বিগত স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোর মতোই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হয়ে উঠতে পারে হেফাজতে ইসলাম।তবে চট্টগামে এর প্রভাব বেশী পড়বে বল সংশ্লিস্টরা মনে করছেন।
অনেকে মনে করছেন, সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচনের মতো এবার সিটি নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট প্রার্থীদের বিজয়ী করবে কওমি মাদরাসাভিত্তিক এ সংগঠন। তবে এবার প্রকাশ্যে কোনো প্রচারণায় নামছে না হেফাজত। যেমনটি নেমেছিল রাজশাহী, গাজীপুর, খুলনা, সিলেট সিটি ও উপজেলা নির্বাচনে।
সংগঠনটির সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে ওলামা ও মাদরাসার ছাত্ররা যার যার অবস্থান থেকে সিটি নির্বাচনের প্রচারাণায় অংশ নেবে। এক্ষেত্রে হেফাজতকে কাজে লাগাতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকেও যোগাযোগ করা হচ্ছে।
অবশ্য হেফাজত নেতারা দাবি,তারা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নেই। এমনকি তারা রাজনৈতিক দলের সমর্থকও নন। তাদের অবস্থান নাস্তিকদের বিরদ্ধে, ইসলামের পক্ষে। এক্ষেত্রে যে দল নাস্তিকদের সমর্থন করে,তারা তাদের বিরুদ্ধে। কে আওয়ামী লীগ আর কে বিএনপি সেটা মুখ্য নয়।
আরেকটি সূত্র জানিয়েছে,সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ‘কওমি মাদরাসাগুলো ভয়াবহ বিপজ্জনক’ মন্তব্যে হেফাজতের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে আওয়ামী লীগ নেতা টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী মহানবীকে (সা.) নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। পরে অবশ্য তাকে দল ও মন্ত্রিপরিষদ থেকে বহিষ্কার হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের এসব মন্তব্য বিএনপিকে হেফাজতের ভোট পকেটস্থ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ থেকে ইসলাম ও নবীকে (সা.) নিয়ে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে এমন অভিযোগ তুলে সক্রিয় হয় হেফাজতে ইসলাম। এরপর তারা সরকারকে আলটিমেটাম দেয় এবং ঢাকা অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করে এবং শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয়। এরপরই ২০১৩ সালের গত ৫ মে দিবাগত গভীর রাতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে তাদের হটিয়ে দেয়া হয়।
এ ঘটনার পর সংগঠনটির নেতাকর্মীরা সরকারের প্রতি নাখোশ। একারণে বর্তমান সরকারের অধীনে বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থীদের পরাজয়ে হেফাজতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে বলে মনে করা হয়।
নির্বাচন কমিশন গত ১৮ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৮ এপ্রিল ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে সব দল নিজ নিজ প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রামে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ঢাকা মহানগর কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে একাধিক বৈঠকে বসেন।
ওই বৈঠকে সিটি নির্বাচনে তাদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকগুলোতে কেন্দ্রীয় নেতারা চট্টগ্রাম ও ঢাকা মহানগর নেতাদের অভিমত নেন। এক্ষেত্রে মেয়র প্রার্থীদের এলাকায় অবস্থান এবং ইসলাম বিদ্বেষী কি না তারও ওপর জোর দেয়া হয়। তবে আনুষ্ঠিতভাবে ঘোষণা দিয়ে তারা নির্বাচনে মেয়র কিংবা কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে মাঠে নামবেন না।
কারণ, হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। কেউ আত্মগোপনে। তাছাড়া সরকারের তরফ থেকেও চাপের মুখে পড়তে হতে পারে। নেতাকর্মীরা স্থানীয়ভাবে মাঠে কাজ করে যাবে যার যার অবস্থান থেকে। এক্ষেত্রে মসজিদ, মাদরাসাকে কেন্দ্র করে সরাসরি আওয়ামী লীগ বিরোধী না হলেও ‘নাস্তিকদের’ পক্ষ না নিতে হেফাজত প্রচারণা চালাবে।
হেফাজতে ইসলাম একটি অরাজনৈতিক সংগঠন উল্লেখ করে ঢাকা মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বাংলামেইলকে বলেন, ‘হেফাজত ইসলাম একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। সাংগঠনিকভাবে কোনো নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া বা কোনো প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালানোর সুযোগ নেই। তবে ইসলামের বিরুদ্ধে নাস্তিকদের পক্ষে যারা অবস্থান করবে তাদেরকে এদেশের ওলামা-মাশায়েখ ধর্মপ্রাণ মোসলমানরা সকল নির্বাচনে প্রত্যাখ্যান করবে ইনশাল্লাহ।’
এ ব্যাপারে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম কোনো রাজনৈতিক দল নয়। এটা একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। হেফাজতে ইসলাম কোনো নির্বাচনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণায় নামার সুযোগ নেই। আমরা বিগত সিটি নির্বাচনেও যাইনি। তবে আমাদের সংগঠনের নেতাকর্মীরা স্থানীয়ভাবে কিংবা তাদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে নির্বাচনে কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দিতে পারে।
কারণ তারা এদেশের নাগরিক। নাগরিক হিসেবে তাদের অধিকার আছে। সেক্ষেত্রে তারা যেকোনও প্রার্থীকে সমর্থন কিংবা সহায়তা করতে পারেন। তারা বিবেচনা করবেন কে ভালো, কে মন্দ। এক্ষেত্রে তাদের ব্যক্তিগত বিষয়ে হেফাজতের আপত্তি থাকার কিছু নেই। তবে আমাদের অবস্থান নাস্তিকদের বিরুদ্ধে। ইসলামের পক্ষে। কেউ যদি নাস্তিকদের সমর্থন নেয়, তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে রয়েছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘এদেশের আলেম-ওলামা-মাশায়েখসহ ধর্মপ্রাণ মোসলমানরা নাস্তিকদের বিপক্ষে আছেন। মজলুমদের পক্ষে জালেমদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান। এদেশের মানুষ জালেমদের বিরুদ্ধে। যদি জালেমদের পক্ষে কোনো প্রার্থী থাকে সেক্ষেত্রে আমরা মজলুমদের পক্ষে।