এবারের ১১তম আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট শুরু হয়েছে গত ১৪ ই ফেব্রুয়ারী। এর ঠিক একদিন পরই প্রভাবশালী বৃটিশ সাময়িকি দ্য ইকোনোমিস্ট একটি বিশ্লেষণাত্মক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
বিশ্বকাপ যতো গড়াচ্ছে, ততোই যেন প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে ইকোনোমিস্টের সেই প্রতিবেদন। এই বিবেচনায় পাঠকদের জন্য সেই প্রতিবেদনের একটি ভাবানুবাদ প্রকাশিত হলো। একাদশ ক্রিকেট বিশ্বকাপটি অষ্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে সবেমাত্র শুরু হয়েছে।
দীর্ঘ এ প্রতিযোগিতায় ৪২টি গুরুত্বহীন ম্যাচ হবে। যদি জানতে চান, কেন এরকম একটি বৈশ্বিক ও দীর্ঘ টুর্নামেন্টকে গুরুত্বহীন বলা হচ্ছে, তাহলে ২০০৭ বিশ্বকাপের দিকে নজর দিতে হবে। ওয়েষ্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত সেবার বিশ্বকাপে কি হয়েছিলো? ভারত টুর্নামের্টের একদম শুরুতেই ছিটকে পড়ে। আর এতে মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়ে যায় । বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি দর্শক টিভি বন্ধ করে দেয়।
বিজ্ঞাপন থেকে টেলিভিশনগুলো যে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার আয় করতে, সেটা বন্ধ হয়ে যায়। বিব্রত হয়ে পড়েন ভারতীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ আর ব্যবসায়ীরা; যারা বিশ্বের ২য় সর্বোচ্চ জনপ্রিয় এ খেলাটিকে মূলত পরিচালনা করে। এই ঘটনা পাল্টে দেয় বিশ্ব ক্রিকেটের বাস্তবতা। ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসকরা ভাবতে শুরু করেন, এমনটা আর হতে দেয়া যাবে না।
তাই তারা ২০১১ সালের বিশ্বকাপ আসরের ডিজাইন এমনভাবে করলো যাতে সবকিছু তাদের দখলেই থাকে এবং তারা একটু বেশি সুযোগ সুবিধা পায়। তারা যেসব জায়গায় খেলে অভ্যস্ত, সেখানেই ভেন্যু করা হলো। খেলাগুলো হলো বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কায়। পাকিস্তান আয়োজক দেশ হিসেবে প্রথমে থাকলেও পরে জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় তাদেরকে সে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। ক্রিকেটকে ঘিরে যে বাণিজ্য, তার বেশিরভাগটাই আসে ভারত থেকে।
দেশটির ১২০ কোটি মানুষের অধিকাংশই মানুষ কমবেশি ক্রিকেট দেখেন, খোঁজখবর রাখেন। ভারতে ক্রিকেট একটা উন্মাদনা, একটা প্রার্থনা। ক্রিকেটারদেরকে সেখানো স্বপ্নের নায়কের মত বিবেচনা করা হয়। কিন্তু তাহলে তো সেখানে আরো ভালো ভালো ক্রিকেটার তৈরি হওয়ার কথা। কিন্তু ক্রিকেটের দীর্ঘ ইতিহাসে কেন মাত্র দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারত? তাও এর মধ্যে একটি আবার নিজেদের পরিচিত পিচ আর কন্ডিশনে খেলে। ক্রিকেটে কেন ভারতীয়রা আশানুরূপ সাফল্য পায়নি এতদিন?
এ কারণটি ব্যাখ্যা করা আসলে খুবই মুশকিলের কাজ। দেশটির অনেক অনেক মানুষ গরিব, অপুষ্টির শিকার। তার উপর তাদের ক্রিকেট প্রশাসকরাও বিভিন্ন দুর্নীতিতে জর্জরিত। আর তারা সবসময় ব্যাটসম্যানদের উপযোগী করে পিচ তৈরী করে, যার কারণে এই ব্যাটসম্যানরা পরিচিত কন্ডিশনের বাইরে গিয়ে তেমন ভালো করতে পারে না।
ভারতে ব্যাটসম্যানরা খুবই জনপ্রিয়, যে কারণে অনেকেই বোলার হতে চান না। অবশ্য দেশটির অর্থনৈতিক বা ক্রিকেটিয় ব্যর্থতার কারণগুলো অনেকটাই এক। তবে তা সত্ত্বেও ইদানিং দেশটি ক্রিকেটে উন্নতি করছে। ভারতে দিনকে দিন যেভাবে ক্রিকেট জনপ্রিয় হচ্ছে এবং ক্রিকেট বাণিজ্য যেভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে, তাতে এখনই এটার শেষ কোথায় হবে তা বলা মুশকিল।
আবার ভারতে ফুটবলের মত খেলা ততটা জনপ্রিয় নয়। যতদিন ফুটবলের জনপ্রিয়তা ক্রিকেটের জনপ্রিয়তার একটা চ্যালেঞ্জ না দিচ্ছে ততদিন এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর পাওয়া যাবে না। বিশ্বক্রিকেটের উপর ভারতের এতটা প্রভাব দেখে ভিনদেশী কোনো ক্রিকেট ভক্ত ক্ষোভ প্রকাশ করতেই পারেন। কিন্তু এই প্রভাব শেষ হওয়ার যেহেতু কোনো সম্ভাবনা নেই, তাই প্রভাব অব্যাহত থাকলেও সেই ভক্তরা হয়তো আর তেমন একটা কষ্ট পাবে না। বরং প্রভাব কমে গেলে মানুষ অবাক হতে পারে। কেননা ক্রিকেটের উপর ভারতীয় টাকার ঝনঝনানি খুব মিস করবে তারা তখন!
ক্রিকেটের এতটাই নব্যবাণিজ্যিকীকরণ করা হয়েছে যে, কোনো ক্রিকেট ভক্ত যদি এমন লক্ষণ দেখেন যে ভারত বিশ্ব ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে, তাহলে তিনি খুব বেশি চিন্তিত হবেন না! বলাই বাহুল্য, গতকালই বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের এক ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিলো ভারত-বাংলাদেশ। যে ম্যাচে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অন্যায় সিদ্ধান্ত দিয়েছেন আম্পায়াররা। পরে ম্যাচটি ভারত জিতে যায়। এ ম্যাচের পর বিশ্ব্যাব্যপী ক্রিকেট বাণিজ্যের বিষয়টিই আবারো সামনে চলে আসলো।