দেশে বিজিবি মহাপরিচালক, পুলিশের আইজিপি এবং র্যাবের মহাপরিচালক নাগরিকদের বিরুদ্ধে হুমকি দেয়ার পর থেকেই ক্রসফায়ারের নামে রাজনৈতিক নিরস্ত্র নেতা কর্মী হত্যা শুরু হয়েছে।
আন্দোলনকে দমন করতে রাজনৈতিক আওয়ামী লীগের চেয়ে রাষ্ট্রীয় পোশাকের আড়ালের আওয়ামী লিগারদের তৎপরতা হঠাৎ করে বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ বেড়েছে। ক্রসফায়ার কাউকে ভয় দেখানোর জন্য দেয়া হচ্ছে না। সরাসরি বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর নেতা কর্মীদের দেয়া হচ্ছে।
গুমও চলছে এর পাশাপাশি। তবে গোপন বিপ্লবী দলগুলোর নেতাদেরও পুনরায় সরকারী হত্যার শিকার হতে হচ্ছে। অহিংস আন্দোলন করতে গিয়ে একের পর এক লাশ বাড়ছে। হচ্ছে না রাষ্ট্রীয় এই হত্যার বিচার। এমনকি রাজনৈতিক নেতারাও এ সবের খোঁজ নিচ্ছেন না।
তাই সহসাই ক্রসফায়ার প্রদানকারী রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের উপর পাল্টা আক্রমণ চালানো হতে পারে বলে জানা গেছে। বিষয়টি হুমকির পর্যায়ে নেই। ধারনা করা হচ্ছে পাল্টা আঘাত হবে গেরিলা কায়দায়।
টানা অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচিকে ঘিরে রাজধানীসহ সারা দেশে এ পর্যন্ত ১৫ জন নিহত হয়েছে সরকার দলীয় সমর্থক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে।
গত পাঁচদিনে ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছেন বিরোধী জোটের তিন নেতা। তাদের মধ্যে দু’জন ছাত্রদল আর একজন জামায়াত নেতা। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন দু’জন। আর র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন এক ছাত্রদল নেতা।
ডিবির ক্রসফায়ারের সর্বশেষ শিকার খিলগাঁও থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান জনি। সোমবার দিবাগত রাতে নড়াইলের পৌর কাউন্সিলর ইমরুল কায়েস ঢাকায় ডিবির ক্রসফায়ারে নিহত হন।
শুক্রবার রাতে যৌথবাহিনীর অভিযানের মধ্যে চাঁপাই নবাবগঞ্জের কানসাটে র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হন আরেক ছাত্রদল নেতা। নিহত মতিউর রহমান শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ছিলেন। র্যাব-৫ এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্পের ইনচার্জ মেজর কামরুজ্জামান মতিউরকে গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার করেন।
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের পূর্ববাংলা কমিউনিষ্ট পার্টি’র নাসির উদ্দীন নাসির (৫০)কে শনিবার (১৭ জানুয়ারী) রাতে আগ্নেয়াস্ত্রসহ একদল সাদা পোশাকধারী পুলিশ শ্বশুর বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করে।
এভাবেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্রশফায়ারে জড়িতদের সপরিবারে ছবি দেয়া হচ্ছেঃ
তবে গত কয়েকদিনের নিহত বিরোধী নেতাদের মৃত্যুর জন্য দায়ী নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের পরিচয় নিশ্চিত করে এসব হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নেয়ার কথা ব্যপক ভাবে প্রচারিত হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে।
রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে বিনা বিচারে এই সকল হত্যাকাণ্ড যেমন হত্যা, সাধারন মানুষের হাতে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্যরা হত্যা হলেও তা সমান হত্যা। তবে অনেক মানুষ মিলে গণপিটুনি দিয়ে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর কাউকে মেরে ফেললে সেটি গণ আকাংখা হিসেবে বিচার করা কঠিন হয়ে পড়ে।
হত্যার শিকার হতে হতে রাজনৈতিক নেতা কর্মীরা সাধারন অপরাধিদের মত সরকারী বাহিনীর হত্যার শিকার হতেই থাকবে এই কনসেপ্ট মেনে নেয়ার লোকজন এখন কমে যাচ্ছে। রাজনৈতিক নেতাদের অহিংস আন্দোলনের কথা বার্তা এখন হাসির খোরাক হচ্ছে। এধরনের প্রতিশোধ প্রবনতা আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করবে এবং তা হবে দেশের জন্য অমঙ্গলজনক।