চলমান গন আন্দোলনের কৌশল একাই নির্ধারণ করছেন বিরোধী জোটের শীর্ষনেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কর্মসূচি বাস্তবায়নে দলের সিনিয়র নেতা ও তৃণমূল কর্মীদের দিচ্ছেন নানা নির্দেশনা। তবে এই কৌশল নির্ধারণে তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী এখন পর্যন্ত কোন ধরনের ভুল করেননি। ভবিষ্যতেও কোন ধরনের ভুল করবেন বলে মনে হয় না। তিনি কোন ভুল করলে দেশে ম্যাসাকার হবে বলে মন্তব্য করেছেন তার উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী।
গনমাধ্যমকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, বিএনপিতে বর্তমানে সবচেয়ে অভিজ্ঞ রাজনীতিক হলেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি দলের নেতাকর্মীদের যেমন ভালভাবে জানেন তেমনি প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশলও ভাল বোঝেন। তাই চলমান আন্দোলনের কৌশলও তিনি একাই নির্ধারণ করছেন।
রুহুল আলম চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়া দলের সিনিয়র নেতাদের জানিয়েছেন আন্দোলনের কৌশল আগেভাগে কিছু বলা হবে না। কারণ আগে বললে তা ফাঁস হয়ে যায়। তাই কখন কি করতে হবে সেই নির্দেশনা যথাসময়ে দেয়া হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন,সরকার পতনের এই আন্দোলন সঠিক পথেই এগিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপারসন এখন পর্যন্ত আন্দোলনের যতগুলো কৌশল নির্ধারণ করেছেন তার মধ্যে একটি ভুলও করেননি। আশা করি ভবিষ্যতেই কৌশল নির্ধারণে তিনি কোন ভুল করবেন না। ভবিষ্যতে তিনি যদি কোন ভুল করেন তাহলে দেশে ম্যাসাকার হবে। ক্ষতি হবে বিএনপি তথা ২০ দলের।
রুহুল আলম চৌধুরী আরও বলেন, ২০ দলীয় জোটের এই আন্দোলন থেকে পিছু হঠার কোন সুযোগ নেই। যদি পিছু হটে তাহলে আওয়ামী লীগের ঘুরে দাঁড়াতে যেমন ২১ বছর লেগেছিল তেমনি বিএনপিরও ১৫-২০ বছর লাগবে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য দমন-পীড়ন আরও বাড়াবে। শেখ হাসিনা একপর্যায়ে হয়তো বেগম জিয়াকে গ্রেপ্তার করতে পারেন। কিন্তু তাতেও আন্দোলন দমবে না। দলের শীর্ষনেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল কর্মীরা কঠোর মনোভাব নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। এই অবৈধ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, সরকার বিএনপি চেয়ারপারসনকে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করার পর গেটে তালা দিয়েছে। তাকে লক্ষ্য করে নিষিদ্ধ পেপার স্প্রে ছুড়েছে। কার্যালয়ের বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্ক, ল্যান্ডফোন, ফ্যাক্স, ক্যাবল টিভির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। কিন্তু এখনও গ্রেপ্তার করার সাহস পাচ্ছে না। কারণ তারা ভাল করেই জানে বেগম জিয়াকে গ্রেপ্তার করলে সারা দেশে আগুন জ্বলবে। আন্দোলনের মাত্রা আরও তীব্র হবে।
কতদিন এই আন্দোলন চলবে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা বলেন, বেগম জিয়া আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন আন্দোলন ডিসেম্বরের শেষদিকে শুরু করবেন আর মার্চে শেষ করবেন। মাত্র তো ফেব্রুয়ারি শুরু হলো। চলতি মাস আন্দোলন চললেই সরকার আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।
সারা দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে মন্তব্য করে রুহুল আলম বলেন, টানা অবরোধে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন পড়েছে রাজধানী। অর্থমন্ত্রী ও পুলিশের আইজিপির কথায় সেটা পরিষ্কার হয়ে গেছে। এভাবে আর কিছুদিন চলছে, অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্য গুটিয়ে ফেলবেন। অস্থিরতা নেমে আসবে সর্বত্র।
সরকারের শীর্ষ কর্তাদের নির্দেশ বাস্তবায়ন হচ্ছে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন যেভাবেই হোক দমন করুন। সব দায় আমার। র্যাব, পুলিশ ও বিজিবি প্রধান সাত দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু আন্দোলন দমাতে পারেনি। উল্টো সরকার বাধ্য হয়ে রাত ৯টার পর দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। এতে পরিষ্কার হয়ে গেছে সরকারের শীর্ষকর্তাদের নির্দেশ মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
পেট্রল বোমা হামলা সম্পর্কে রুহুল আলম বলেন, এটি সত্যি একটি ঘৃণ্য কাজ। আগুনে পুড়ে প্রাণহানির ঘটনা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারা এই পেট্রল বোমা হামলা চালাচ্ছে, কারা এর সঙ্গে জড়িত সরকার কাউকেই চিহ্নিত করতে পারছেন না। কিন্তু দায় বর্তাচ্ছে বিএনপির ওপর। তিনি বলেন, এই পেট্রল বোমা হামলার ঘটনা ভবিষ্যৎ সরকারের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ যারা বিরোধী দলে যাবে তারা যে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাবে না তার নিশ্চয়তা নেই।
সঙ্কট উত্তরণের কোন সম্ভাবনা দেখছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন যে সাতদফা প্রস্তাব দিয়েছেন তাতেই সঙ্কট থেকে উত্তরণের পথ রয়েছে। সরকারের মনোভাব দেখে মনে হচ্ছে তারা বিরোধী জোটের সঙ্গে সংলাপে বসবে না। ওদিকে বিএনপিও আন্দোলন থেকে পিছু হটবে না। আর এভাবে আন্দোলন চলতে থাকলে একপর্যায়ে সরকার হয়তো জরুরি অবস্থা জারি করতে বাধ্য হবে।