বিএনপি আমাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণের পর হত্যার পরিকল্পনা করেছিলো বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। একই সঙ্গে তিনি, তাকে অপহরণ ও হত্যা চেষ্টাকারীরা বিএনপি’র যতো উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্বই হোক না কেন, তাদের হদিস বের করে বিচারের মুখোমুখি করবেন বলেও জানিয়েছেন।
কয়েক ঘণ্টা আগে সোমবার (০৯ মার্চ) জয় তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এসব কথা বলেন । তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
৪ মার্চ, বুধবার আমি মার্কিন আদালতে ক্ষতিগ্রস্থ হিসেবে একটি বক্তব্য পেশ করেছি, যে আদালতে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের পুত্র রিজভী আহমেদ সিজারের সাজা ঘোষণা করা হয়। বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্ব সিজারকে মাসে ৪০,০০০ মার্কিন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রথম দফায় ৩০,০০০ মার্কিন ডলার ক্যাশ প্রদান করে। তদন্ত চলছে তাই আমি তাদের নাম প্রকাশ করতে পারছি না। বিএনপি আমাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণের পর হত্যার পরিকল্পনা করেছিলো। আবারও বলছি, এগুলো কোনো রাজনৈতিক দলের আচরণ হতে পারে না। এগুলো জঙ্গিদের আচরণ। যে দল নিরীহ মানুষ ও শিশুকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারে, তাদের কাছ থেকে আর কী আশা করা যায়?
লক্ষ করে দেখুন, যেসব পত্রিকা ও "সুশীল সমাজ" আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বলতে কখনো পিছপা হয় না, তারা এ বিষয়ে একেবারে নিশ্চুপ। বিএনপি অপহরণ ও হত্যা করতে পারে, তারপরও তারা কখনোই বিএনপিকে সরাসরি দায়ী করে কিছু বলবে না। তারা সবসময় দুই দলকে দোষী করবে। আমাকে হত্যা করার জন্য বিএনপির এই প্রচেষ্টার সপক্ষে তারা কোন যুক্তি তুলি ধরবে এখন? এই একই "সুশীল সমাজ" দাবি করে যে ব্যক্তিগত রেষারেষির জের ধরেই নাকি বিএনপি নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মারে। আমাকে যখন কেউ হত্যার চেষ্টা করছে, সেটিও তখন আমি খুবই ব্যক্তিগত ব্যাপার হিসেবে নিচ্ছি। যারা এর জন্য দায়ী, তারা বিএনপির যতো উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্বই হোক না কেন, আমি তাদের হদিশ বের করে বিচারের মুখোমুখি করবো।
এফবিআইয়ের চার্জশিটে জয় অপহরণ প্রসঙ্গে কোনো কথা নেই, এমনকি জয়ের নামও নেইঃ
এফবিআই সদস্যকে পাঁচ লাখ ডলার ঘুষ দিয়ে তথ্য নেয়ার চেষ্টা প্রমাণিত হওয়ায় বিএনপি নেতার ছেলের শাস্তি, সঠিক সংবাদ। এফবিআই এর দেয়া চার্জশিটে তার বিস্তারিত উল্লেখ আছে। কিছুই উল্লেখ নেই প্রধানমন্ত্রীর পুত্র -উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের অপহরণ প্রসঙ্গটির। চার্জশিটে যে এই বিষয়টি উল্লেখ নেই, তা নিয়ে প্রথম লিখলেন কানাডা প্রবাসী সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর। আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য সাগর ভাইয়ের সঙ্গে কথা বললাম। তারকাছ থেকে ১১ পৃষ্ঠার এফবিআই -এর দেয়া চার্জশিট এবং ইউএস এটর্নি জেনারেলের অফিস থেকে পাঠানো প্রেস রিলিজ সংগ্রহ করলাম। এটা গোপন কিছু নয় ,যে কেউ ওয়েবসাইট থেকে সলগ্রহ করতে পারেন। রাতে একাত্তর টেলিভিশনে যেতে যেতে এবং অনুষ্ঠান শুরুর আগে পুরোটা পড়লাম। বিশ্ময়করভাবে দেখলাম, সেখানে জয় অপহরণ প্রসঙ্গে কোনো কথা নেই। এমনকি জয়ের নামও নেই। বলা হয়েছে একজন 'প্রমিনেন্ট ফিগার '। যার থেকে ধারণা করা হচ্ছে তিনি জয়। এটা সঠিক বলেই মনে করি। সকল পত্র পত্রিকা জয় অপহরণের প্রসঙ্গটি নিয়ে শিরোনাম করছে। গতকাল জাতীয় সংসদে আলোচনা পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু তথ্য সূত্র কী? কোথা থেকে পাওয়া গেল এই তথ্য? যতদূর জানতে পারলাম, 'বাসস ' নাকি প্রথম এই সংবাদটি প্রচার করেছে। তারপর থেকে অন্য পত্রিকা শিরোনাম করছে,এমন কী জাতীয় সংসদে পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। গণমাধ্যম ,নেতা নেত্রী,এমপি মন্ত্রী, কেউ একবার এফবিআই -এর চার্জশিট পড়ে দেখার প্রয়োজন মনে করছেন না।
বিএনপি যে ঘুষ বিষয়টিকে আমেরিকা পর্যন্ত নিয়ে গেছে, এর সমালোচনা করে, বিচার -শাস্তি দাবি করেই তো সংসদে আলোচনা হতে পারত। যা সঠিক নয়, তা নিয়ে আলোচনা করে খালেদা -তারেককে অভিযুক্ত করে, সরকার কিছু অর্জন করলেন না হারালেন? সত্যি আজব এক দেশ আমাদের! একদলের নেতা ঘুষ দিয়ে, আরেক দলের নেতার তথ্য বের করার চেষ্টা করে বিদেশে ধরা পড়ছেন, শাস্তি হচ্ছে!! শুধু চেষ্টা নয়, এফবিআই -এর চার্জশিট বলছে, ঘুষ নেয়া সেই এফবিআই সদস্য এফবিআই ডাটাবেজ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের একটি তথ্য সরিয়ে নিয়েছেন। সেই তথ্যটি কার, ঘুষ প্রদানকারীকে সেই তথ্য সরবারাহ করেছেন কিনা -তা অবশ্য উল্লেখ নেই চার্জশিটে। বোঝা যাচ্ছে এফবিআই -এর এই বিষয়টি আগামী কিছুদিন আমাদের রাজনীতির আলোচনার বিষয় হয়ে থাকবে।