বায়তুল মোকাররম মসজিদে লাখো মানুষের অংশগ্রহনে জানাজা সম্পন্ন হওয়ার পর আরাফাত রহমান কোকোর মরদেহ বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে । দুই নম্বর গেট সংলগ্ন ভিআইপিদের জন্য নির্ধারিত স্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।
সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে তাকে বনানী কবরস্থানে নেয়া হয়। তাকে সমাহিত করার পর রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। এসময় তার আত্মীয়-স্বজন ও দলের নেতা-কর্মীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে তার কবরটি বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়।
এর আগে হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে কোকোর জানাজা শেষ হয় বিকেল ৫টার দিকে।
অন্যদের মধ্যে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারার চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, গাজিপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র এমএ মান্নান কোকোর জানাজায় অংশ নেন।
বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা মো. সালাউদ্দিন কোকোর নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন।
এরআগে বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে কোকোকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি বায়তুল মোকাররম মসজিদে পৌঁছায়। তবে নেতাকর্মীদের উপচে পড়া ভিড়ের কারণে মরদেহ মঞ্চে নিতে দেরি হয়।
বেগম জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মরদেহ নিয়ে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। সেখান থেকে মরদেহ নেয়া হয় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে।
আরাফাত রহমান কোকোর প্রতি সম্মান জানাতে সোমবার থেকে তিন দিনের শোক পালন করছে বিএনপি। বিএনপির কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার পাশাপাশি কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। নেতাকর্মীরা বুকে কালো ব্যাজ পরেছেন।
ওয়ান ইলেভেনের সময় গ্রেপ্তার হন আরাফাত রহমান কোকো। তবে ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই তৎকালীন সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পাওয়ার পর চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড যান তিনি। কিন্তু এরপর দেশে না ফিরে তিনি মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান।
দাফন সম্পন্ন হলো বনানী কবরস্থানেঃ
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর লাশ বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এ জন্য মঙ্গলবার দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটের দিকে কবর খোঁড়া শুরু হয়। কবর খুঁড়েছেন আটজন।
কবর খোঁড়ার তত্ত্বাবধানে ছিলেন জিয়া পরিবারের পক্ষে আতিকুর রহমান রুম্মন এবং স্থানীয় ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার ও গুলশান থানা বিএনপির নেতা আবদুল আলীম নকী।
বনানী কবরস্থানের ১৮ নম্বর ব্লকের শুরুর দিকে চিরতরে আরাফাত রহমান কোকোকে শায়িত করা হয়েছে । এর আগে ওই স্থানে কোনো কবর ছিল না। এ বিষয়ে আবদুল আলীম নকী জানান, আমরা চেয়েছিলাম যাতে বড় রাস্তার সঙ্গে জায়গা পাওয়া যায়। অনেক চেষ্টার পর জায়গাটির ব্যবস্থা হয়েছে। তবে, কোকোর কবরের নম্বর এখনো নির্ধারিত হয়নি।
কবরস্থানের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল বারী জানান, একেবারে নতুন কবর হওয়ায় এখনো কোনো নম্বর দেওয়া হয়নি। দাফন শেষ হলে আমরা একটি নম্বর দেব।
কবর খোঁড়ার কাজে নিয়োজিত ছিলেন- আবদুর রহমান, জিতু মিয়া, মো. জসিম, শফিউল্লাহ, জালাল, সৈয়দ আলী, মজিদ মিয়া ও আবদুল কালাম।
এদিকে, কোকোর দাফন নিয়ে বনানী কবরস্থানে পর্যাপ্ত লাইটিংয়ের ব্যবস্থার নির্দেশ দিয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বি এম এনামুল হক। সন্ধ্যা হয়ে গেলে যাতে কোনো সমস্যা না হয়। একই সঙ্গে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দশ দেন তিনি।
সার্বিক নিরাপত্তায় বনানী কবরস্থানে দুই প্লাটুন পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিলো বলে জানা গেছে।
এর আগে, মঙ্গলাবার দুপুর ১টা ২৫ মিনিটের দিকে সরেজমিন বনানী কবরস্থানে উপস্থিত হয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) উত্তরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বি এম এনামুল হক কবর খোঁড়ার নির্দেশ দেন। কবরস্থানের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল বারী ওই সময় জানান, কবর খুঁড়তে দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে বলেন, ‘একজন সাবেক সেনাপ্রধানের সন্তান হিসেবে অধিকার থাকার পরও শুধু রাজনৈতিক কারণে কোকোর লাশ বনানী সামরিক কবরস্থানে দাফন করতে দেওয়া হচ্ছে না। তাই বনানী কবরস্থানে লাশ দাফনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মালয়েশিয়ায় হার্ট অ্যাটাকে মারা যান।
মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে জাতীয় মসজিদ নাগারায় রোববার দুপুরে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।