২০১৩ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে ব্যাপক দৌড়ঝাপ করেছিলেন জাতিসংঘের তৎকালীন সহকারী মহাসচিব (রাজনীতি বিষয়ক) অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুপক্ষের সঙ্গেই কয়েক দফা বৈঠক করেও অবস্থায় কার্যত কোনো পরিবর্তন আনতে না পেরে ব্যর্থ হয়েই ফিরে যান তিনি। এরপর সহিংসতার মধ্যেই চরম বিতর্কিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং বিষয়টির সুরাহা কখনও হয়নি।
তবে ওই নির্বাচনের বছরপূর্তিকে কেন্দ্র করে চলতি বছরের শুরুর দিকেই ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। আগাম নির্বাচনের দাবীতে আয়োজিত সমাবেশ করতে না দেয়ার প্রতিবাদে গত ৬ জানুয়ারি থেকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ চালিয়ে আসছে ২০ দলীয় জোট। এমন পরিস্থিতিতে সেই তারানকো তার ওপর অর্পিত বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিক।
বুধবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান ডুজারিক।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত সাংবাদিকরা ডুজারিকের কাছে প্রশ্ন রাখেন- ‘বাংলাদেশ সঙ্কটময় পরিস্থিতি পার করছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সব মাত্রা অতিক্রম করেছে। রাস্তায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। দেশের মানুষ গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের জন্যে সংগ্রাম করছে। গত বছরের ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশে একটি একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের পূর্বে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো বাংলাদেশ সফর করে কোনো ধরনের সমঝোতা ছাড়াই ফিরে আসেন। ফলে ১৫৪টি আসনে কোনো ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই ক্ষমতাসীনরা নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করেন। এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। আপনি কি মনে করেন, জাতিসংঘের তরফে কেবল উদ্বেগ প্রকাশই যথেষ্ট, নাকি একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি?’
‘জবাবে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব পদমর্যাদার এই মুখপাত্র বলেন, ‘মহাসচিব বান কি মুন সাবেক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফারনান্দেজ তারানকোকে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন এবং তিনি তা করছেন।’
ডুজারিক এমন কথা জানালেও চলমান সঙ্কট নিরসনে সরকারের সঙ্গে তারানকোর যোগাযোগের বিষয়ে কোনো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় সহিংসতার ঘটনায় প্রাণহানিতে জাতিসংঘের উদ্বেগের কথাও জানান ডুজারিক। বাংলাদেশের স্থিতি ও ইতিবাচক উন্নয়নের জন্য মহাসচিব ব্যক্তিগতভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সহিংসতা এবং প্রাণহানিতে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন।’