জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুনের দেওয়া চিঠির জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত জোট দেশে সহিংসতা, সন্ত্রাস ও অরাজকতা সৃষ্টি করছে। আর তাই ‘সন্ত্রাসীদের’ সঙ্গে কোনো সংলাপে বসবে না সরকার।
একই সঙ্গে সহিংসতা বন্ধ করতে তিনি আন্দোলনকারীদের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
জাতিসংঘ মহাসচিবকে দেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে চিঠির জবাব শনিবার নিউ ইয়র্কে পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এটি জাতিসংঘ মহাসচিবের দপ্তরে পৌঁছার আনুষ্ঠানিকতা এখনো বাকি রয়েছে।
আলাপ-আলোচনা ও সংলাপের মাধ্যমে মতপার্থক্য নিরসনের আহ্বান জানিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে জাতিসংঘ মহাসচিবের পাঠানো চিঠির জবাবে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের এই অবস্থান তুলে ধরলেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব তার চিঠিতে সংলাপে বসার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর চিঠিতে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সরকারের সাফল্যেরও কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও জাতিসংঘ মহাসচিবের চিঠির জবাব দিয়েছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব গত ৩০ জানুয়ারি চিঠি পাঠালেও প্রধানমন্ত্রীর কাছে তা পৌঁছে প্রায় দুই সপ্তাহ পর।
এরপর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম নিশ্চিত করেন যে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিবের চিঠি পেয়েছেন। সে সময়ই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, সংলাপ প্রশ্নে সরকারের একটি অবস্থান আছে। আর তা হলো খুনিদের সঙ্গে কোনো সংলাপ নয়।
এরপর বাংলাদেশ সফরকারী ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটিকেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, সহিংসতা বন্ধ না করলে কোনো সংলাপ হবে না।
সংলাপের আহ্বানে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল সাড়া না দিলেও ওই আহ্বানকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি।
ইউরোপীয় পার্লামেন্ট প্রতিনিধিরা গত সপ্তাহে পার্লামেন্টে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলেছেন, দুই দলের অনড় অবস্থান এবং সংলাপ-সমঝোতার ব্যাপারে অনীহায় তারা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে বলেও তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল গত বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। কিন্তু এ ধরনের মৌলিক সমস্যার সমাধান বাংলাদেশকেই করতে হবে।
তিনি বলেন, সহিংসতা বন্ধ হওয়া এবং শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক বিরোধিতার সুযোগ দেওয়া সমান গুরুত্বপূর্ণ।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের শুরু থেকেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অস্থিরতা ও সহিংসতার কারণে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অনেক দেশ ও সংস্থা উদ্বেগ জানিয়েছে এবং বিরোধীদের সাথে সংলাপে বসার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।