিতে চলমান রাজনৈতিক সংঘাতে যেসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে তার সবগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করা হয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ড সরকার বা সরকারের বাইরে যাদের দ্বারাই হোক না কেন বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে সেগুলোর নিরপেক্ষ এবং কার্যকর তদন্তের উদ্যোগ নেবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর দ্বারা বিরোধী দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গ্রেপ্তার এবং আটক যেন স্বেচ্ছাচারী না হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নেয়া পদক্ষেপগুলো যেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের গণ্ডির মধ্যে থাকে সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে বলে তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।
তিনি আরও বলেন, একই সঙ্গে সরকারকে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, চলাফেরা ও বাকস্বাধীনতার ওপর সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। বাংলাদেশে অবনতি হতে থাকা রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা সহিংসতার সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বিগ্ন যা ইতিমধ্যে নিয়মিত প্রাণহানি ঘটিয়েছে, ব্যাহত করেছে জীবনযাত্রা; যেমনটা দেখা গিয়েছিল ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগ দিয়ে।’ ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল বিরোধী দল বিএনপি (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল)।
৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের বছরপূর্তিতে বিএনপি সমর্থকদের প্রতি অবরোধ পালনের ডাক দিলে বর্তমান অস্থিরতা শুরু হয়। এদিকে সরকার সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং অন্যান্য সিনিয়য় সদস্যদের দলের ডাকা প্রতিবাদে অংশগ্রহণে বাধা দেয়। এরপর থেকে এক ডজনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কয়েক শ’। দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী নেতাকে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নির্বিচারে যানবাহনে আগুন দেয়ার ঘটনায় বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন। মঙ্গলবার একটি গাড়িতে এ রকম হামলায় এক শিশুসহ চারজন পুড়ে মারা যাওয়ার ঘটনা এবং কালিয়াকৈরে বাসে আগুন লাগানোর ঘটনায় একজনের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়।
এছাড়াও বিএনপি’র সিনিয়র এক উপদেষ্টার ওপর চালানো হামলায় তাকে গুলি এবং তার গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে বিবৃতিতে।
এর আগে ২০১৩ সালে বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন সংঘাতে প্রাণহানির ঘটনায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের তৎকালীন হাইকমিশনার নাভি পিল্লাই দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে তাদের মতপার্থক্য দূর করে অবিলম্বে ধবংসাত্মক নীতি পরিহারের আহ্বান জানিয়েছিলেন।