হরতাল-অবরোধের নামে নাশকতা সৃষ্টিকারীদের প্রতিহত করার পাশাপাশি আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা, যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং বোমা হামলার ঘটনার হুকুমদাতা হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দায়ী করে তার কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা ও তাকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন সংসদ সদস্যরা।
বুধবার দশম জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে, এমন কি রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর ধন্যবাদ প্রস্তাবে সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে উত্তপ্ত বক্তব্যে প্রদান করেন সংসদ সদস্যরা।
তবে বিরোধী দলের আন্দোলন বন্ধ করতে সরকারের ইশারায় এসব দাবী জানিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা আশংখা প্রকাশ করেছেন।
বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে সুস্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসা জাতীয় পার্টিও। অধিবেশনের শুরুর দিনে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের এ দাবি উত্থাপনের পর বুধবার দলটির চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদও রওশনের দাবি বাস্তবায়নে সরকারকে চাপ দেন। অধিবেশনে মাগরিবের নামাজের বিরতির পর তিনি প্রধানমন্ত্রীর সংসদ কার্যালয়ে গিয়ে তার সঙ্গে একান্ত আলাপে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের দাবি জানান।
বুধবার জাতীয় সংসদেও প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা সন্ত্রাস ও নাশকতা করে মানুষ হত্যার অভিযোগে বেগম খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে বলে মন্তব্যের পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সংসদ। পয়েন্ট অব অর্ডার এবং রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের সাংসদরা খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা এবং তাকে গ্রেফতারের দাবি তুলেন।
বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) প্রেসিডেন্ট এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবনে অভিযান চালানো দরকার। গুলশান-বনানী কূটনীতিক জোন থেকে সকল রাজনৈতিক দলের অফিস প্রত্যাহারের দাবিও করেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, খালেদা জিয়া আপনি বোমা মেরে আমাদের ভয় দেখান? আমি শুধু বলব- নির্দেশ দেন, পুলিশ-র্যাব-বিজিবির দরকার নেই। শুধু একটা নির্দেশ দেন। খালেদা জিয়া ও তার সন্ত্রাসীদের নিঃশেষ করতে আওয়ামী লীগের লাখ লাখ নেতা-কর্মীই যথেষ্ঠ।
তিনি সংলাপের দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, খালেদা জিয়া এমন কী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যে তার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তিনি যেভাবে মানুষকে পুড়িয়ে মারছেন, এখন যদি কেউ খালেদা জিয়াকেও পুড়িয়ে মারেন- তাহলে কী তার বিরুদ্ধে মামলা হবে না? তাহলে খালেদার বিরুদ্ধে কেন মামলা হবে না। এরশাদ যদি পাঁচ বছর জেলে থাকতে পারেন, খালেদা জিয়া কেন জেলে যাবেন না। খালেদা জিয়ার উচিত রাজনীতি ছেড়ে নির্বাসনে যাওয়া। তারেক রহমানের মতো সন্ত্রাসী পুত্র আর যেন কারো না হয়।
স্বতন্ত্র সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী সরকারী দলের জেষ্ঠ্য নেতাদের কাছে দায়িত্বশীল আচরণের আহবান জানিয়ে বলেছেন, জনগণের দুভোর্গ ও কষ্টের দিনে নির্মম ও নির্দয় তামাশা থেকে বিরত থাকুন। অবশ্যই সরকারি দলের রাজপথে থাকার অধিকার আছে। কিন্তু রাস্তায় সরব উপস্থিতির অজুহাতে লুঙ্গি গামছা পরে রাস্তায় নামার মতো হাস্যকর বাজী ধরা আওয়ামী লীগের মতো আন্দোলন সংগ্রামের ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
সংসদের বাইরের বিরোধী শক্তির প্রতি শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিকভাবে নিজেদের দাবি দাওয়া তুলে ধরার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণকে সম্পৃক্ত না করে যেনতেনভাবে কোন দিনই কোন আন্দোলন সফল হয়নি।
এরপর রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারন আলোচনায় অংশ নিয়ে জাসদ’র কার্যকরী সভাপতি মইনুদ্দিন খান বাদল, আরিফ খান জয়সহ সরকার ও বিরোধী দলের একাধিক এমপি খালেদা জিয়ার গ্রেফতারের দাবি করেন।