বাংলাদেশে আজ গণতন্ত্র বন্দী। দুর্নীতি,দু:শাসন, জুলুম নির্যাতনে মানুষ অসহায়। গণতন্ত্রের প্রতীক বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সহ সারা দেশ আজ কার্যত অবরুদ্ধ। সুস্থ বিবেকবান মানুষ মাত্রই মনে করেন দেশের বৃহত্তর দল বিএনপির চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অগণতান্ত্রিক, স্বৈরতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী আচরণের মাধ্যমে তার অফিসে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিলো প্রায় ২ সপ্তাহ।
পিপার স্প্রে প্রয়োগের আইনী বৈধতা নিয়ে হাই কোর্টের রুল থাকা স্বত্বেও অমানবিকভাবে অবরুদ্ধ অবস্থায় একেবারে কাছে থেকে সুনির্দিষ্ঠভাবে লক্ষ্য করে প্রকাশ্যে দিনে দুপুরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপর বিষাক্ত রাসায়নিক কেমিক্যাল পিপার স্প্রে প্রয়োগ করা হয়। যার ফলে নেতা কর্মীর সাথে খবর সংগ্রহ করতে আসা সাংবাদিকসহ বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই শুধু দলের নেতা কর্মীই নয় দেশের সচেতন মহল রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে নিষিদ্ধ পিপার স্প্রে প্রয়োগের জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আদালতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ হুকুমদাতা হিসেবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিচারের দাবি উঠছে। বিষয়টি আগামীতে দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক আদালত পর্যন্ত গড়াতে পারে।
এদিকে দেশের সকল পত্রিকা, ইলেট্রনিক মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারপারসন দেশনায়ক তারেক রহমানের কোনো বক্তব্য প্রকাশ, প্রচার, সম্প্রচার, পুন:উৎপাদন না করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে তথ্য সচিবের প্রতি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা একে মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ ও গণতন্ত্রের জন্য অশনি সংকেত হিসেবে দেখছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের অতীত ইতিহাস ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক কর্মকান্ড বিশ্লেষণ করলে বর্তমান ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থার একটা পরিস্কার চিত্র সবার সামনে ফুটে উঠে ।
আওয়ামী লীগ প্রতিষ্টার শুরু থেকেই এ দলের রাজনীতি বেশ রহস্যময়। দেশ স্বাধীনের পর শেখ মুজিবুর রহমান তার জীবদ্দশায় স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগসহ সকল দল বিলুপ্ত করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতন্ত্র পুন:প্রবর্তনের সুযোগে আওয়ামী লীগ নামের দল আবার পুনজীবন পায়। শেখ হাসিনার বর্তমান আওয়ামী লীগের পূর্ব নাম ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকায় টিকাটুলির কাজী বশীরের বাসভবন রোজ গার্ডেনে ইস্ট পাকিস্তান ‘‘আওয়ামী মুসলিম লীগের’’ জন্ম হয়। মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন পরিচালনার জন্য ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ গঠন করেন। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হয়েছিলেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত মওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।
অনেকে মনে করেন শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের কিছু সিদ্ধান্ত জাতির সাথে প্রতারণার সামিল ছিল। এক সময় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতার অংশীদার হয়। সোহরাওয়ার্দী প্রধানমন্ত্রী হয়ে বলতে লাগলেন,‘স্বায়ত্তশাসনের দাবি একটি রাজনৈতিক ধাপ্পাবাজি ছাড়া আর কিছু নয়।পূর্ব বাংলা শতকরা ৯৮ ভাগ স্বায়ত্তশাসন ভোগ করছে।’ মওলানা ভাসানী এ কথার সাথে একমত হতে পারলেন না। ঐতিহাসিক কাগমারি সম্মেলন করে তিনি আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে ন্যাপ গঠন করেন। এভাবে দলটি দ্বিধা বিভক্ত হয়ে আওয়ামী লীগ ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে পরিণত হয়। মওলানা ভাসানী তার দল গঠন করতে গিয়ে তিনি এবং তার সহযোগীরা আওয়ামী লীগের ঝটিকা বাহিনীর হাতে অপদস্তও হয়েছিলেন।
সোহরাওয়ার্দীর রহস্যজনক অকাল মৃত্যুর পর শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের হাল ধরেন। তখন থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী অপতৎপরতা শুরু হয়। কিভাবে শেখ মুজিবুর রহমান দলীয় নেতৃত্বে আসেন সেই কলুষিত ইতিহাস এখানে না-ই বা বললাম।
আওয়ামী লীগ কোন কিছুতেই কারো কৃতিত্ব দিতে চায়না। সর্বগ্রাসী আওয়ামী আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস, আমাদের আদর্শ মূল্যবোধ, আইন আদালত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সবকিছুকেই কলুষিত করছে।
শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি শাসন শোষনের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন আন্দোলন করেছেন এনিয়ে কেউ বির্তক করে না। কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। পূর্বপাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের জন্য আন্দোলন করলেও স্বাধীনতার আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। ইতিহাস বিকৃতিতেও আওয়ামী লীগ পিছিয়ে নেই। একবার বলে শেখ মুজিবার রহমান নাকি ৭ মার্চে স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছিলেন। আবার তাদের দাবী ৭১ এর ২৫ মার্চ মধ্যরাতে শেখ মুজিবুর রহমান নাকি স্বাধীনতার ঘোষনা লিখে রেখে গিয়েছিলেন। যদিও এর সপক্ষে তারা এখনো কোন বিশ্বাসযোগ্য তথ্য প্রমান হাজির করতে পারেনি।
প্রকৃত সত্য হলো শেখ মুজিবুর রহমান কখনো স্বাধীনতার ঘোষনা দেননি এমনকি স্বাধীনতার ঘোষনা দেয়ার ব্যাপাওে তার কোন আগ্রহও ছিলোনা। ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় শেখ মুজিবুর রহমানের বাসায় মরহুম তাজ উদ্দিন, আমিরুল ইসলাম, আব্দুল মোমেন সহ অনেক নেতাই গিয়েছিলেন। তাদের কারো কাছেও শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষনার কোনো কাগজ লিখে থাকলে সেটি দিতে পারতেন। অপ্রিয় হলেও সত্য, মুক্তিযুদ্ধের নয়মাসে আওয়ামী লীগের প্রথম সারির কোন নেতাকেও রনাঙ্গনে দেখা যায়নি। সবাই নাকি সীমান্তের ওপারে সক্রিয় ছিলেন। এরা আর খাটি বাংলাদেশী হতে পারলেন না। এখনো তারা ওপার নিয়েই ব্যস্ত।
স্বাধীন বাংলাদেশে শেখ মুজিবুর রহমান রক্ষী বাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনী গঠন করে তাদের মাধ্যমে বিরোধী দলের ওপর নিপীড়ন নির্যাতন চালান। অনেকের উপর লাল ঘোড়া দাবড়াইয়া দেন। তিনি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বাকশাল গঠন করে ভিন্ন সকল দলের অস্তিত্ব বিলোপ, চারটি সংবাদপত্র ব্যতীত অন্য সকল সংবাদপত্রের বিলুপ্তি, নিরঙ্কুশ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল এবং জেলা গভর্ণর নিয়োগের মাধ্যমে দেশে ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অতীত ও বর্তমান সব আওয়ামী সরকারের আমলে একই অভিন্ন কৌশলে দেশে একদলীয় হিটলারি শাসন চলছে।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বিশেষ উদ্যোগে শেখ হাসিনা দেশে ফেরার ১৭ দিন পরই জিয়াউর রহমান শহীদ হলেন। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে শেখ হাসিনা দেশে ফেরার ১৭ দিন পরই কেন জিয়াউর রহমান খুন হলেন? শেখ হাসিনা কিছু যদি না জানবেন, তাহলে বোরকা পরে পালাচ্ছিলেন কেন?
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পাওয়ায় কিছুদিন পর থেকে দেশে স্বৈরাচার এরশাদের নেতৃত্বে সামরিক শাসন জারি হয় । সামরিক শাসন জারির পর শেখ হাসিনা এক সাক্কাত্কারে বলেছিলেন ‘আই এম নট আনহাপি’। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার সুবিধাবাদী চরিত্র ধরা পরে।
সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে থাকা শেখ হাসিনার প্রতারণার রাজনীতি ধরা পরে সামরিক সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে। ১৯৮৬ সালের ১৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের ৬৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, যারা স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে তারা জাতীয় বেইমান হিসেবে চিহ্নিত হবে। দুই দিন পর অবস্থান পরিবর্তন করে জামায়াতে ইসলামীকে সাথে নিয়ে এরশাদের অধীনে সে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। এর মাধ্যমে নিজেকে স্বঘোষিত জাতীয় বেইমান হিসেবে দেশবাসীর সামনে প্রতিষ্টিত করেন। আর প্রমান করলেন যে জামায়াত আওয়ামী লীগের সাথে থাকলে হয় সঙ্গী অন্য কারো সাথে ইস্যু ভিত্তিক আন্দোলন করলেও হয়ে যায় জঙ্গী!
স্বৈরাচারী এরশাদকে সম্মিলিতভাবে হঠানোর আন্দোলনে থেকে সফল হলেও ’৯১ সালে সরকার গঠন করে ’৮৬ নির্বাচন বর্জন করে আপোষহীন নেত্রীর খেতাব পাওয়া বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। প্রধান বিরোধী দলের নেতা হন শেখ হাসিনা। কিন্তু সারা বিশ্ব ও দেশের জনগণ কর্তৃক স্বীকৃত নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকারকে একদিন ও শান্তিতে থাকতে দিবেন না বলে শেখ হাসিনা প্রতিহিংসা শুরু করেন প্রথম থেকেই।
এখানে উল্লেখ্য শেখ হাসিনা ভারত থেকে দেশে ফেরার পূর্বে বিবিসি’র সাথে এক সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে সক্রিয় হবার মূল কারণ হচ্ছে তার পিতার হত্যার প্রতিশোধ নেয়া। ওই সাক্ষাত্কারের সময় উপস্থিত বিবিসি খ্যাত বিশিষ্ঠ সাংবাদিক সিরাজুর রহমান যিনি তার কয়েকটি লেখায় বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
’৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করার পরে শেখ হাসিনা জামায়াতে ইসলামীকে সাথে নিয়ে তৎকালীন জামায়াতে ইসলামীর আমির মরহুম গোলাম আজম সাহেবের ফর্মূলা মতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্টার আন্দোলন শুরু করেন। আন্দোলনের নামে ১৭৩ দিন হরতাল আর অসহযোগ করে মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মারার রাজনীতি শুরু করেন শেখ হাসিনা। ৯৬ সালে লে.জেনারেল নাসিমের নেতৃত্বে সামরিক ক্যূতে মদদ দেয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাসের সফলতায় সে ক্যূ ব্যর্থ হয়।
’৯৬ এর ১২ জুন নির্বাচনে ২১ বছর পর জামায়াতে ইসলামীর সাথে অতাত করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারে আসে আওয়ামী লীগ। প্রথবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা। তবে দুই দশক পরে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশে আবার শুরু করে ত্রাসের রাজত্ব। শেখ হাসিনার লুটপাটের পরিধি এত বিস্তৃতি পেয়েছিল যে গণভবন ও সেদিন তার নাম লিখে নিয়েছিলেন। তবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলেই দেশের সর্বোচ্চ আদালত একটি মামলার পর্যবেক্ষণে শেখ হাসিনাকে রং হেডেড বলে মন্তব্যও করেছিলেন ।
২০০১-এর ১ অক্টোবরের নির্বাচনে বড় ধরনের পরাজয় বরণ করে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ। কিন্তু দেশের স্বার্থ বিরোধী তৎপরতা বন্ধ করেননি। আমেরিকায় ৯/১১ এর সন্ত্রাসী হামলার পর বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে প্রচার করে ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে থাকেন। আর সম্প্রসারণবাদীরা সুযোগ কাজে লাগাবার সময় গুনতে থাকে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় সংশোধনের আওয়ামী লীগের দাবির প্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে ১/১১ এ সেনাবাহিনী সমর্থিত সাবেক সেনাপ্রধান মইন উদ্দিন আর প্রধান উপদেষ্টা ফখর উদ্দিনের নেতৃত্বে সংবিধান বহির্ভূত অবৈধ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সূচনা হয়। দাবি বাস্তবায়নের নামে শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী লীগের লগি বৈঠার আন্দোলনে মানুষকে ঢাকার রাজপথে সাপের মত পিটিয়ে হত্যা ছিল সূদুরপ্রসারী চিন্তাপ্রসূত। সম্প্রতি সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উদ্দিনের একটি সাক্ষাত্কার থেকে তখনকার ষড়যন্ত্রের নীল্ নকশা ফোটে উঠেছে । সাবেক সেনাপ্রধান মইন উদ্দিনের সাক্ষাত্কারের প্রতি উত্তরে তৎকালীন উপদেষ্টা মেজর জেনারেল এম এ মতিনের লেখাটি পড়লে এটা এখন পরিস্কার যে দেশপ্রেমিক বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী আর ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী মানুষের ঐক্যের প্রতীক তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং জাতীয়তাবাদী শক্তির আগামী দিনের কান্ডারী তারেক রহমানকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে রাজনীতি থেকে দুরে রাখার প্রচেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু ষড়যন্ত্রের নায়কদের আগাম ইনডেমনিটি (!) দিয়ে শেখ হাসিনা বলেছিলেন ক্ষমতায় যেতে পারলে ১/১১ এর কুশীলবদের কার্যকলাপকে রেট্রসপেকটিভভাবে বৈধতা দেয়া হবে। অর্থাৎ আগাম জানিয়ে দেয়া যে ক্ষমতায় বসাতে যেন কোনো ধরনের সন্দেহ তারা না করেন।
সাবেক সেনাপ্রধান মইন উদ্দিন আর প্রধান উপদেষ্টা ফখর উদ্দিনের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে এবং দেশীয় ও বিদেশী আধিপত্যবাদের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ক্ষমতা তুলে দেয়া হয় তাদেরই একান্ত তাবেদার গণস্বার্থ বিরোধী ও জাতি বিভাজনকারী দল শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের হাতে। এসময় অত্যন্ত সুকৌশলে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী দেশপ্রেমিক শক্তিকে নির্লজ্জভাবে পরাজিত দেখানো হয়। এর পরে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিয়োজিত জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পিলখানায় হত্যাযজ্ঞ এবং প্রতিরক্ষা প্রশিক্ষণের ডকট্রিন পরিবর্তন একই সূত্রে গাথা । যা দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় অস্তিত্বকে হুমকির সম্মুখীন করেছে। আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার প্রতিহিংসাপরায়ন একনায়কতান্ত্রিক অপশাসনে রাষ্ট্রের প্রতিটি অর্গান আজ ধ্বংশের দ্বারপ্রান্তে।
জনগনের প্রতি আওয়ামী লীগের ভরসা বা বিশ্বাস নেই। কারণ তারা মনে করে দেশের মানুষ তাদের ছলা-কলা বুঝে গেছে। তা না হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে যে আওয়ামী লীগ জামায়াতে ইসলামীকে সাথে নিয়ে ১৯৯৫ সাল থেকে ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত ১৭৩ দিন হরতাল-অবরোধ পালন করেছিল, সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা শুধু বাতিলই করেনি তার সাথে ১৯৭৫ সালের আদলে ডিজিটাল কায়দায় সংবিধানে আরও কিছু বিষয় সংযোজন করেছে। সংসদ ও মন্ত্রিসভা বহাল রেখেই জাতীয় নির্বাচন,সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাস আগে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান করা হয় পঞ্চদশ সংশোধনীতে। নতুন করে সংযোজিত বিধান অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন মন্ত্রিসভা ও চলমান সংসদ বহাল থাকবে। আর প্রধানমন্ত্রীর কোনো সময় সীমা উল্লেখ নাই। তিনি পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পূর্ব পর্যন্ত বহাল তবিয়তে ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। তিনি ক্ষমতা না ছাড়লে তাদের সংশোধিত সংবিধান মতে পৃথিবীর কোনো শক্তি তার কাছ থেকে ক্ষমতা নিতে পারবে না। নিলে সংশোধীত সংবিধান মতে তা মৃত্যুদন্ড যোগ্য অপরাধ হবে!
কিন্তু প্রশ্ন হলো পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমতা হস্থান্তর না করলে কি হবে তার উল্লেখ নাই। পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশে এমন বিধান নেই। সংসদীয় গণতন্ত্রের সব দেশেই নির্বাচনের আগে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়া হয়। সংসদ ভেঙে দেয়ার পর অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় নির্বাচন। আরো মজার ব্যাপার হলো সংবিধানের প্রায় এক তৃতীয়াংশ অনুচ্ছেদ ভবিষ্যতেও কেউ সংশোধন করতে পারবে না বলে বিধান করে রাখা হয়েছে। আমরা জানি সংবিধান ধর্ম গ্রন্থ নয়,এটা মানব রচিত কিছু বিধি বিধান। মানুষের প্রয়োজনেই আইন করা হয় আবার প্রয়োজনের তাগিদেই সংশোধিত হয়। আমরা আরো দেখলাম আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও বাকশালের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানের সমালোচনা করার কারণে জেল জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু আল্লাহ ও রাসুল (স:) নিয়ে সমালোচনাকারী রাজীব হত্যার পর দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহিদ বলে আখ্যা দেয়া হলো।
অসহিষ্ণুতা ও প্রতিপক্ষের প্রতি বিদ্বেষ আওয়ামী রাজনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন অবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমান প্রকাশ্য জনসভায় দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘‘নকশাল দেখলেই গুলী কর।’’ একজনকে নকশাল সন্দেহে গুলী করা গণতন্ত্রসম্মত কোনো ব্যবস্থা নয়। শেখ মুজিবুর রহমানের কণ্ঠে উচ্চারিত ঐ একই ধ্বনি উচ্চারিত হচ্ছে বর্তমান আওয়ামী প্রধান শেখ হাসিনার কন্ঠে, ‘বিরোধী দলীয় নেতা কর্মী দেখলেই গুলী কর’।
কয়েকদিন আগে শেখ ফজলুল হক মনির ‘মুজিবের শাসন চাই আইনের শাসন নয়’ নিবন্ধটি পত্রিকায় পূণ:প্রকাশিত হয়েছে। এর থেকে পরিস্কার প্রতীয়মান হয় আওয়ামী লীগ নামের দলটি আসলে কি করতে চেয়েছিল আর বর্তমানে কি করতে চায়। প্রথমেই আমাদের মগজে ঢুকিয়ে দেয়া হয় অন্য কোনো ইজম বা বাদ নয়- আমাদের অনুসরণ করতে হবে একমাত্র মুজিববাদ। ইতিহাসের কী চমৎকার পুনরাবৃত্তি! মুজিববাদের জায়গায় এসেছে শেখ হাসিনার গণতন্ত্র! তার উপরে ‘মরার উপর খড়ার গা’ এর মত যুক্ত হয়েছে পিতাসহ পরিবারের সকলের হত্যাকান্ডের জন্য দেশের মানুষের প্রতি শেখ হাসিনার এক ধরনের প্রতিশোধ পরায়ন মনোবৃত্তি।
সর্বশেষ অর্ধেকের বেশি আসনে বিনা ভোটে নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদকে করা হয়েছে অকার্যকর আর দেশের মানুষের ভোটের মৌলিক অধিকার থেকে করা হয়েছে বঞ্চিত। আদালতকে তাঁর মৌলিক বিচারিক কাজ থেকে দূরে সরিয়ে রেখে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে ব্যাস্ত রাখা হয়েছে। সম্প্রতি গণফোরাম সভাপতি ও সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘রাষ্ট্র আজ অমানবিক হয়ে গেছে, এখন যারা রাষ্ট্রের দায়িত্বে রয়েছেন, তাদের মন ও কানের চিকিৎসা করানো জরুরি হয়ে পড়েছে’। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘পছন্দমত প্রতিনিধি বাছাইয়ের সুযোগ ছিনিয়ে বর্তমান সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করেছে’।
৫ জানুয়ারির নির্বাচন সম্পর্কে সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেছেন, ‘সাংবিধানিকভাবে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়। সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদে বলা আছে, একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকাসমূহ থেকে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আইন অনুযায়ী নির্বাচিত ৩০০ সদস্য নিয়ে সংসদ গঠিত হবে। কিন্তু দশম সংসদ নির্বাচনে এর কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের অনুসারী দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেয়নি। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি মিলিয়ে ১২টি দল নির্বাচন করেছে। তাতে ১৫৩টি আসনে প্রত্যক্ষ কোনো নির্বাচন হয়নি। এসব আসনের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ ধরনের নির্বাচন ইতিহাসে নজিরবিহীন। দেশের মানুষ এ নির্বাচনকে গ্রহণ করেছে বলে আমি মনে করি না।’
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই এখন হানাহানি শুরু হয়েছে। এই হানাহানি থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় মধ্যবর্তী নির্বাচন।’
দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশ্লেষকদের মতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুকরণ করে বর্তমানে দেশে একই ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যাবস্থা কায়েম করেছেন।
দেশের গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান ও মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে শেখ হাসিনা কি রাজনৈতিক সহনশীলতা ও সহিষ্ণুতার পথে হাটবেন,না তার পিতার মত একজন ফার্স্টক্লাস এজিটেটর, সেকেন্ড ক্লাস পলিটিশিয়ান এবং থার্ডক্লাস অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্টিত করবেন,যা তার বাবা সম্পর্কে উক্তি করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার।