ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ দেখতে দেখতে তিন মাসে গড়ালো বিএনপির চলমান অবরোধ আন্দোলন। সাংগঠনিক দুর্বলতা, পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের অভাব, ঢালাও নেতাদের আত্নগোপন, সর্বোপরি সরকারের কঠোর মনোভাবের পরও রাজপথের এই আন্দোলন এখনও ধরে রেখেছে বিএনপি।
দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব সহ বহু নেতা অম্তরীন কিংবা আত্মগোপনে থাকার পরও বিএনপি বিষ্ময়কর ভাবে আন্দোলন কার্ক্রম পরিচালনা করছে সুশৃংখল ভাবে,তার কৃতিত্ব লন্ডন প্রবাসী দেশনায়ক তারেক রহমানকে দিতে চান দলের তৃনমূল পর্যায়ের লড়াকু নেতা-কর্মীরা।
এখনও পর্যন্ত আন্দোলন ও নেতাদের চেয়ে জনসমর্থনের ওপরই ভরসা রাখছে বিএনপি ও নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। সরকারি দলের নেতারা বলছেন, বিএনপির সঙ্গে জনগণ নেই। তাই তাদের আন্দোলনে জনগণ শরিক হয় না।
অপরদিকে বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে আন্দোলন দমাতে যা যা দরকার তাই করছে। এরপরও জনমর্থন আছে বলেই বিএনপি আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারছে। বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মনে করছেন, আন্দোলন যাই হোক, জনগণ বিএনপির আন্দোলন নিয়ে যতই বিরক্ত হোক না কেন, এই জনগণই বিএনপির পাশে আছে। এ কারণেই বিএনপি এখনো আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারছে। তবে নেতারা আত্নগোপনে থাকায় আন্দোলন ও জনমনে প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন তারা। সিনিয়র নেতারা বলছেন, শতকারা ৯০ ভাগ মানুষ এই নির্বাচনহীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিপক্ষে। তারা সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়, যেখানে তারা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। নির্বাচন হলে শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ বিএনপিকে ভোট দেবে। আওয়ামী লীগ হয়তো ২০টা আসনও পাবে না।
নেতারা বলছেন, আন্দোলন কর্মসূচিতে নেতারা মাঠে না নামার বিষয়ে অনেকেই হয়তো ক্ষুদ্ধ। প্রথম দিকে ক্ষুদ্ধ হওয়ার তীব্রতা বেশি থাকলেও তা এখন নেই। কেননা জনগণ এখন বুঝতে পেরেছে, দেখতে পাচ্ছে বিএনপির কোন মিছিল বের হলেই আটক করা হচ্ছে গুলি করা হচ্ছে ক্রসফায়ার দেয়া হচ্ছে। বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। একের পর এক মামলা দেয়া হচ্ছে। এসব এড়াতেই নেতাকর্মীরা আত্নগোপনের কৌশল বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে। সরকার এসব না করলে তো নেতাকর্মীরা আত্নগোপনে থাকতো না। রাজপথে থেকে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতো।
জনসমর্থনের বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত লে. জে. মাহবুবুর রহমান বলেন, “একটা দলের জন্য নেতাদের চাইতে জনসমর্থন বড় বিষয়। জনসমর্থন আছে বলেই বিএনপি দেশের সর্ববৃহৎ দল।”
এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল(অবঃ) রুহূল আলম চৌধুরী বলেন,প্রবল প্রতিকূলতার মধ্যেও ,দেশনেত্রী বেগম জিয়ার প্রতি জনসাধারনের অগাধ আস্থা আর বিশ্বাসের কারনেই বিএনপি এতো দিন ধরে অবরোধ আন্দোলন করে যেতে পারছে। তবে মাঠ পর্যায়ের নেতা কর্মীদের আন্দোলনে আস্থা বজায় রাখতে দলের আত্মগোপনকারী এবং নিস্ক্রীয় নেতাদের কার্যকর সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
বিএনপি চেয়ারপারসনের অপর উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান বলেন, “বিএনপির আন্দোলনের প্রতি সবটুকু সমর্থন আছে জনগণের। জনগণ চায়, গণতান্ত্রিক দেশ শাসন করবে নির্বাচিত সরকার। সেজন্য আমাদের আন্দোলন। এই আন্দোলনে ঢাকায় আমরা নামতে না পারলেও সারাদেশে পুলিশি বাধা উপক্ষো করে প্রতিদিন মিছিল মিটিং হচ্ছে। কিন্তু মিডিয়ায় তা প্রকাশ হচ্ছে না। মাত্র ৫ ভাগ প্রচারিত হচ্ছে।” বর্তমান সময়ে আন্দোলনের চেয়ে জনসমর্থনের গুরুত্বের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, “বিএনপি জনসমর্থনকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। এখন হয়তো সিনিয়র নেতাদের নামে অসংখ্য মামলা, পেলেই গ্রেফতার করা হচ্ছে। গুলি করা হচ্ছে, মামলা দেয়া হচ্ছে। তাই হয়তো গুলির ভয়ে, আটকের ভয়ে সিনিয়র নেতারা নামছেন না। কিন্তু জনসমর্থন থাকলে আন্দোলন হবেই। তখন সিনিয়র নেতারাও নামবেন।” জনসমর্থন আর আন্দোলন একে অপরের পরিপূরক বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক বলেন, “৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন বর্জন করার জন্য জনগনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলো বিএনপি। বিএনপির সেই আহ্বান সাড়া দিয়ে ৯৫ ভাগ ভোটার সেই নির্বাচন বর্জন করেছে। এদের সমর্থন এখনো বিএনপির প্রতিই আছে। আর আছে বলেই এখনো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি।” তিনি বলেন, “কিন্তু সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে এই আন্দোলন দমন করে জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চাইছে। তা কখনো সম্ভব নয়। বিএনপি জনগণের নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই জনগণ অচিরেই এই সরকারকে টেনে নামিয়ে নিজেদের সরকার প্রতিষ্ঠিত করবে।”
লালবাগ থানা বিএনপির সদস্য ওসমান বলেন, “সিনিয়র নেতারা আন্দোলনে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়ে আত্নগোপনে আছেন। এজন্য মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা কিছুটা হতাশ। তবে এটাও বাস্তবতা যে এখন রাজধানীতে রাজপথে নামার পরিবেশ নেই। তবে নেতাদের উচিৎ মাঠে না নামলেও নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা। নেতা নয় জনসমর্থনের কারণেই বিএনপি এখনো টিকে আছে।