অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, “ইসলামি ব্যাংকিং একান্তই একটি ফ্রড (প্রতারণা) ধারণা। ভুলের ওপর নির্ভর করে ইসলামি ব্যাংকিং হচ্ছে। দুর্ভাগ্য হলো বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় এটি চালু আছে। আইএমএফও এর কথা বলছে। এটি বন্ধ করার সুযোগ নেই।”
সংসদের প্রশ্নোত্তরপর্বে রোববার সরকারি দলের সাংসদ হাবিবুর রহমান মোল্লার এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, “ইসলামি ব্যাংকিং বন্ধ হবে কি হবে না, তা মুসলিম উম্মাহর সচেতনতার ওপর নির্ভর করছে। মুসলিম উম্মাহ যখন বুঝতে পারবে, ইসলামের নামে জঘন্য কাজ চলছে, তখনই এটি বন্ধ করা যাবে। ইসলামে রিবা নিষিদ্ধ। কিন্তু রিবা ও সুদ এক নয়। রিবা চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ে। এখানে কোনো মানবিকতা নেই।
সুদ হচ্ছে কস্ট অব ফান্ড (তহবিলের ব্যয়) বা কস্ট অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (প্রশাসনিক খরচ)। ধর্ম নিয়ে যাঁরা বেশি কথা বলেন, তারা সুদ আর রিবাকে এক করে ফেলেন।”
নাজমুল হক প্রধানের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিএনপির নেতৃত্বাধীন হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির কারণে প্রতিদিন দেশের কী পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে সে সম্পর্কিত কোনো তথ্য সরকারের কাছে নেই। তবে পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে প্রতিদিন রাষ্ট্রের কী পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে, তা নির্ধারণ করতে সমীক্ষা চালাতে হবে। কারণ এ হরতাল কোনো দলবিরোধী নয়, দেশবিরোধী। খালেদা জিয়া দেশের শত্রুতা করছেন।
আবদুর রউফের প্রশ্নের জবাবে আবদুল মুহিত বলেন, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারি ব্যাংকে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২০ হাজার ৭৯৭ কোটি ৯ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪২৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা খেলাপি ঋণ আদায় করেছে।
ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, জনতা ও সোনালী ব্যাংকে তারেক রহমান, গিয়াসউদ্দিন আল মামুন ও সাঈদ এস্কানদারদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণের পরিমাণ ২৬২ কোটি ১৭ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে ১৬৩ কোটি টাকা ৪৮ লাখ ৪৪ হাজার টাকা খেলাপি।
আ ফ ম বাহাউদ্দিনের (নাছিম) লিখিত প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, জালনোট প্রতিরোধে ৫০০ টাকার নোটের মতো দেখতে ১০০ টাকার নোট বাজার থেকে তুলে নেওয়া হচ্ছে।
এ কে এম মাইদুল ইসলামে প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকেরা কত টাকা আয় করেন, তার তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে নেই এবং জানার সুযোগও নেই। বিদেশি নাগরিকেরা তাদের আয়ের ৭৫ শতাংশ নিজ দেশে নিয়ে যেতে পারেন। তারা ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২৮ দশমিক ১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার নিজ দেশে নিয়ে গেছেন।
সেলিনা বেগমের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে টাকা চুরি প্রতিরোধে ভল্ট কক্ষের অবকাঠামো শক্তিশালী করা, সিসিটিভি ও আইপি ক্যামেরা বসানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মোরশেদ আলমের প্রশ্নের জবাবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদানের জন্য বিটিসিএলসহ মোট ২৯টি আইজিডব্লিউ অপারেটর রয়েছে। এর মধ্যে ২৩টি অপারেটরের কাজ চলমান আছে। বিটিসিএল ছাড়া ২২টি অপারেটরের কাছে সরকারের পাওনার পরিমাণ ৩৫৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ২০০৪ থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছর পর্যন্ত টেলিটকের আয়ের পরিমাণ ৩ হাজার ২৩৪ কোটি ১৭ লাখ ৯ হাজার ২৫১ টাকা।
প্রশ্নোত্তরের আগে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়।