DMCA.com Protection Status
title="৭

২৫শে মার্চ’৭১ এ গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত কোন স্বাধীনতার ঘোষনা দেননি বঙ্গবন্ধুঃইতিহাস বিশ্লেষন,পর্ব-২

skmujib ইতিমধ্যে আমরা তথ্য প্রমান যুক্তি দিয়ে প্রমান করার চেষ্টা করেছি যে আওয়ামীলীগের প্রথম দাবি অনুযায়ী ৭ই মার্চের ভাষণে শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দেন নি। এই পর্বে আমরা আওমিলীগের দ্বিতীয় দাবি নিয়ে আলোচনা করব। আওয়ামীলীগ দ্বিতীয় দাবি যে, শেখ মুজিব ২৫ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তাদের দাবি, শেখ মুজিব ২৫ মার্চ রাতে গ্রেফতারের আগে টেলিফোনের মাধ্যমে চট্টগ্রামে স্বাধীনতার ঘোষণাটি পাঠিয়েছিলেন। কোন কোন ক্ষেত্রে ওয়ারলেসের মাধ্যমেও ঘোষণাটি চট্টগ্রামে প্রেরণ করেছিলেন বলে দাবি করে থাকেন। আর এম. এ হান্নান প্রথম সে ঘোষনাটি কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে তারপরদিন ২৬ শে মার্চ দুপুর ২ টায় প্রথম প্রচার করে। এটাই নাকি স্বাধীনতার প্রথম ঘোষণা। এমনকি এই দাবির বিপক্ষে যাতে কেউ সত্য ইতিহাস তুলে ধরতে না পারে সেজন্য আদালতকে ব্যবহার করে সংবিধানে ইচ্ছামতো মনগড়া কল্পকাহিনী সন্নিবিষ্ট করে আওয়ামীলীগ চেষ্টা করছে ইতিহাসকে পাল্টে দিতে।

নিউজ বিডি সেভেনের প্রিয় পাঠক-চলুন, ২৫ মার্চ মুজিবের স্বাধীনতা ঘোষণার বিষয় নিয়ে আওয়ামীলীগ প্রদত্ত তথ্যের সূক্ষ্ণাতিসূক্ষ্ণ পরীক্ষা, নীরিক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করে দেখি….



ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং : (Declaration of Independence) DOI



প্রথমেই দেখা যাক শেখ মুজিবের বাসস্থান ধানমন্ডী ৩২ নং এ ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে কি ঘটেছিলো। ২৫ মার্চের সন্ধ্যা ৬ টা থেকে মুজিবের গ্রেফতার হওয়া পর্যন্ত পুরো ঘটনা প্রমাণসহ তুলে ধরা হচ্ছে। এরপর আপনারাই বিশ্লেষণ করবেন শেখ মুজিব কি আদৌ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন কীনা।



১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সন্ধ্যা ৬:০০ : টা 



রেহমান সোবহানের ‘বাংলাদেশের অভ্যুত্থান এবং একজন প্রতক্ষ্যদর্শীর ভাষ্য’, ১৯৯৪ গ্রন্থ থেকে জানা যায়:পাকিস্তানী সাংবাদিক তারিক আলীর পিতা মাজহার আলী এবং রেহমান সোবহান সন্ধ্যা ৬ টার দিকে শেখ মুজিবের সাথে দেখা করেন এবং তাকে জানানমিলিটারি ক্র্যাকডাউন আসন্। 





শেখ মুজিব এরপর ইয়াহিয়ার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকেন। এবং আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ১জন সংবাদবাহক স্থানীয় এবং বিদেশী সাংবাদিকদের মাঝে ১টি প্রেসনোট বিলি করেন যেটিতে উল্লেখ করা হয়:

"প্রেসিডেন্টের সাথে আলোচনা চূড়ান্ত হয়েছে, ক্ষমতা হস্তান্তরের মতানৈক্য হয়েছে এবং আমি (বঙ্গবন্ধু) আশা করি প্রেসিডেন্ট তা ঘোষণা করবেন"।



এ বিষয়ে অ্যান্থনি মাসকারেনহাস এর মন্তব্যটি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি তার বিখ্যাত ‘রেপ অব বাংলাদেশ’ গ্রন্থে শেখ মুজিব স্বাধীনতা ঘোষণা না করে উল্টো সমঝোতার চেষ্টা করায় ক্ষুব্ধ মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন,

"আমার দুঃখ হয়, এই নির্বুদ্ধিতা সম্পর্কে আমার কোন মন্তব্য নেই" 



১৯৭৩ সালে মযহারুল ইসলাম অনূদিত ‘রেপ অব বাংলাদেশ’ গ্রন্থের ১১৩ পৃষ্ঠায় এ মন্তব্যটি রয়েছে।



২৫ শে মার্চ ইয়াহিয়া এবং ভুট্টোর ভেতর ৪৫ মিনিটের ১টি মিটিং হয়। শেখ মুজিব পূর্ব ঘোষনা অনুযায়ী ২৫শে মার্চে ইয়াহিয়ার ভাষনের জন্য অপেক্ষাকরেন। এবং পাকিস্তানী সৈন্যের গুলিতে কয়েকজন নিহত হলে ২৭ তারিখ হরতালের ঘোষণাই নির্দেশ করে, আওয়ামীলীগ নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতেইক্ষমতালাভের পথে হাটছে- দেশ ভাগ বা স্বাধীনতা পেতে নয়।



সন্ধ্যা ৬:০০ টা পরবর্তী:

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া করাচীর উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। তার এই ঢাকা ডিপারচার এর প্রতক্ষ্যদর্শী ছিলেন ২ জন বাঙালি সামরিক কর্মকর্তা।

ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে এটি প্রতক্ষ্য করেন লে. কর্নেল এ. আর চৌধুরী।

বিমানবন্দরে এটি প্রত্যক্ষ করেন এয়ারফোর্সের গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ.কে. খন্দকার।

সন্ধ্যা ৭:০০ টা 

২৯ মার্চ , নিউইয়র্ক টাইমস এর সিডনী শনবার্গের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, দেশজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় বাঙালি বিহারীর সংঘর্ষ হয় এবং শেখ মুজিব ১টিবিবৃতিতে এর নিন্দা জানান। 

রাত ৮:০০ – ৮:৩০:

এস.এ. করিমের ‘শেখ মুজিব’ ২০০৫, গ্রন্থের ১৯৫ পৃষ্ঠা থেকে জানা যায়, 

এরকম একটা অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে এইচ এম কামরুজ্জামান , ক্যাপ্টেন মনসুর আলী , তাজউদ্দীন আহমদ এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম শেখ মুজিবের সাথেদেখা করে মনোকষ্ট নিয়ে চলে যান। তাজউদ্দীনে আহমদ যে রেগে চলে যান তার প্রমাণ রয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর’ গ্রন্থের ২৮ পৃষ্ঠায় মঈদুল হাসানের ভাষ্যে।

শেখ ফজলুল হক মনি ২৫ শে মার্চ সন্ধ্যায়ই টুংগীপাড়া চলে যায় এবং শেখ কামাল রাত ৯টায় ধানমন্ডী ৩২নং ছেড়ে যায়।



প্রথমা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের গবেষণা কেন্দ্রের ‘মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর’ গ্রন্থের কথোপকথোন থেকে জানা যায়,

যাওয়ার আগে রাত আটটার দিকে তাজউদ্দিন আহমদ একটি টেপরেকর্ডার এবং ছোট্ট একটি খসড়া ঘোষণা শেখ মুজিবকে এগিয়ে দিয়ে সেটা তাকে পড়তেবলেন। তা ছিলো “বাংলার স্বাধীনতার ঘোষণা এবং লড়াইয়ের আহবান।” কিন্তু মুজিব তা প্রত্যাখ্যান করলেন। তার ভয় ছিলো, এ কাজ করলেপাকিস্তানীরা তার বিরুদ্ধে এটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় সাক্ষ্য হিসাবে ব্যবহার করবে। 

যুদ্ধকালে তাজউদ্দিন সাহেব তার বিশেষ সহকারী মঈদুল হাসানকে এ ঘটনাটি বলেছিলেন। ঐ ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শী আওয়ামীলীগের অন্যতম নেতা প্রচারসম্পাদক আবদুল মোমিনও পরবর্তীকালে একই ঘটনা মঈদুল হাসানকে নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে আরও গ্রহণযোগ্য তথ্য রয়েছে।



এবার আপনারা শক্ত হয়ে বসুন। এখন যে প্রমাণ তুলে ধরা হবে তাতে আপনার মেনে নিতে কষ্ট হবে যে, যাকে স্বাধীনতার স্থপতি বলা হয় সে মানুষটির মুখোশের আড়ালের ফানুসটি কত জঘণ্য। ২০১৪ সালের ১৮ এপ্রিল আওয়ামী বুদ্ধিজীবীদের উপস্থিতিতে শারমিন আহমদ রচিত‘তাজউদ্দীন আহমদ : নেতা ও পিতা’ গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়ে গেল। সেখানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. আনিসুজ্জামান, ড. কামালহোসেন, আমীর-উল ইসলাম, অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, আওয়ামীলীগের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি ও সাংসদ সিমিন হোসেনি রিমিসহ প্রমুখ আওয়ামী বুদ্ধিজীবীগণ। বইটির লেখিকা শারমিন আহমদ হলেন অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং যার ঘোষণায় আওয়ামীলীগ দাবি করেন শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষক এবং প্রথম রাষ্ট্রপতি সেই তাজউদ্দীন আহমদের জ্যেষ্ঠ কন্যা। মুজিব যে স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি তার সবচে গ্রহণযোগ্য প্রমাণ এবার আপনারা পাবেন তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা শারমিন আহমদের বই থেকে। আর যেহেতু উক্ত বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আনিসুজ্জামান, কামাল হোসেন ও আমীর আলীরা ছিলেন এবং তারা বইটিকে গ্রহণ করেছেন সেহেতু এই বইয়ের সব কথাকেই আওয়ামীলীগ সত্য হিসেবে মেনে নিয়েছেন। এবার দেখুন মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে তাজউদ্দীন কন্যা কী লিখেছেন …

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৫শে মার্চের ভয়াল কালোরাতে আব্বু গেলেন মুজিব কাকুকে নিতে। মুজিব কাকু আব্বুর সঙ্গে আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধপরিচালনা করবেন সেই ব্যাপারে আব্বু মুজিব কাকুর সাথে আলোচনা করেছিলেন। মুজিব কাকু সে ব্যাপারে সম্মতিও দিয়েছিলেন। সেই অনুযায়ীআত্মগোপনের জন্য পুরান ঢাকায় একটি বাসাও ঠিক করে রাখা হয়েছিল। অথচ শেষ মুহূর্তে মুজিব কাকু অনড় রয়ে গেলেন। তিনি আব্বুকে বললেন, বাড়িগিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকো, পরশু দিন (২৭শে মার্চ) হরতাল ডেকেছি। পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী আব্বু স্বাধীনতার ঘোষণা লিখে নিয়ে এসেছিলেন এবংটেপ রেকর্ডারও নিয়ে এসেছিলেন। টেপে বিবৃতি দিতে বা স্বাধীনতার ঘোষণায় স্বাক্ষর প্রদানে মুজিব কাকু অস্বীকৃতি জানান। কথা ছিল যে, মুজিব কাকুরস্বাক্ষরকৃত স্বাধীনতার ঘোষণা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে (বর্তমানে শেরাটন) অবস্থিত বিদেশী সাংবাদিকদের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে এবং তাঁরা গিয়েস্বাধীনতাযুদ্ধ পরিচালনা করবেন।



২৫শে মার্চের ভয়াল কালো রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তাজউদ্দিন আহমদের সাক্ষাতের বর্ণনা দিয়ে শারমিন আহমদ আরও লিখেছেন, মুজিবকাকুর তাৎক্ষণিক এই উক্তিতে (বাড়ি গিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকো প্রসঙ্গে) আব্বু বিস্ময় ও বেদনায় বিমূঢ় হয়ে পড়লেন। এদিকে বেগম মুজিব ওইশোবার ঘরেই সুটকেসে মুজিব কাকুর জামাকাপড় ভাঁজ করে রাখতে শুরু করলেন। ঢোলা পায়জামায় ফিতা ভরলেন। পাকিস্তানি সেনার হাতে মুজিব কাকুরস্বেচ্ছাবন্দি হওয়ার এই সব প্রস্তুতি দেখার পরও আব্বু হাল না ছেড়ে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বিভিন্ন ঐতিহাসিক উদাহরণ টেনে মুজিব কাকুকে বোঝাবার চেষ্টাকরলেন। তিনি কিংবদন্তি সমতুল্য বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উদাহরণ তুলে ধরলেন, যাঁরা আত্মগোপন করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন। কিন্তুমুজিব কাকু তাঁর এই সিদ্ধান্তে অনড় হয়ে রইলেন।

আব্বু বললেন, ‘আপনার অবর্তমানে দ্বিতীয় কে নেতৃত্ব দেবে এমন ঘোষণা তো আপনি দিয়ে যাননি। নেতার অনুপস্থিতিতে দ্বিতীয় ব্যক্তি কে হবে, দলকে তোতা জানানো হয়নি। ফলে দ্বিতীয় কারও নেতৃত্ব প্রদান দুরূহ হবে এবং মুক্তিযুদ্ধকে এক অনিশ্চিত ও জটিল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়া হবে।’ আব্বুর সেদিনেরএই উক্তিটি ছিল এক নির্মম সত্য ভবিষ্যদ্বাণী।

মুজিব কাকুকে স্বাধীনতার ঘোষণায় রাজি করাতে না পেরে রাত ৯টার দিকে আব্বু ঘরে ফিরলেন বিক্ষুব্ধ চিত্তে। আম্মাকে সব ঘটনা জানালেন। এর প্রমাণ আরও পাওয়া যায় ‘মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর’ গ্রন্থের মঈদুল হাসানের কথায়।

প্রসঙ্গত, তাজউদ্দিন আহমদের আরেক কন্যা সিমিন হোসেন রিমি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। তাজউদ্দিন আহমদের ছেলে সোহেল তাজ ২০০৯ সালেজানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। পরে অবশ্য তিনি পদত্যাগ করেন।

[শারমিন আহমদের ভিডিও বক্তব্য দেয়া হবে]

আর কী প্রমাণ দরকার প্রমাণ করতে যে মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। এমনকি স্বাধীনতা চানইনি? এবং তাজউদ্দীনের বাধ্য হয়ে ১০ এপ্রিলের মুজিব নগর সরকার বা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে মুজিবকে ঘোষক এবং রাষ্ট্রপতি করেছিলেন। তিনি এতোবার বলার পরও মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণাটি দিলেন না সেই তাজউদ্দীনই ভারতের সহযোগিতা পেতে মুজিবকে বাধ্য হয়ে স্বাধীনতার ঘোষক ও রাষ্ট্রপতি বানালেন। এই হলো সত্য ইতিহাস।

আপনারা এ বিষয়ে ডকুটার পরবর্তী অংশে আরও প্রমাণ পাবেন।



রাত ৮:৩০ – ৯:০০টা 



২০১০ সালের ২৫ মার্চ ইত্তেফাকে প্রকাশিত মঈনুল আলমের কলাম থেকে জানা যায়, 

শেখ মুজিবের সাথে দেখা করে ধানমন্ডী ৩২ নাম্বার থেকে বেরিয়ে আসেন ঢাকা ইত্তেফাকের সিনিয়র রিপোর্টার সৈয়দ শাহজাহান।



রাত ৯:০০- ৯:৩০ টা

১৯৭১ সালের ৩১ মার্চে প্রকাশিত ডেইলি টেলিগ্রাফের

অজয় রায়ের স্বাধীনতার ঘোষণা বিষয়ক আর্টিকল থেকে জানা যায় রাত ৯ :০০ টায় সাইমন ড্রিং শেখ মুজিবকে ফোন করেছিলেন। 



এই তথ্যটির ১ টি ক্লু পাওয়া যায় সাইমন ড্রিং এর ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ, ডেইলি টেলিগ্রাফে প্রকাশিত আরেকটি রিপোর্টে।



রাত ৯:১০:



ঠিক এই সময়েই প্রথমবারের মত গোলাগুলির শব্দ শুনেছেন বলে জানান রেহমান সোবহান।



রাত ১০:০০ – ১০:৩০ টা 

দৈনিক সমকালের ২০১০ সালের ২৫ মার্চ প্রকাশিত নঈম গহরের কলাম থেকে জানা যায়,

ঠিক এই সময়টাতেই শেখ মুজিবের সাথে দেখা করেন নঈম গহর। 

কেননা শেখ মুজিবের সাথে দেখা করে তিনি এম.আর. সিদ্দীকীর সাথে ফোনে কথা বলেন এবং কথা বলা শেষ হলে দেখেন রাত প্রায় ১১: ০০ বাজে।

নঈম গহরের কাছেও কোন স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি শেখ মুজিব।



রাত ১০:৩০: 



'মুক্তিযুদ্ধ কেন অনিবার্য ছিল', গ্রন্থের ৭৬-৭৭ পৃষ্ঠায় ডঃ কামাল হোসেন লিখেছেন, "এমনকি ২৫ মার্চ রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ আমি যখন শেখ মুজিবেরকাছ থেকে বিদায় নিচ্ছিলাম, তখনও শেখ মুজিব আমার কাছে জানতে চাইলেন, আমি ঐ টেলিফোন পেয়েছি কিনা। আমি তাঁকে জানালাম যে, আমি তাপাইনি। এ রাতেই পাকিস্তানী সৈন্যরা বাঙ্গালী জনগণের ওপর আক্রমন চালাল এবং গণহত্যা ও রক্তস্নান শুরু হল।

২০০৮ সালের বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত মোনায়েম সরকার সম্পাদিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব , জীবন ও রাজনীতি’, ১ম খন্ডের, ৪৪৭ পৃষ্ঠায়এ ঘটনার উল্লেখ রয়েছে।

ফোনটি আসার কথা ছিলো পাকিস্তান সেনাবাহিনীর লেঃ জেনাঃ পীরজাদার কাছ থেকে। কারন ইয়াহিয়া বলেছিলো তার ভাষন প্রচারের আগে পীরজাদারসাথে শেখ মুজিবের ১টি ছোট বৈঠক হবে।

সেই ফোনকল আর আসেনি কোনদিন। শেখ মুজিবও বুঝতে পারেন সব আশা শেষ। ইয়াহিয়া ধোঁকা দিয়েছে।

২৫ মার্চ শেখ মুজিবের আটকের পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত পাকিস্তান কাঠামোর আওতায় আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ন পন্থায় ক্ষমতা প্রাপ্তিই ছিলো আওয়ামীগেরএকমাত্র লক্ষ্য। ঐ রাতে ডঃ কামালের নিকট সেই কাঙ্ক্ষিত ফোনটি এলে হয়ত পাকিস্তানের ক্ষমতা পেতেন মুজিব, কিন্তু বাংলার মানুষ পেত না 'স্বাধীনতা'।

তার মানে রাত সাড়ে ১০ টাতেও ড. কামালের সাথে স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়ে কিছু বলেনি শেখ মুজিব।



জমিরুদ্দিন আহমেদ শেখ মুজিবের একান্ত সচিব ছিলেন। বিবিসি থেকে জমিরুদ্দিন আহমেদের একটা দীর্ঘ সাক্ষাৎকার প্রচার হয় ১৯৮৬ সালে। তার অনুলিপি ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতার ১৫ বছর’ শীর্ষে সে বছরেই পুস্তকাকারে প্রকাশ করে ঢাকার ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড। পঁচিশে মার্চ রাতের ঘটনাবলিসম্বন্ধে জমিরুদ্দিন আহমেদের বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলো :



‘এটা ২৫ মার্চের কথা। তখন তো ইয়াহিয়া খান ও তার সরকারি প্রতিনিধিদলের সাথে আওয়ামী লীগ নেতাদের কথাবার্তা চলছিল। আর আমাকে শেখমুজিব বিশেষ করে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাথে যোগাযোগ করার জন্য ব্যস্ত রেখেছিলেন এবং আমাদের একজন লিয়াজোঁছিলেন ভুট্টোর সাথে কথা বলার জন্য। তিনি গোলাম মোস্তাফা খার। আমি (সে দিন) যতবার গিয়েছি মোস্তাফা খার দৌড়ে এসে আমাকে অন্য দিকে সরিয়েনিয়ে গেছেন। আমি ঠিক ৪টার সময় গেলাম। তখনো আমরা জানি না যে আলোচনা ভেঙে গেছে। তখন আমাকে মোস্তাফা খার বললেন যে ‘ভুট্টো সাহেবএখন ঘুমুচ্ছেন, তুমি সন্ধ্যা ৮টায় আসো’। আমি যখন ৮টার সময় গেলাম তো উনি আমাকে সুইমিংপুলের দিকে নিয়ে যান। নিয়ে যেতে যেতে বলেন যে‘চিড়িয়া তো ভেগে গিয়েছে’। ‘চিড়িয়া বলতে তিনি ইয়াহিয়া খানকে বুঝিয়েছেন। আমি তাড়াতাড়ি ফিরে আসলাম। এসে মুজিব ভাইকে বললাম, ‘মুজিবভাই, প্রেসিডেন্ট তো চলে গেছেন।’ উনি এই কথাটা শুধু হাঁ করে শুনলেন এবং আর কিছু বললেন না আমাকে। আমাকে আবার বললেন, ‘তুমি আবার যাও,ভুট্টো কী বলে শুনে আসো।’ আমি আবার গেলাম। তখন রাত ১০টা বাজে। মোস্তাফা খার বললেন, ‘তোমার সাথে ভুট্টো সাহেব দেখা করতে চান না।’আবার আসলাম। খুব ভারাক্রান্ত মনে শেখ মুজিবের বাড়িতে আমি ঢুকলাম। তখন প্রায় ১০টা-সাড়ে ১০টা বাজে। আমি দেখলাম যে আমীর-উল ইসলামসাহেব বেরিয়ে যাচ্ছেন। আর ছিলেন আমাদের পুলিশের আইজি মহিউদ্দিন সাহেব। তিনি আমাকে দেখে বেরিয়ে গেলেন। ‘আমি দেখলাম যে মুজিব ভাইএকটা সোফার ওপর শুয়ে আছেন। আমার মনে হলো তার প্রায় পাঁচ পাউন্ড ওজন কমে গেছে। সকালে আমি যখন দেখি তখন থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ে।পাইপটা হাতে ছিল তার। আমি বললাম, ভুট্টো সাহেব তো দেখা করল না। উনি বললেন, ‘জানিরে, এরা আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করল।

বিষয়টা হচ্ছে. প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও জুলফিকার আলী ভুট্টোকে আওয়ামী লীগ নেতারা সর্বশেষ প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে পাকিস্তানকে একটা ফেডারেলরাষ্ট্রে পরিণত করা হোক। সে প্রস্তাব সম্বন্ধে জবাবের আশাতেই মুজিব তার একান্ত সচিবকে ২৫ মার্চ বিকেলে এবং রাতে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলেপাঠিয়েছিলেন। তাতে পরিষ্কার বোঝা যায় যে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি এবং দেয়ার ইচ্ছাও তার ছিল না। অর্থাৎ শেখ মুজিব যে ২৫ মার্চেও স্বাধীনতা না চেয়ে সমঝোতা করতে চেয়েছিলেন তার অকাট্য প্রমাণ মুজিবের তল্পিবাহক একান্ত সচিব জমিরুদ্দিনের নিজের ভাষায় শুনলেন।

জমিরুদ্দিন ‘অফ দ্য রেকর্ড’ সিরাজুর রহমানকে বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ কর্মীদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণের উল্লেখ করলেমুজিব বলেন যে তার সমর্থকদের ‘হটহেডরা’ মাঝে মধ্যে সামালের বাইরে চলে যায়। ইয়াহিয়া তখন মুজিবকে বলেছিলেন, আপনি কয়েক দিন একটু সরেদাঁড়ান, আমরা হটহেডদের একটু পিটিয়ে দিই।

হ্যা, ইয়াহিয়া পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীকে দিয়ে মুজিবের অনুমতিতে সেই পিটানো পিটিয়েছে ২৫ মার্চের অপারেশন সার্চলাইটের মধ্যদিয়ে।

‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব , জীবন ও রাজনীতি’, গ্রন্থের ৪৪৭-৪৮ পৃষ্ঠায় শেখ মুজিবের বাসভবনে সে সময় অবস্থানরত পারিবারিক কর্মচারী মমিনুল হকখোকার বর্ণনা থেকে জানা যায়, 

ইস্ট পাকিস্তান শিপিং কর্পোরেশনের এম.ডি. ক্যাপ্টেন রহমান এবং ২ জন এক্স নেভাল অফিসার কমান্ডার ফারুক এবং লে. মতিউর রহমান শেখ মুজিবেরসাথে দেখা করতে আসেন। 

এ সময় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ প্রধান আব্দুর রাজ্জাক এর ১টি ফোন আসে শেখ মুজিবের কাছে এবং "ইপিআর কে ডিসার্মড করা হয়েছে" শেখ মুজিব কেএতটুকু বলতে না বলতে লাইন কেটে যায়। 

রাত ১১:০০ টা

আর্চার ব্লাড এর ‘দ্য ক্রুয়েল বার্থ অব বাংলাদেশ’, ২০০৬ সালের ইউপিএল থেকে প্রকাশিত বইয়ের, ১৯৮ পৃষ্ঠা থেকে জানা যায়, 

আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ প্রধান আব্দুর রাজ্জাক শেখ মুজিবের সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁকে আত্মগোপন করার অনুরোধ জানালে, শেখ মুজিব তাকে জানানতিনি বাসা ছেড়ে যাবেন না , মরতে হলে সেখানেই মরবেন।



যদিও বাস্তবিকভাবে শেখ মুজিবের এই মুখের গর্জন শেষ পর্যন্ত একেবারেই বর্ষায়নি। 



সাইমন ড্রিং এর ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ , ডেইলি টেলিগ্রাফের রিপোর্টে পাওয়া যায় যে, রাত ১০:০০ – ১১:০০ টার মধ্যে শেখ মুজিবের সাথে তার ১জন রাজনৈতিক শিষ্যের ফোনে কথা হয়েছিলো। 







রাত ১১:০০ – ১১:৩০ টা



সিরাজুল আলম খান , আ.স.ম আব্দুর রব , শাহজাহান সিরাজ শেখ মুজিবের সাথে দেখা করে ধানমন্ডী ৩২নং ত্যাগ করেন।

শেখ মুজিবের মেয়ে শেখ হাসিনার স্বামী ওয়াজেদ মিয়ার বক্তব্য অনুসারে এটাই ছিলো শেখ মুজিবের সাথে কারো ঐ রাতে শেষ বৈঠক। 



এই সময়টাতে শেখ মুজিবের বাসায় একটি ফোন কল আসে যেটির বর্ণনা দিয়েছেন হাজী গোলাম মোরশেদ, ১৯৯০ সালের দৈনিক পূর্বদেশ এর স্বাধীনতাসংখ্যায়:

"রাত ১১ টায় বলধা গার্ডেন থেকে ১টা ফোন এলো। বললো : রেডিও মেসেজ প্রচার হয়ে গেছে।"



রাত ১১:৩০ টা

২০০০ সালে ইউপিএল থেকে প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ এর ৮৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে:

ওয়াজেদ মিয়ার বক্তব্য অনুসারে ঝন্টু (জিয়াউর রহমানের উপদেষ্টা জাকারিয়া চৌধুরীরা ভাই) ধানমন্ডী ৩২নং এ আসেন। শেখ মুজিব কে ঝন্টু অপারেশনসার্চলাইট এবং নির্বিচার গোলাগুলির খবর জানান।

ঝন্টুর মাধ্যমে পরিস্থিতি অবগত হয়ে শেখ মুজিব হাসিনা , রেহানা এবং জেলীকে ১টি ফ্ল্যাটে পাঠিয়ে দেন আত্নগোপন করার জন্য।

শেখ মুজিবের পরিবারের সদস্যদের আত্নগোপনের জন্য ঐ ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয়া হয়েছিলো। 

ওয়াজেদ মিয়া নিজেও ১১:৩০ এর পর ধানমন্ডী ৩২নং ত্যাগ করেন।



"সেদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শেখ মুজিবের বাসায় ছিলো মানুষের ঢল।কিন্তু ইয়াহিয়ার ঢাকাত্যাগের খবর প্রকাশ হয়ে পড়ায় এবং সেনাবাহিনীরমতিগতি দেখে সন্ধ্যার পর থেকেই ঢাকার সর্বত্র বাড়তে থাকে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। রাত যত গভীর হতে থাকে অপারেশন সার্চলাইটের নামে পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীর দ্বারা গণহত্যা, অগ্নিসংযোগসহ ভয়ঙ্কর বর্বরতা তত বাড়তে থাকে। এ পরিস্থিতিতে শেখ মুজিব এক বিবৃতিতে বিভিন্নস্থানেসেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে হরতাল আহ্বান করেন।" 



যার প্রমাণ রয়েছে, ২০০৮ সালে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত মোনায়েম সরকার সম্পাদিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, জীবন ও রাজনীতি’ ১মখন্ডের, ৪৪৭ পৃষ্ঠায় এবং

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের ইত্তেফাক ও 

পিপল'স ভিউ' পত্রিকার শিরোনামে।



রাত ১১. ৩০ থেকে ১.০০ টা পর্যন্ত সময়ের ঘটনা পরের অংশে রয়েছে।



রাত ১:০০: 



রাত ১ টায় অপারেশন সার্চলাইট শুরু করার পরিকল্পনা করে পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীর নরপশুরা। পরিকল্পনা মত পাক আর্মির ১ম দলটি ক্যান্টনমেন্টথেকে বেরিয়ে ফার্মগেটের নিকট ব্যারিকেডের সম্মুখীন হয়। 



১৯৭৭ সালে ইউপিএল থেকে প্রকাশিত সিদ্দিক সালিক এর ‘উইটনেস টু সারেন্ডার , গ্রন্থের ৭৩ পৃষ্ঠা থেকে এর ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। 



রাত ১:১০ – ১: ৩০: 

মুলধারা ৭১ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, সহকর্মীদের সকল অনুরোধ উপেক্ষা করে সম্পূর্ণ নিজের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শেখ মুজিব রয়ে গেলেন নিজ বাসভবনে। সেখান থেকে গ্রেফতার হলেন হত্যাযজ্ঞের প্রহরে"।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!