বাংলাদেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
মঙ্গলবার প্রকাশিত সংস্থাটির ২০১৪-১৫ বছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে বহু লোককে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীরা অব্যাহত হামলা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা অন্যতম উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, পুলিশ ও অপরাপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চরম নির্যাতন করলেও তাদের কোনো বিচার হচ্ছে না। কারখানার শ্রমিকরা ঝুঁকিপূর্ণ কর্মস্থলে কাজ করে যাচ্ছেন। কমপক্ষে একজন ব্যক্তি কোনো আপিলের সুযোগ না পেয়েই মৃত্যুদণ্ড ভোগ করেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গতবছরের ৫ই জানুয়ারির প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় ঘোষণা হওয়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় বসে। বিরোধী দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট ওই নির্বাচন বর্জন করে। ওই নির্বাচনবিরোধী প্রতিবাদে শতাধিক লোক নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজন পুলিশের প্রকাশ্য গুলিতে নিহত হন। এ সব হত্যা নিয়ে তদন্তের আলামত দেখা যাচ্ছে না।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সঠিক সংখ্যা জানা না গেলেও বাংলাদেশে আনুমানিক ৮০টির বেশি গুমের ঘটনা ঘটেছে। ২০১২ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে গুম হওয়া ২০ জনের পরিচয় মিলেছে। এর মধ্যে নয়জনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। ছয়জন কয়েক সপ্তাহ বা মাসের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বাকি পাঁচজনের কোনো খবর মেলেনি।
২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনটিতে। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে আটক র্যাবের ১৭ সদস্যকে বিচারের মুখোমুখি করার প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানানো হয় প্রতিবেদনে। বলা হয়, ২০০৪ সালে র্যাব গঠনের পর এমন উদ্যোগ এই প্রথম। তবে সরকার এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করতে পারে—এমন আশঙ্কাও আছে।
অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিরোধী দলের সমর্থকেরা বাসে পেট্রলবোমা হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ৯ জনকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব হামলায় আহত হয়েছে আরও বহু লোক।
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার সমালোচনা করে অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে বলা হয়, এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে প্রচণ্ডভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে। সরকারের সমালোচনা করায় বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী, সাংবাদিক আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর হুমকির মুখে পড়েছেন বলে তাদের উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের সমালোচনা করে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধের বিচারে ২০০৯ সালে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় অত্যন্ত একপেশে রাজনৈতিক পরিবেশে হচ্ছে। এই বিচারের পক্ষের লোকজন মজবুত প্রমাণ ছাড়াই আসামিদের মৃত্যুদণ্ডের দাবি করছে।