DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

মোড়ে মোড়ে পুলিশ, র‍্যাব,বিজিবি,তবুও কিভাবে হামলা ও আগুন???

1_119656বৃহস্পতিবারের ঘটনা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাহারায় পণ্যবাহী ট্রাকবহর অতিক্রম করছিল রাজশাহী শহর। নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকায় এ সময় 'জঙ্গি স্টাইলে' একদল মুখোশধারী দুর্বৃত্ত ওই বহরে বোমা হামলা ও ভাংচুর চালায়। আগের দিন বুধবার চট্টগ্রামের পুরনো চান্দগাঁও এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ওপর হাতবোমা ছোড়া হয়।

শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর রামপুরায় বিটিভি ভবনের সামনে একটি কাভার্ডভ্যানে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনাস্থলের কয়েক মিটার দূরত্বে বিটিভি ছাউনিতে আগে থেকেই মোতায়েন ছিল বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য। একই সময়ে রামপুরা কাঁচাবাজারের সামনে পার্কিং করে রাখা পুলিশের টহল ভ্যানের অদূরে সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয়া হয়। মৎস্য ভবন মোড়ে, যেখানে সব সময় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকে, সেখানেও গত সপ্তাহে পুলিশ বহনকারী একটি বাসে বোমা হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।

 

এভাবে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থানকেন্দ্রিক এলাকায় আকস্মিকভাবে হামলা, অগি্নসংযোগ বা ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার রাজধানীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর মোড়ে মোড়ে এবং পণ্যবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাসের বহরে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির প্রহরার ব্যবস্থা করেছে।

দিনরাত নিরলস ডিউটি করে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এমন সতর্কাবস্থার মাঝেও চোরাগোপ্তা বা কোথাও প্রকাশ্যেই হামলার ঘটনা ঘটছে। নিরীহ সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী, গাড়িচালক-হেলপারসহ অবুঝ শিশুরাও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংস বর্বরতার শিকার হয়েছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের চলমান অবরোধ-হরতাল কর্মসূচির নামে এ পর্যন্ত ১৮ দিনে সহিংস তা-বে বোমা-আগুনে শিশু-শিক্ষার্থীসহ অকালে ঝরে গেছে ৩৩ জনের প্রাণ।

কয়েকশ' মানুষ এসব সহিংসতায় আহত হয়ে যন্ত্রণায় সময় পার করছেন। এখন প্রায়ই হামলার মুখোমুখি হচ্ছে পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে লক্ষ্য করে কোথাও হামলা হয়নি। বর্তমানে যা ঘটছে, সবই চোরাগোপ্তা হামলা। তাছাড়া পুলিশের ওপর হামলা চালাবে এত সাহস তারা (দুর্বৃত্তরা) পাবে কোথা থেকে? স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমানে জনগণও হামলাকারীদের ধরিয়ে দিচ্ছে। এটা আরও হতে থাকলে দুর্বৃত্তরা পালানোর জায়গা পাবে না। আর সরাসরি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর কোথাও যদি হামলা হয়, তাহলে তার জবাব সেখানে কঠোরভাবে দেয়া হবে।

 

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, নিজেদের শক্তি ও সাহসকে জানান দিতে কিংবা প্রতিশোধ নিতে হয়তো এ ধরনের হামলা-ভাংচুর বা অগি্নসংযোগ করা হচ্ছে। তবে চোরাগোপ্তা হামলা তাদের দুর্বলতারই চিত্র। তাছাড়া অতর্কিত নিরীহদের ওপর হামলা চালানো কোনো সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষের কাজ নয় বলে মন্তব্য করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

 

পুলিশ ও র‌্যাবের অপারেশন শাখার একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, দুর্বৃত্তরা পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মনোবল দুর্বল করার জন্যই তাদের আশপাশে চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছে। এটা কাপুরুষদের কাজ। সরাসরি কোথাও পুলিশ-র‌্যাবের ওপর হামলা হলে তাৎক্ষণিক সেখানে দুর্বৃত্তরা কঠোর জবাব পাবে। ওই কর্মকর্তা জানান, তবে বর্তমান সহিংস পরিস্থিতিতে পুলিশ, র‌্যাব বা বিজিবি সদস্যদের বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে ডিউটি করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় বিচ্ছিন্নভাবে একাকী ঘোরাফেরা না করে একসঙ্গে থেকে ডিউটি করতে বলা হয়েছে।

 

জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাজশাহী নগরীর কাদিরগঞ্জে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির যৌথ পাহারায় চলন্ত পণ্যবাহী ট্রাকের বহরে মুখোশধারী ক্যাডাররা হামলা চালায়। তারা প্রথমে একটি পেট্রলবোমা ও আট থেকে ১০টি হাতবোমা ছুড়ে মারে। হামলার পর দড়িখড়বোনা মোড়ের কয়েকটি দোকানে ভাংচুর ও আগুন দেয় তারা। এ সময় তিনজন আহত হন। ট্রাকবহরের সামনে থাকা বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ আসতে আসতে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। বুধবার সন্ধ্যায় পুরনো চান্দগাঁও থানা এলাকায় দায়িত্ব পালনরত পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে হাতবোমা ছোড়া হয়।

এতে রমিজ উদ্দিন, ফরিদ উদ্দিন ও রিপন বড়ুয়া নামে চান্দগাঁও থানার তিন কনস্টেবল আহত হন। ১৭ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর মৎস্যভবন মোড়ে পুলিশ বহনকারী একটি বাসে পরপর কয়েকটি বোমা হামলা চালিয়ে এসআই আবুল কালাম আজাদ, কনস্টেবল শামীম, মোর্শেদ, সিপন ও বদিয়ার নামে পাঁচ পুলিশ সদস্যকে গুরুতর আহত করা হয়। এর আগে ৬ জানুয়ারি রাজশাহীতে রাইফেল কেড়ে নিয়ে দায়িত্বরত চার পুলিশ সদস্যকে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। এর বাইরেও পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল হামলা, পুলিশের যানবাহনে আগুনের ঘটনা অহরহ ঘটছে।

 

১৮ জানুয়ারি রাজশাহী কলেজের সামনে র‌্যাবের গাড়ি লক্ষ্য করে ককটেল হামলা চালিয়েছে শিবির। এদিন কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে লিবার্টি চত্বরে পুলিশের ডিউটি স্থলের সামনেই হামলা হয়েছে। ৬ জানুয়ারি রাজশাহী নগরীর সপুরা এলাকায় আলিফ-লাম-মিম ইটভাটার সামনে অস্ত্র কেড়ে নিয়ে পুলিশকে বেধড়ক পেটায় শিবিরের নেতাকর্মীরা। এতে গুরুতর আহত হন পুলিশ কনস্টেবল শফিকুল ইসলাম ও আমজাদ হোসেন।

১২ জানুয়ারি রাতে রাজশাহীর পুঠিয়ার শিবপুর এলাকায় পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ককটেল হামলা চালানো হয়। ১৪ জানুয়ারি বিকালে রাজশাহী নগরীর সোনাদীঘির মোড়ে পুলিশের সামনে ককটেল হামলা চালানো হয়। এদিন সন্ধ্যার পর রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় ডিউটিরত পুলিশ ও তাদের গাড়ি লক্ষ্য করে কয়েকটি ককটেল হামলা চালানো হয়। এতে দুজন পুলিশ সদস্য আহত হন ও গাড়ির আংশিক পুড়ে যায়। একই রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর খিলক্ষেত বাজার এলাকায় পুলিশ ও আনসার সদস্যেদের ওপর ককটেল নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা।

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!