প্রয়োজনে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হবে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সহিংসতা ও অন্যায় দাবির কাছে কোনোভাবেই নতি স্বীকার করব না। খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের বিষয়ে আইনগত প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখতে সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরুকে দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বার কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের ধারাবাহিক পরাজয়ের জন্য মতিন খসরুকে ‘ভর্ৎসনা’ করেন বলেও সূত্রে জানা যায়। বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকান্ডর রবিরুদ্ধে জনমত গঠন করে গণপ্রতিরোধ সৃষ্টি করার জন্য নেতাকর্মীদের আরও সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
সূত্র জানায়, রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু হওয়ার পর খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যে মহিলা নিজের ছেলের মৃত্যুর পর স্বাভাবিক থাকতে পারে, ছেলের লাশ বাসার নিচে অপেক্ষায় রেখে তা দেখতে আধা ঘণ্টা পর নিচে নামেন, তাকে সুস্থ মানুষ বলা যায় না। তার মানুষ মারার এসব কর্মসূচিও স্বাভাবিক কোনো কর্মসূচি নয়। তাদের অব্যাহত নাশকতার সমুচিত জবাব দেয়া দরকার। প্রয়োজন হলে ওনাকে (খালেদা) গ্রেফতার করা হবে। তবুও সংলাপ নামের অন্যায় দাবির কাছে মাথা নত করব না।
বৈঠকে খালেদা জিয়ার গ্রেফতারের প্রসঙ্গ তোলেন আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক আবদুল মতিন খসরু। তিনি প্রতিটি পেট্রলবোমার ঘটনার জন্য খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করার দাবি জানিয়ে বলেন, পেট্রলবোমা মেরে মানুষ হত্যা করার জন্য খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। যেভাবে পেট্রলবোমা মেরে মানুষ মারা হচ্ছে তাতে তাকে আর বাইরে রাখা যায় না। আপনি (শেখ হাসিনা) বলে দিন।
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, তুমি যখন বলছ, তখন তুমিই দায়িত্ব নাও। আমার বলে দেয়া লাগবে কেন, তুমি না আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক। তাছাড়া সারা দেশে আমাদের এত আইনজীবী আছে, এর পরও সবকিছু কেন আমাকে বলে দিতে হবে। তুমি উদ্যোগ নিয়ে দ্রুত প্রক্রিয়া শুরু কর। এছাড়া বার নির্বাচনে পরাজয়ের জন্য মতিন খসরুকে ‘ভর্ৎসনা’ করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি জানি তুমি নিজে জেতার জন্য এসব কর, আর সবাইকে ডোবাও। এসময় তিনি নিজে প্যানেল করে দেবেন বলেও জানান।
বৈঠকে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য মমতাজ উদ্দিন মেহেদী আবেগপ্রবণ হয়ে জোরে জোরে নিজের ক্ষোভের কথা তুলে ধরে বক্তব্য দিলে কিছু সময়ের জন্য হইচই শুরু হয়। মেহেদীকে ধমক দিয়ে চুপ করতে বলেন আফম বাহাউদ্দিন নাছিম ও জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ কয়েকজন। পরে মেহেদী শেখ হাসিনার পা ধরে কাঁদতে কাঁদতে ক্ষমা চান।
এছাড়া আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, দেশে যে ঘটনা ঘটছে এর সঙ্গে খালেদা জিয়া একাই জড়িত নন, এর পেছনে জামায়াত, আইএস ও তালেবানের একটা যোগসাজশ রয়েছে; যার জন্য খালেদা জিয়া এমন সাহস দেখাচ্ছেন। তবে আমি এসবে বেশি ভয় পাচ্ছি না। কারণ জনগণই এদের প্রতিহত করবে। আগামীতে তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের নিজ এলাকার মানুষকে সাহস দেয়ার পরামর্শও দেন। বলেন, মানুষকে বোঝান ভয় পাওয়ার কারণ নেই, কিছুই হবে না, সব ঠিক হয়ে যাবে।
সূত্র আরও জানায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শিগগিরই ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে নেতাদের জানান। তবে তার আগে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্ত করে দুটি কমিটি গঠন করা হবে বলেও ইচ্ছা পোষণ করেন। জেলা সম্মেলন নিয়ে কথা ওঠে বৈঠকে। এসময়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি এপ্রিলের মধ্যে সব জেলার সম্মেলন সম্পন্ন করতে নির্দেশনা দিয়ে বলেন, সম্মেলন দ্রুত শেষ করুন।
এতে জেলা পর্যায়ে সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটিগুলো শক্তিশালী হবে। এতে বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা প্রতিরোধ সহজ হবে। এদিকে, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, যারা আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারে, যারা খুনি, তাদের সঙ্গে সরকার কীভাবে আলোচনা করবে। এসব ঘটনায় যারা জড়িত তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, যারা এসব ঘটনায় জড়িত তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।