বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্যে খাবার নিয়ে সপরিবারে আসা সাবেক ১২ স্বশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে পুলিশ।
শনিবার বেলা ১২টা ২০ মিনিটে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের দুইশ গজ সামনে থেকে তাদের ফিরিয়ে দেয় পুলিশ।
'আমরা কোনো রাজনীতি করি না। জেনারেল জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন। আমরা আমাদের সাবেক সেনাপ্রধানের স্ত্রীর জন্য মানবিক কারণে কিছু খাবার নিয়ে এসেছিলাম, তা সেখানে নিতেও দিচ্ছে না, এমনকি পৌঁছিয়েও দিতে চাচ্ছে না পুলিশ। তারা বলছেন, ‘কোনো খাবার যাবে না। উপরের থেকে নিষেধ আছে’। এ থেকে বুঝা যায়, পরিস্থিতি এখানে স্বাভাবিক নয়।
গণমাধ্যমে শুনেছিলাম, বেগম জিয়ার কার্যালয়ে খাবার যাচ্ছে না। তা আজ প্রত্যক্ষ করলাম। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক’। গুলশান কার্যালয়ে অভুক্ত খালেদা জিয়া ও তার সহকর্মীদের জন্য আনা খাবার-পানি রাস্তার উপর রেখে দিয়ে গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা (স্কোয়াড্রন লীডার) রেজাউর রহমানসহ কয়েকজন।
এর আগে তারা খাবারগুলো ভেতরে পৌঁছে দিতে কর্মরত সাংবাদিকদের কাছেও অনুরোধ জানিয়ে ব্যর্থ হন।
এই প্রতিনিধিদলে সাবেক কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন, স্কোয়াড্রন লীডার এম ওয়াহিদ উন নবী, স্কোয়াড্রন লীডার টুক জামিল, স্কোয়াড্রন লীডার মুহাম্মদ তারেক, মেজর জামাল হায়দার, ক্যাপ্টেন ফিরোজ ইফতেখার, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সাইফুল আলম, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মোহাম্মদ রেজোয়ান। সাথে তাদের কয়েকজনের স্ত্রী-সন্তানও ছিলেন। সামরিক কর্মকর্তাদের আনা খাবারের মধ্যে ছিলো, রান্না করা ভাত-মাছ-মাংস, পানির বোতল ও কলা-প্যাকেট জুস।
বেলা সোয়া ১২টার দিকে অবসরপ্রাপ্ত স্কোয়াড্রন লীডার রেজাউর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গুলশানের ৮৬ নং সড়কে উত্তর দিকের মোড়ে এসে পৌঁছালে পুলিশ তাদের গতিরোধ করে। নিজেদের পরিচয় দিয়ে আসার কারণ জানালেও তাদের যেতে দেয়নি পুলিশ। পরে সাবেক এই সামরিক কর্মকর্তারা পুলিশকে অনুরোধ জানায় রান্না করা দুপুরের খাবারগুলো গুলশান কার্যালয় পৌঁছিয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু সাদা পোশাকে পুলিশের গুলশান থানার এক কর্মকর্তা জানায়, ‘কোনো খাবার যাবে না। উপরের থেকে নিষেধ আছে।’
এরপর সাংবাদিকদের কাছে সাবেক স্কোয়াড্রন লীডার রেজাউর রহমান ক্ষোভের সুরে বলেন, ‘এটা দুঃখজনক আমরা আমাদের সাবেক সেনা প্রধানের স্ত্রীর জন্য মানবিক কারণে কিছু খাবার নিয়ে এসেছিলাম, তা সেখানে নিতেও দিচ্ছে না পুলিশ। পৌঁছিয়েও দিতে চাচ্ছে না তারা। এ থেকে বুঝা যায়, পরিস্থিতি এখানে স্বাভাবিক নয়। আমরা গণমাধ্যমে শুনেছিলাম, বেগম জিয়ার কার্যালয়ে খাবার যাচ্ছে না। তা আজ প্রত্যক্ষ করলাম।’
তিনিসহ তার সহকর্মীরা খাবার-পানি কার্যালয়ে পৌঁছিয়ে দিতে সাংবাদিকদের অনুরোধ জানায়। পরে ক্ষুব্ধ হয়ে আনা খাবার রাস্তার ওপর রেখে তারা চলে যান। ফেলে রাখা খাবারের কিছু রিকশাচালকরা নিয়ে যায়। বাকিটা পাশের নালা ও ডাস্টবিনে ফেলে দেয় রাস্তায় নিয়োজিত পরিচ্ছন্ন কর্মীরা।
সাবেক এই সামরিক কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, আমরা কোনো রাজনীতি করি না। জেনারেল জিয়াউর রহমান আমাদের সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন। তার স্ত্রী অভুক্ত আছেন বলেই আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে নিজেরা রান্না করে নিজেদের স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু কার্যালয়ের কাছেই পুলিশ আমাদের যেতে দিলো না, ২০০ গজ দূরে আমাদেরকে আটকিয়ে দিয়েছে’।
গত ৪৭ দিন ধরে রাজধানীর গুলশান-২ এর ৮৬ নম্বর রোডের ৬ নম্বর বাড়ীতে ‘অবরুদ্ধ’ আছেন খালেদা জিয়া। গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে কার্যালয়ের ভেতরে কোন খাবার প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। টানা ১২ দিন কাউকে ভেতরে যেতেও দেয়া হচ্ছে না। খাবার নিয়ে এলেও তা ফেরত পাঠানো হচ্ছে। কাউকে আটক আবার কাউকে জেলে দেয়া হচ্ছে। তবে খালেদা জিয়ার জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে আনা খাবার প্রবেশে কোন বাধা দিচ্ছে না। স্টাফ ও সহকর্মীরা শুকনো খাবার খেয়ে মানবেতর দিনাতিপাত করায় তিনিও তার খাবার খাচ্ছেন না। এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি গভীর রাতে কার্যালয়ের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হয়। পরদিন ইন্টারনেট, ক্যাবল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন করা হয়। বিদ্যুৎ দিলেও বাকি বিচ্ছিন্নতা রয়েছেই। অভুক্ত কয়েকজন শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে।