বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদকে উদ্ধারের নামে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নানা নাটক করছে বলে অভিযোগ করছে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, এর আগে ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারের নামেও একই ধরনের নাটক করেছে র্যাব-পুলিশ। নিখোঁজের কয়েকদিন পর গাজীপুরের পুবাইলের একটি বাড়িতে ইলিয়াস আলীর সন্ধান পাওয়া গেছে এমন গুজব রটিয়ে র্যাব অভিযান চালিয়েছিল। ইলিয়াস আলীর পরিবার ও সংবাদকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে র্যাব কথিত উদ্ধারের নামে এ অভিযান চালিয়ে ছিল পুবাইলে। শুধু তাই নয়, মৌলভী বাজার, শ্রীমঙ্গলসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় র্যাব পুলিশ।
পরের গল্প দেশবাসীর জানা। আজো ইলিয়াস আলীর মমতাময়ী মা সূর্যবান বিবি সিলেটের বিশ্বনাথের রামধানা গ্রামে অপেক্ষায় আছেন কখন তার ছেলে ফিরবে। তার শিশু কন্যা সাইয়ারা নাওয়াল প্রতি রাত ঘুমাতে যাবার আগে মা তাহসীনা রুসদীর কাছে জানতে চায় কখন ফিরবে বাবা।
অথচ র্যাব-পুলিশ, সরকারের গোয়েন্দা বিভাগ ইলিয়াস আলীর সম্পর্কে কোন তথ্যই দিতে পারেনি গত ৩ বছরেও। তার পরিবার বরাবরই অভিযোগ করে আসছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ইলিযাস আলীকে তুলে নিয়ে গেছে। সরকার তার পরিবারকে জানাতে পারেনি ইলিয়াস আলী জীবিত না মৃত। ইলিয়াস আলীর মা, স্ত্রী, সন্তান ও স্বজনদের কান্না থামতে না থামতেই আরো একটি পরিবারে নেমে এলো নির্মম আর্তনাদ।
সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী সন্তানেরা যখন তাদের প্রিয় মানুষটি সন্ধান পেতে অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন, সেই মুহূর্তে তাদের শুনতে হচ্ছে না গল্প-গুজব। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ ও ইলিয়াস আলীর স্বজনেরা এভাবেই তাদের দুঃখের কথা, বেদনার কথা ব্যক্ত করেছেন। তারা বলছেন, যারা সালাহ উদ্দিনের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে গুজব রটিয়ে পরিবারের সদস্যদের বিভ্রান্ত করছে তাদের কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না। এ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পরিবারের সদস্যরা।
নিখোঁজ হওয়ার ১১ দিন পরেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সন্ধান দিতে না পারায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবার ও তার নির্বাচনী এলাকা চকরিয়া পেকুয়ার লোকজন। তারা বলছেন, সালাহ উদ্দিন আহমদ বিএনপির রাজনীতি করেন এটাই কি অপরাধ?
একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে একের পর এক জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা গুম হয়ে যাচ্ছে সরকার কিছুই জানে না তা মানতে রাজি নয় ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে গাইবান্ধা বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে উদ্ধারের নামে যে অভিযান চালানো হয়েছিল তা পুরোপুরি নাটক বলে দাবি করেছে স্বজনরা। তারা বলছেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীই তাকে উত্তরার বাসা থেকে ধরে নিয়ে গেছে। বাসার মালিক ব্যাংকার হাবিব হাসনাত এমন তথ্য দিয়েছেন বলে হাসিনা আহমেদ বার বার দাবি করে আসছেন।
পুলিশ জানায়,গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার খাটিয়ামারীসহ বেশ কয়েকটি চরে গভীর রাত অবধি তল্লাশি চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছে পুলিশ। জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, কোথাও সন্ধান পাওয়া যায়নি সালাহ উদ্দিন আহমেদের। পুরোটাই গুজব। ফুলছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের তালতলী, হাতিয়ামারী, বেলুয়াছড়িসহ কয়েকটি চরে গভীর রাত পর্যন্ত তল্লাশি চালানো হয়। তবে কোনো লাশ কিংবা সালাহ উদ্দিনের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি একটি গুজব। তবে কারা এ গুজব ছড়িয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করেছে তাদের খোঁজ করা হচ্ছে। গাইবান্ধা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম জানান, ঘটনার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। রাতেই তল্লাশি শেষ করা হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে খবর আসে ফুলছড়ির ব্রহ্মপুত্র নদের খাটিয়ামারি চরের কাছে নিখোঁজ বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিনের সন্ধান পাওয়া গেছে।
পরে গাইবান্ধা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম বিষয়টি জেনে ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে বিকেলে স্বাস্থ্যবিভাগ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেন। পুরো চরাঞ্চলে তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত অবধি অভিযান চালিয়েও সালাহ উদ্দিনের সন্ধান বা কোনো লাশ দেখতে পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা জানায়, বিকেলে খাটিয়ামারি চরের কাছে একটি লাশ দেখতে পায় এলাকাবাসী। লাশটি নিখোঁজ বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিনের বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিষয়টি জেলা প্রশাসক জানতে পারেন। গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজিউর রহমান জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে তল্লাশি চালানো হলেও গভীর রাত অবধি কোনো লাশের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, গত ১০ মার্চ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে সাদা পোশাকের একটি দল রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে আটক করে নিয়ে যায়। ঘটনার পর থেকেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, এ বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। এরপর গত ১২ মার্চ সালাহ উদ্দিন আহমেদকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে ফৌজদারি আবেদন করেন সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা আহমেদ। শুনানি শেষে সালাহ উদ্দিনকে ১৫ মার্চের মধ্যে খুঁজে বের করে আদালতে হাজির করতে কেন নির্দেশনা দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এ ব্যাপারে আগামী ৮ এপ্রিল আদালতে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।