বিএনপিসহ দেশের অধিকাংশ দলের প্রতিহতের মধ্যে সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষার লক্ষ্যে ৫ জানুয়ারী নির্বাচন হয়। ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিতের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। বিদেশীরাও সংলাপের মাধ্যমে সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষার পরামর্শই দিচ্ছেন।
কিন্তু সরকার শুনছে না কারো কথা। দেশ জ্বলছে, মানুষ পুড়ছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে, সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কয়েকজন মন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতা নিত্যদিন সংবিধানবহির্ভূত কথাবার্তা বলছেন। যা স্বাধীন দেশে আইনের শাসনকে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
রাষ্ট্র পরিচালনায় সংবিধান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনে সংবিধান অতি ক্ষুদ্রাকৃতি হলেও আইনের শাসনে গাইড লাইন হিসেবে সংবিধান অপরিহার্য। সম্প্রতি টিভি’র অধিকাংশ টকশোতে দর্শকরা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন ‘মানুষের জন্য সংবিধান না সংবিধানের জন্য মানুষ?’ টিভি’র আলোচকদের অধিকাংশ দ্বি-ধারার রাজনীতির স্রোতে বিভাজিত হওয়ায় নিজেদের সুবিধামতো জবাব দেন। সরাসরি অনুষ্ঠানে কেউ সরাসরি জবাব এড়িয়ে নানান প্রসঙ্গের অবতারণা করেন।
এক টকশোতে দর্শক ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেনকে এ প্রশ্ন করলে তিনি স্বভাবসুলভ ভাষায় চিবিয়ে চিবিয়ে বলেন, ‘সংবিধানের জন্য মানুষ হতে পারে না বরং মানুষের জন্য সংবিধান।’
সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষায় অধিকাংশ দলের বাধার মুখেও ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন করা হয়েছে। ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া এবং ৪১ ভোটকেন্দ্রে কোনো ভোট না পড়ায় দেশ-বিদেশে এ নির্বাচন পরিচিতি পেয়েছে বিতর্কিত হিসেবে। বিবিসি’র মতো আন্তর্জাতিকভাবে জনপ্রিয় মিডিয়া ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনকে ‘বিতর্কিত নির্বাচন’ হিসেবে তাদের সম্পাদকীয় নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। নির্বাচনে সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষা হলেও সরকার গঠনের পর যেন সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।
সরকারের মন্ত্রী, ক্ষমতাসীন দলের নেতা এমনকি প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের কেউ কেউ এমন সব কথাবার্তা বলছেন যা সংবিধান এবং আইনের শাসনের সঙ্গে যায় না। সমাজকল্যাণমন্ত্রীর ঘোষণা ‘শুট অ্যাট সাইট’ তারই প্রতিধ্বনি।
নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান সম্প্রতি ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি’র টকশোতে যান গাড়ীতে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে এবং পুলিশ প্রহরায়। টকশোতে অংশ নিয়ে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, ‘আমি শুধু মন্ত্রী নই; শ্রমিক নেতা। ৪৪ বছরের শ্রমিক নেতা। আমি শ্রমিক নেতা হিসেবেই বলছি, —– করবো’। মন্ত্রীর সুযোগ সুবিধা নিয়ে শ্রমিক নেতা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরা সংবিধানের কোন ধারায় রয়েছে?
এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মোহাম্মদ নাসিমসহ আরো কয়েকজন মন্ত্রী একই ভাষায় বক্তব্য দিয়েই যাচ্ছেন। মন্ত্রী মায়াতো ঘোষণা দিয়ে ‘হ্যাডম’ দেখাতে রাজপথে লুঙ্গি মহড়া দিয়েছেন। অথচ রাষ্ট্র পরিচালনার ‘গাইড লাইন’ খ্যাত সংবিধান রক্ষা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল তিনি বলেছেন, ‘অসাংবিধানিক ক্ষমতার পালাবদল হতে দিতে পারি না’। সরকারের নির্বাহী প্রধান যখন এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন তখন সাধারণ মানুষ শংকিত না হয়ে পারে না। পেট্রোলবোমায় পুড়ে ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে মানুষ কাতরাচ্ছে। সেখানে এক হৃদয়স্পর্শী বিভীষিকাময় পরিবেশ। আতঙ্কিত মানুষ ঘর থেকে বের হতে ভয় পায়।
অথচ সংবিধান অনুযায়ী নাগরিকের চলাফেরা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। সরকার বোমা হামলাকারীদের শনাক্ত করতে চেষ্টা করছে। জনগণকে সম্পৃক্ত করতে বোমা হামলাকারীদের ধরিয়ে দিতে পারলে এক লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছে। তারপরও তেমন সুবিধা না হওয়ায় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেছেন, রাজনীতি থাকবে কি থাকবে না এ নিয়ে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন সরকারের উদ্দেশ্যে বলেছেন, সংবিধান রক্ষার কথা বলে আপনারা নির্বাচন করেছেন। এখন পদে পদে সংবিধান লংঘন করছেন কেন?
কয়েকজন মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের কয়েক নেতা মাঠের বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত বিএনপিকে রাজনীতি থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার যে হুমকি ধমকি দিচ্ছেন তার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা আইনের শাসন যায় না। টকশোতে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন, মাহমুদুর রহমান মান্না, নাইমুল ইসলাম খান, ড. সাদ’ত হুসেইন, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমসহ প্রায় অর্ধশত ব্যক্তি সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা করে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজনের মাধ্যমে সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষার পরামর্শ দিচ্ছেন।
কিন্তু সরকারের দায়িত্বশীল কয়েকজন মন্ত্রী আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা এবং তাঁবেদার বুদ্ধিজীবী এসব প্রস্তাব, অনুরোধ উপদেশকে তুচ্ছজ্ঞান করে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের উস্কে দিচ্ছেন। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যত যাতে আরো বিপদের মুখে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে দলগুলোকে ‘প্রকৃত’ সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায় ইউরোপীয় পার্লামেন্ট প্রতিনিধিদল। বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগজনক অভিহিত করে প্রতিনিধি দলের প্রধান ল্যাম্বার্ট বলেছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ যাতে আরো বিপদের মুখে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে দলগুলোকে ‘সত্যিকারের আন্তরিকতা ও দায়িত্ব নিয়ে প্রকৃত সংলাপে’ বসতে হবে। সবাই চাচ্ছেন সংলাপের মাধ্যমে সংকটের সমাধান। কিন্তু কেন সংলাপ হচ্ছে না বা কেন সংবিধানের বিধান অনুযায়ী জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্বে থাকা সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না তা নাগরিকদের কাছে রহস্যজনক। বরং জনমনে ভীতির সৃষ্টি করা হচ্ছে নানাভাবে।
সংবিধানের ধারাবাহিকতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিজেরা (বিএনপি) নির্বাচন করবে না, অন্যদের করতে দেবে না। নির্বাচন যদি না হয় তাহলে সেখানে কি আসবে? তার দৃষ্টান্ত আমরা নিকট প্রতিবেশী দেশে দেখতে পাচ্ছি। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন এ ধরনের পরিবেশে মার্শাল ল’ বা মিলিটারি ডিক্টেটর দ্বারা শাসিত হয়েছি। তাহলে আমরা আবার সেই মিলিটারি ডিক্টেটর বা অসাংবিধানিক ক্ষমতার পালাবদল- সেটাই কি হতে দেব? সেটা তো আমরা হতে দিতে পারি না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে দেয়া বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য দেয়ার পর বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে ফেলার চক্রান্ত চলছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে সবচেয়ে বড় পথের কাঁটা মনে করেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। তাই তাকে সরাতে চাচ্ছেন।
চলমান সংকট সমাধানে নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না সরকারকে এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দিয়েছেন। বলেছেন, এ সময়ের মধ্যেই সরকারকে দেশের পরিবেশ স্বাভাবিক করতে হবে। সরকার সংবিধান লংঘন করছে এমন অভিযোগ তুলে ড. কামাল হোসেন বলেছেন, সংবিধান রক্ষার কথা বলে আপনারা ৫ জানুয়ারী নির্বাচন করেছেন।
নির্বাচনের পর বিভিন্ন সময় আপনাদের বিভিন্ন মন্ত্রী বলেছেন পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকবেন। যে সংবিধানের কথা বলে নির্বাচন করেছেন সেই সংবিধান আপনারা (সরকার) নিজেরাই ভুলে গেছেন। বিজিবি প্রধান প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। জনগণের ট্যাক্সের অর্থে তার বেতন দেয়া হয়। তিনি গুলি করার যে নির্দেশ দিয়েছেন তা সাংবিধানিক আদেশ হতে পারে না। যে পুলিশ বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধ করেছে, সেই পুলিশ বাহিনীই জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। জনগণের বিরুদ্ধে পুলিশি অবস্থানের কারণে কুশাসনের সৃষ্টি হয়েছে। দেখামাত্র গুলি ও গণগ্রেফতার থেকে জনগণ মুক্তি চায়।
সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মোহসিন আলী বলেছেন, ‘দুষ্কৃতকারীদের চিহ্নিত করে পাড়ায় পাড়ায় শাস্তির ব্যবস্থা করে দেব। কোর্টে বিচার করার আর দরকার নেই। এবার শুট অ্যাট সাইট। কুত্তার বাচ্চা বিড়ালের বাচ্চাদের জন্য দেশ স্বাধীন করি নাই।’
এর আগে পুলিশের উদ্দেশ্যে নির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়ে জাসদের নেতা মঈনউদ্দিন খান বাদল বলেছেন, মিছিলকারীদের প্রথমে পায়ে গুলি করবেন পরে বুকে গুলি করবেন। ১৪ জানুয়ারি সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, বিজিবি’র সবই লিথ্যাল (প্রাণঘাতী) অস্ত্র। বিজিবি’র সদস্যরা কাউকে গুলি করবে না। তবে কেউ আক্রমণ করলে জীবন বাঁচাতে গুলি করতে পারে। একজন ব্যক্তি যদি বোমা ফাটায়, তাহলে পাঁচজন লোক নিহত হতে পারে। এ দৃশ্য কোনো বিজিবি সদস্যের নজরে এলে ওই বোমা বহনকারীকে ক্যাজুয়ালটি (হতাহত) করা তার দায়িত্ব।
বোমাবাজদের দেখা মাত্রই গুলি করা হবে। এর আগে ইসলামবিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ঘরে ঘরে গিয়ে বিএনপি-জামায়াত নেতাদের গুলি করার নির্দেশ দেন। জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের এমপি শামীম ওসমান বিএনপি ও এর নেতা খালেদা জিয়াকে নিঃশেষ করে দিতে দলের দায়িত্বশীল নেতাদের নির্দেশনা চেয়েছেন।
সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে তিনি বলেন, নেতাদের বলবো- নির্দেশ দিন। পুলিশ-বিজিবি- সেনাবাহিনীর দরকার নেই। খালেদা জিয়া, তার দল আর তার পরাজিত শক্তিকে নিঃশেষ করতে আওয়ামী লীগের লাখ লাখ কর্মী রাজপথে থাকবে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে বলছি, ব্যবস্থা নিন।
সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষায় রাজনৈতিক সংকট নিরসন অবশ্যই করতে হবে। আর সংলাপই সংকট উত্তরণের একমাত্র পথ বলে জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন তারাও। ড. আকবর আলী খান বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন সর্বস্তরের মানুষ। এই পরিস্থিতি থেকে অবশ্যই পরিত্রাণ দরকার। বিশেষ করে দেশের সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে হবে।
সাবেক বিচারপতি ও সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রউফ বলেছেন, যখন কোনো দেশ স্বৈরতন্ত্রে চলে যায়, তখন জনগণই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই সুষ্ঠু একটি নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে সাংবিধানিক সংকট দেখা দিতেই পারে। সুপ্রিমকোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সংবিধান রক্ষার ধোঁকা দিয়ে ক্ষমতাসীন সরকার একটি ভোটারবিহীন প্রহসনমূলক নির্বাচনের মধ্যদিয়ে ক্ষমতা দখল করে বসেছে। যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ক্ষমতাসীন সরকারের একগুঁয়েমি মনোভাব দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। এজন্য সরকারকে চরম মূল্য দিতে হবে। অবশ্য মন্ত্রী কামরুল ইসলাম টকশোর মাধ্যমে যারা সংলাপের দাবি করেন তাদের নামে খিস্তিখেউর অব্যাহত রেখেছেন।
বাংলাদেশ নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা করেছেন এরশাদের শাসনামলের শেষদিকে ঢাকায় কর্মরত মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম এবং ভারতের প্রখ্যাত সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার। তারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির আয়নায় বাংলাদেশ দর্শন করেন না। তাদের নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বাংলাদেশের চিত্র ফুটে উঠেছে।
দুই প্রখ্যাত ব্যক্তির বিদেশী পত্রিকায় প্রকাশিত লেখা ঢাকা থেকে প্রকাশিত পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে। বিগত দু’শ’ বছরে বিশ্বের দেশে দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসনের চিত্র তুলে ধরে উইলিয়াম বি মাইলাম বাংলাদেশ সম্পর্কে লিখেছেন, দৃঢ়ভাবে বলা যায় বাংলাদেশ একটি নিখুঁত কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। একদলীয় একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে একদলীয় রাষ্ট্র। প্রধান বিরোধী দল একই সঙ্গে বিচক্ষণতার অভাবে এবং সাংগঠনিক দুর্বলতায় বিশৃঙ্খল। তাদের বিশৃঙ্খল করতে ভূমিকা রেখেছে ভিন্নমতাবলম্বী ও বলির পাঁঠা হওয়া ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে সরকারের দমন-পীড়ন।
সুশীল সমাজ বিভক্ত ও আতঙ্কগ্রস্ত। সংঘাতের মধ্য দিয়ে জন্ম হওয়া এ দেশটির ইতিহাস নতুন করে লিপিবদ্ধ করেছে সরকার নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য। সুস্থ বিবেকসম্পন্ন ব্যক্তিরা যদি একজনের পর একজন ঝরে পড়তে না চান, তাদের অবশ্যই একত্রিত খারাপ বিবেক সম্পন্ন ব্যক্তিদের থামাতে একত্রিত, সংগঠিত হতে হবে। ইসলামিক বিশ্বে একসময় রাজনীতি ও সামাজিকতাকে আধুনিকায়ন করার জন্য ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে বাংলাদেশের।
কিন্তু সেই বাংলাদেশ এখন দুর্নীতি, বলপ্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠান নিয়ে কর্তৃত্ববাদী একদলীয় রাষ্ট্রের তালিকায় যোগ হবে। এমন কর্তৃত্ববাদী একদলীয় রাষ্ট্রের তালিকায় স্থান পাওয়া দেশ অনেক। যদি সুস্থ বিবেক সম্পন্ন মানুষ অলস থাকেন তাহলে বাস্তবিকই এ দেশ থেকে আধুনিকায়ন হারিয়ে যেতে থাকবে। কুলদীপ নায়ার লিখেছেন, বাংলাদেশের জন্মের সময় স্বাধীনতা যোদ্ধা ও গণতন্ত্রের রক্ষকরা যে সামাজিক কাঠামো অর্জন করেছিলেন তা ছিন্নভিন্ন করে ফেলার প্রচেষ্টা সব থেকে বেদনাদায়ক। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা বেশি বেশি ক্ষমতা দখলের দিকে মনোযোগ দিয়েছে, চেয়েছে প্রাধান্য বিস্তার করতে। তাদের লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে তারা দৃশ্যত কোন কিছুতে থামেন না। বাংলাদেশ এমনই একটি অবস্থার মাঝে অবস্থান করছে। সেনাবাহিনী যখনই ক্ষমতা দখল করেছে তখনই তারা শাসন করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সেনারা দেখতে পেয়েছে যে, বাংলাদেশীরা নিজেদের নিজেরাই কঠোরতা ও বিচারবুদ্ধিহীনতার সঙ্গে শাসন করা ভালবাসেন।
তাই সেনাবাহিনী আবারও তার আঙ্গুল পোড়াতে চায় না। দুই বেগম- শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া, অব্যাহতভাবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের কর্তৃত্ব স্থাপন করতে দেশের ক্ষতিতে তারা বিবেকের যন্ত্রণায় ভোগেন না। তাদের মধ্যে এই যে দ্বন্দ্ব এর কোন সমাধান কখনো হবে না। অবশ্য লেখায় নায়ার বাংলাদেশের রাজনীতিকদের বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে জনগণের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার পরামর্শ দেন।