অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে দেশব্যাপী টানা অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে সরকারের মদদপুস্ট একটি গোস্ঠী ২০ দলীয় জোটের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়াতে অন্তর্জালে অপপ্রচারে নেমেছে বলে অভিযোগ জোটের নেতাদের।
তাঁরা মনে করছেন, দলের সিনিয়র নেতাদের অনুপস্থিতির সুযোগে এমনটা করার সুযোগ পাচ্ছে গোষ্ঠীটি। এমনকি খালেদা জিয়া ও তার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমানের নামেও ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে বলে চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, সিনিয়র নেতারা গ্রেপ্তার এড়াতে কৌশলী অবস্থান নিয়েছেন, নিরাপদ জায়গা থেকে বিবৃতির মাধ্যমে কর্মসূচি দিচ্ছেন। সিনিয়র নেতারা প্রকাশ্যে না থাকায় একটি মহল নামে-বেনামে নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করতে মেইল, মোবাইল ও গণমাধ্যমে মিথ্যা, বানোয়াট ম্যাসেজ দিচ্ছে।
বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত খালেদা জিয়া, তার ছেলে তারেক রহমান কিংবা পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমানের কোনো ফেসবুক আইডি নেই। সুতরাং তাদের নামে যেসব বক্তব্য-বিবৃতি প্রকাশ করা হচ্ছে, তার সঙ্গে বিএনপির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। একই সঙ্গে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নাম করে ই-মেইল আইডি খুলে দল ও জোটের যে অবস্থান প্রচার করা হচ্ছে, তার ব্যাপারেও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিএনপি।
বিএনপির সূত্র জানায়, গত সপ্তাহের সোমবার সন্ধ্যা ছয়টা নয় মিনিটে [email protected] মেইল অ্যাড্রেস থেকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিনের নামে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে- বিএনপির নামে যেসব কর্মসূচি ঘোষণা করা হচ্ছে তাতে দেশনেত্রীর সমর্থন আছে কি না নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। এই মেইলের ঠিকানার সঙ্গে বিএনপির অফিসিয়াল প্যাডে যে ই-মেইল ঠিকানা দেয়া থাকে, তার কোনো মিল নেই। বিএনপির মিডিয়া উইং জানিয়েছেন, বিবৃতিটি ভুয়া। এটি বিএনপির মেইল নয়।
বিএনপির দাবি, ওই নামে বিএনপির কোনো ই-মেইল আইডি নেই। বিএনপির অফিসিয়াল প্যাডে যে ই-মেইল আইডি দেয়া থাকে, সেটি এবং [email protected], [email protected], [email protected] আইডি থেকে যাওয়া বক্তব্য-বিবৃতিই সত্যিকার অর্থে তাদের অবস্থান নির্দেশ করবে।
এ বিষয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান বলেন, “মেজর হাফিজ উদ্দিন তার বনানীর বাসায় থাকতে পারছেন না। ওখানে পুলিশ নিয়মিত তল্লাশি করছে। তিনি সব সময় জানিয়েছেন- বক্তব্য দেয়ার প্রয়োজন হলে কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সহায়তায় তা পাঠাবেন।” শায়রুল কবির বলেন, “এর আগে মেজর (অব.)হাফিজ উদ্দিন কয়েকবার মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তা প্রকাশ্যেই। সুতরাং তার নামে পাঠানো ই-মেইল ভুয়া এবং বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য একটি মহল তা পাঠিয়েছে। এটি গভীর ষড়যন্ত্র।”
শায়রুল কবির উপরোক্ত ই-মেইল ছাড়া অন্য কোনো ই-মেইল থেকে কোনো নেতার বক্তব্য-বিবৃতি বা কর্মসূচি গণমাধ্যমে পাঠানো হলে সেটি বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়ার অনুরোধ করেছেন। একই ই-মেইল থেকে আরো একটি মেইল পাঠিয়ে দাবি করা হয়, দলের যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত কর্মসূচির বিবৃতি ভুয়া স্বাক্ষরিত। প্রমান হিসেবে তার স্বাক্ষরিত আগের বিবৃতির ছবিও পাঠানো হয়।
বুধবার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিনের নামে আরো একটি বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। বিবৃতিতে চলমান অবরোধ-আন্দোলনের মধ্যে বিএনপি এসএসসি পরীক্ষার দিনগুলোতে হরতাল শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এমন কথা জানানো হয়। দলটির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এ রকম কোনো বিবৃতি বিএনপির কোনো নেতার পক্ষ থেকে কোথাও দেয়া হয়নি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গ্রেপ্তার হওয়ার পর কিছু গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহল কবির রিজভী আহমেদ ‘ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব’। এর পরে ২৯ জানুয়ারি রাত নয়টা নয় মিনিটে এক বিবৃতিতে রিজভী আহমেদ বলেন, “আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরের দিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমার একটি বিবৃতি প্রকাশ ও প্রচারের জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু অতীব দুঃখের সহিত জানাচ্ছি যে, কোনো কোনো গণমাধ্যমে আমাকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে উল্লেখ করে প্রচার করেছে। যা সম্পূর্ণ অসত্য ও বিভ্রান্তিমূলক।
” অন্যদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়েও চলছে নানা অপপ্রচার। এসব বিষয়ে দলীয় সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া কিংবা তার পুত্রবধূর অফিসিয়াল কোনো ফেসবুক আইডি নেই। অথচ তাদের নামে একাধিক ফেক আইডি রয়েছে। এসব আইডি থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভ্রান্তিকর স্ট্যাটাস দেয়া হচ্ছে। জানা গেছে, খালেদা জিয়ার নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে চলমান অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে স্টাটাস দেয়া হয়েছে।
ওই স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, “আমি নিজে কার্যত ঘেরাওবন্দি। সদ্য বিধবা এক পুত্রবধূ আর সদ্য ইয়াতিম দুই নাতনিকে নিয়ে বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন অফিসে দিনযাপন করছি। বের হতে গিয়ে শিকার হয়েছি পেপার স্প্রের। প্রতি মুহূর্তে থাকতে হয় এক অসহ্য উৎকণ্ঠায়- আল্লাহ না করুন কখন জানি কোন নেতাকর্মীর গুম-খুনের খবর পেতে হয়। আল্লাহ না করুন কখন জানি ভেসে আসে আওয়ামী অপকৌশলের শিকার হয়ে পেট্রলবোমায় দগ্ধ অসহায় নিরীহ কোনো যাত্রী আর তার স্তব্ধ স্বজনদের আর্তনাদ, আল্লাহ না করুন কখন জানি শুনতে হয় কোনো প্রিয়জনের আকস্মিক সংবাদ, আমার কোকোর যেমন শুনেছি।”
সেখানে আরো বলা হয়েছে, “তোমাদের কাছেই জানতে চাই, লাগাতার সর্বাত্মক আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া আমাদের জন্য খোলা কোনো পথের কথা যদি তোমাদের জানা থাকে, তাহলে আমাদের জানিও। খোদ বেগম খালেদা জিয়ার মুখ থেকে যতক্ষণ না নতুন কোনো নির্দেশ আসছে, বাকশালের রক্তবাহী খুনি হাসিনার পতনের আর সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সর্বজনবিদিত পরিবেশ তৈরির সর্বাত্মক এই আন্দোলন ইনশাল্লাহ ততক্ষণ থামবে না।”
ডা. জোবায়দা রহমানের স্ট্যাটাসের সমালোচনা করে অনেকেই বলেছেন, সারা দেশে যেভাবে আগুনে পুড়ে মানুষ মরছে তা নিয়ে কিছুই নেই এই স্ট্যাটাসে। স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো। “একজন মাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- সন্তান নাকি দেশ? তিনি উত্তরে বলেছিলেন- দেশ। এরপর অমানুষিক নির্যাতন নেমে এলো তার দুই সন্তানের ওপর। এক সন্তানের পায়ের হাড়গুলো ভেঙে দেওয়া হলো, আরেক সন্তানকে ইলেকট্রিকের সাহায্যে ব্রেন ড্যামেজ করে দেওয়া হলো। এরপর আবার সেই মাকে জিজ্ঞেস করা হলো- আপনার কাছে সন্তান বড় নাকি দেশ? উনি কেঁদেছেন। চোখের পানি ফেলতে ফেলতেই বলেছেন- দেশ, এই দেশ আমার মা এই দেশ আমার স্বামী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বপ্ন আমি আমার মায়ের কাছেই থাকব আমার স্বামীর স্বপ্নের দেশেই থাকব। আমি আমার দুই সন্তানকে আল্লাহর কাছে শুপে (সঁপে) দিয়েছি। আমি বেঁচে থাকব আমার ১৬ কোটি সন্তানদের মাঝে।”
দলের নেতাদের নামে এসব অপপ্রচার বিষয়ে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী বলেন, “দেশে এখন একটি অস্থির সময় চলছে, এটা ঠিক। কিন্তু যে ধরনের অপপ্রচার করা হয় তা মূলত কোনো সিভিল ওয়ারে ক্ষেত্রে শত্রুপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য তাদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার জন্য করা হয়ে থাকে। এ বিষয়ে আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। যাতে করে কুচক্রী মহলের এই অপচেষ্টা সফল না হয়।”