তিনদিনের সফর শেষে শনিবার রাতে ফিরে গেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
এ সফরে বাংলাদেশ কি পেলো, বহুল প্রতিক্ষিত তিস্তা চুক্তি, ছিটমহল বিনিময়ের বিষয়ে কোনো কার্যকর অগ্রগতি হলো কিনা তা এখনই বোঝা কঠিন। পশ্চিমবঙ্গে প্রভাশালী দৈনিক আনন্দবাজারের মতে ওই রাজ্যের প্রাপ্তির খাতাও শূন্য।
পত্রিকাটির দাবি, বাংলাদেশের দল জামায়াতের সঙ্গে তৃণমূলের যোগাযোগের ইস্যুতে যে চাপ তৈরি হয়েছে মমতার ওপর তা কাটাতেই এই সফর। রোববার এক প্রতিবেদনে পত্রিকাটি এমন দাবি করে। আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশের বিমানে ওঠার আগেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে তৃণমূল-জামায়াত যোগাযোগ নিয়ে যে চাপ তৈরি হয়েছে, তা কাটিয়ে ঢাকার মন জয় করতেই তার এই সফর।
বাংলাদেশের নেতৃত্ব তাদের আচার ব্যবহারে সন্দেহের কোনো বহিঃপ্রকাশ অবশ্যই দেখাননি। প্রোটোকল ভেঙে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে বিদায় দিতে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এসেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। দাঁড়িয়ে থেকেছেন যতক্ষণ না গাড়ি ছাড়ে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দিুল হামিদ তাকে বলেছেন, পরের বার এসে হোটেলে নয়, তার বাড়িতেই যেন আতিথ্য গ্রহণ করেন মমতা। তিস্তা নিয়ে আলোচনা প্রক্রিয়া শুরুর কথা বলে এসেছেন মমতা। তিনি হয়তো ভাবছেন, এই আলোচনা প্রক্রিয়া শুরু হলে তার দলের বিরুদ্ধে ওঠা জামায়াত যোগের অভিযোগ নিয়ে খোঁচাখুঁচি করা হয়তো বন্ধ করবে ঢাকা।
সেটা হবে কি না, তা অবশ্য ভবিষ্যৎই বলতে পারে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, মমতার সফরকে ঘিরে বাহ্যিক উচ্ছ্বাস, আন্তরিকতা এবং সৌজন্যের কোনো অভাব ছিল না। শনিবারের বৈঠকেও শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন ‘গণভবনে’ ঢালাও আপ্যায়ন করলেন তার ‘ছোট বোন’ মমতাকে।
শুকবার মাঝরাতে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর পর যেভাবে প্রোটোকল ভেঙে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছুটে গিয়েছিলেন একে অপরের দিকে, শনিবার গোটা দিন সেই সুর বেজেছে মমতার ফিরতি বিমানে ওঠা পর্যন্ত। কিন্তু, এসবের পরেও একটি প্রশ্ন বড় হয়ে উঠেছে, সরকারি অর্থে পাত্র-মিত্র-অমাত্য নিয়ে মমতার এই ঢাকা সফরে রাজ্য কী পেল?
শনিবার ভারতীয় হাই কমিশনার পঙ্কজ সরনের বাড়িতে চা-চক্রের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীসহ প্রতিনিধি দলের খোশগল্প ও গানবাজনা অথবা দুপুরের বৈঠকি আড্ডায় মনভরানো বিচিত্রানুষ্ঠান হলেও, রাজ্যের পাওনার ঘরে কিন্তু বলার মতো কিছুই নেই। তবে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে যৌথ উদ্যোগে সিনেমা তৈরি নিয়ে আজ বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা সেরেছেন মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী অভিনেতা প্রসেনজিৎ ও পরিচালক গৌতম ঘোষ। দুই বাংলার মধ্যে যৌথ উদ্যোগে চলচ্চিত্র নির্মাণ, কালকাতায় বাংলাদেশি ছবির উৎসব-সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খুব শীঘ্রই উদ্যোগ শুরু হবে শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রসেনজিৎ। কিন্তু এই আলোচনার বিষয়টিও নতুন নয়। বছর তিনেক ধরেই চলছে। কিন্তু বাংলাদেশের কিছু প্রভাবশালী প্রযোজকের বাধায় কিছুই এগোচ্ছে না।
শনিবার বিকেলে দু’দেশের ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে একটি বৈঠক হল। তাতে বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদসহ দু’পক্ষের বহু বাণিজ্য কর্তা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু গোটা আলোচনাটিই ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী এবং তিস্তা-ছিটমহলের দাবিদাওয়ার চড়াতেই গিয়ে ঠেকলো। কোনো নির্দিষ্ট বিনিয়োগ সম্ভাবনা তৈরি হল না।
দু’দেশের বিমানবন্দরে পারস্পরিক দোকান করার মতো কিছু মৌখিক প্রস্তাব মুখ্যমন্ত্রী দিলেও, তা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হল না। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।