DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

ওবামার ভারত সফরঃ পরমাণু চুক্তি বাস্তবায়নে ওবামা-মোদি ঐকমত্য

5_120014বেসামরিক পরমাণু চুক্তি বাস্তবায়নের ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। ভারত সফরে আসা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রোববার যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এক ঘোষণায় এ কথা জানান। সংবাদ সম্মেলনে নরেন্দ্র মোদিকে পরম বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে হিন্দি ভাষায় একসঙ্গে চলার আহ্বান জানান বারাক ওবামা। দুজনের এ একসঙ্গে চলা সম্পর্কে মোদি বলেন, বারাক এবং আমি বন্ধু। আমরা ফোনে কথা বলি, কৌতুক করি। আমাদের এ বন্ধুত্বই দেশ ও জনগণকে একে অপরের কাছে নিয়ে এসেছে।

 

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে নরেন্দ্র মোদি বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরের ছয় বছর পর আমরা বাণিজ্যিকভাবে ওই চুক্তি কার্যকরের ব্যাপারে অগ্রসর হতে যাচ্ছি। প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, বেসামরিক পরমাণু সহযোগিতার ক্ষেত্রে অগ্রসরের প্রশ্নে যে দুটি বিষয় বাধা হয়ে ছিল, আমরা সে বিষয়ে এক মতে উপনীত হয়েছি। আমরা এখন এ চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ওবামা বলেন, আমাদের সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে কীভাবে একসঙ্গে কাজ করতে পারি, সেটা প্রমাণে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

 

২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারত এ ঐতিহাসিক বেসামরিক পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। এর মাধ্যমে ভারত বেসামরিক পরমাণু শক্তি ব্যবহারের সুযোগ পেলেও যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের কারণেই এত দিন তা স্থগিত ছিল। দুই নেতার মাঝে রোববারের এ চুক্তির ফলে ভারতের জন্য বেসামরিক পরমাণু প্রযুক্তি ব্যবহারের পথ সুগম হলো। পরমাণু উপকরণ সরবরাহ এবং পরমাণু দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সরবরাহকারীদের দায়বদ্ধতার বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষে মতপার্থক্য দূর হয়েছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।

 

টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি, দ্য হিন্দু ও জি নিউজের খবরে বলা হয়, যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আগে হায়দরাবাদ হাউস গার্ডেনে ওবামা ও মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দুই সরকারপ্রধান ২০০৮ বেসামরিক পরমাণু সহযোগিতা চুক্তি (টু থাউজেন্ড এইট সিভিল নিউক্লিয়ার কো-অপারেশন অ্যাগ্রিমেন্ট) স্বাক্ষর করেন। সেখানে তারা প্রতিরক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের ইস্যুতে সহযোগিতা জোরদারের ব্যাপারে আলোচনা করেন।

 

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সকালে ভারত পৌঁছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তার সঙ্গে ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামাও আছেন। সকালে রাজধানী নয়াদিলি্লর পালামের এয়ারফোর্স স্টেশনে পোঁছে ওবামাকে বহনকারী এয়ারফোর্স ওয়ান। সেখানে ওবামা ও মিশেলকে স্বাগত জানান মোদি।

সোমবার ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ওবামা। হোয়াইট হাউস জানায়, শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে (বাংলাদেশ সময়) যুক্তরাষ্ট্রের এন্ডরুজ এয়ারফোর্স ঘাঁটি থেকে রওনা হন ওবামা। জ্বালানি নিতে জার্মানির রামস্টেইনে সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতি করে ওবামাকে বহনকারী এয়ারফোর্স ওয়ান। দুপুর ১২টায় প্রেসিডেন্ট ওবামা ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে যান। সেখানে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যর্থনা জানান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ওবামা রাজঘাটে ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সেখানে বৃক্ষ রোপণও করেন ওবামা। এর পর প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে হায়দরাবাদ হাউসে গিয়ে মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেন তিনি।

 

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ওবামা মৌর্য হোটেলে মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সঙ্গে মিলিত হন। সন্ধ্যায় আবার রাষ্ট্রপতি ভবনে যান। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতির দেয়া রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে অংশ নেন তিনি।

 

আজ ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে ওবামার। প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠান শেষে তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে দেয়া সংবর্ধনায় যোগ দেবেন। বিকালে ইউএস-ইন্ডিয়া বিজনেস কাউন্সিল আয়োজিত সম্মেলনে দুই দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের মুখোমুখি হবেন ওবামা ও মোদি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর রেডিও অনুষ্ঠান 'মন কি বাত' এর বিশেষ পর্বেও ওবামার যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। কলকাতা প্রতিনিধি জানান, ওবামার আগমনকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই সরগরম ছিল দিলি্লর রাষ্ট্রপতি ভবন রাইসিনা হিলসের পরিবেশ। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজে প্রায় ২৫০ জন উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতি ভবনে। মূলত মার্কিন প্রেসিডেন্টের নৈশভোজের মেন্যুতে মূলত ভারতীয় খাবারই ছিল। অতিথি তালিকায় সস্ত্রীক ওবামা ছাড়া ছিলেন নরেন্দ্র মোদিসহ মন্ত্রিসভার প্রথম সারির সদস্যরা।

কংগ্রেসনেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিল এবং এপিজে আবদুল কালাম ছিলেন তারকা তালিকায়। এছাড়া আমন্ত্রিতদের তালিকায় আরও ছিলেন টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা, নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন, অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন, ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকারও। এ সফরকে কেন্দ্র করে দিলি্লজুড়ে অভূতপূর্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। শুক্রবার দুপুর থেকেই সরকারি ও বেসরকারি সব অফিস ছুটি হয়ে যায়। ওবামা যে হোটেলে থাকছেন, ওই হোটেলের সব রাস্তা শুক্রবার থেকেই নিয়ন্ত্রিত। ৭০টি উঁচু বাড়ির ছাদে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ।

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!