DMCA.com Protection Status
title="৭

প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দীঃ বখাটে ছাত্রলীগ নেতারা তরুনীদের নগ্ন করে উল্লাস করছিলো।

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ nandiবর্ষবরণের অনুষ্ঠানে পুলিশের সামনে নারীদের যৌন নির্যাতনের ন্যক্কারজনক ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি লিটন নন্দী।

 

তিনি ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং নির্যাতিতা নারীকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়েছিলেন। লিটন বলেন, এ ঘটনার ছবি রয়েছে ঢাবি সংশ্লিষ্ট একজনের কাছে। কিন্তু ঢাবি প্রশাসন নিজেদের ভাবমূর্তি রক্ষা করার জন্য ওই ছবিটি প্রকাশ না করতে তাকে চাপ দিচ্ছে। ওই ছবিটি প্রকাশ হলে ঘটনার অনেক কিছুই প্রমাণিত হবে।



লিটন নন্দী জানান, যৌন হয়রানির ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তারের চেয়ে নিজেদের ভাবমূর্তি রক্ষায় ব্যস্ত আছে পুলিশ ও ঢাবি প্রশাসন। যে কারণে ঘটনার তিন দিন অতিবাহিত হলেও বখাটেদের কাউকে আটক করা যায়নি।

 

তিনি বলেন, ঢাবি কর্তৃপক্ষের ভাব এ রকম যে এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। ঢাবির প্রক্টর ড. এ এম আমজাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তিনি বলেন, প্রক্টর বিভিন্ন মাধ্যমে বলেছেন যৌন হয়রানির ঘটনা শুধু লিটনই জানে আর কেউ জানে না।

তিনি বলেন, ঘটনার সময় আমি তাকে ফোনে জানিয়েছিলাম। তিনি বলেছেন,  এতে আমার কি করার আছে। তিনি তখন আমাকে বলেছেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঢাবি এলাকার দুই নম্বর গেইটতো বন্ধ থাকার কথা। এ ছাড়া ঢাবি এলাকায়তো গাড়ি চলাচল করার কথা না। প্রক্টর আমার কাছে জানতে চেয়েছেন, গাড়ি কি চলছে ওই এলাকায়।

 

লিটন নন্দী বলেন, বর্ষবরণ উপলক্ষে ঢাবি এলাকায় গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও ওই দিন গাড়ি চলাচল করেছে। উদ্যানের গেইট খোলা ছিলো। কিন্তু অবাক ব্যাপার হলো প্রক্টর তা জানেন না। 



প্রক্টরের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ করে লিটন নন্দী বলেন, আমার হাত ভেঙে যাওয়ার পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাই আমি। তখন ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবির সাধারণ সম্পাদক তুহিন কান্তি দাশসহ কয়েকজন প্রক্টরের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তারা দেখতে পান প্রক্টর দাবা খেলছেন।

 

লিটন বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এতো বড় একটা ন্যক্কারজনক ঘটনা জানার পরও তিনি কোন ভূমিকা রাখেননি। বরং অফিসে বসে তিনি দাবা খেলছিলেন। এর চেয়ে নির্মম পরিহাস কি হতে পারে।

 

পুলিশ সম্পর্কে তিনি বলেন, ঘটনার সময় মিলন চত্বরে, ঘটনাস্থল থেকে ২৫ গজ দূরে ডাচ বাংলা ব্যাংকের বুথের পাশে অনেক পুলিশ ছিলো। ঘটনাস্থলে দুইজন পুলিশ ছিলো। তিনি ও তার সঙ্গী অমিত এবং সুজনসেন নারীদের কান্না শুনে এগিয়ে যান।

 

লিটন বলেন, স্যাটেলাইট চ্যানেলে হায়েনাদের তাণ্ডব দেখেছি। তারা কিভাবে শিকার করে সেই দৃশ্য দেখেছি। ঠিক হায়েনাদের মতোই নারীদের বস্ত্রহরণ ও শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে নির্যাতন করছিলো তারা। বখাটেদের হাত থেকে তাদের রক্ষা করার আপ্রাণ চেষ্টা করেন তখন লিটন, সুজন ও অমিত।

 

লিটন বলেন, আমি চিৎকার করে পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছি। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থাকা দুই পুলিশ সদস্যকে বারবার অনুনয় করেছেন অমিত। কিন্তু তারা প্রথমে নীরব ছিলো। ঘটনার একপর্যায়ে তারা দুইজন লাঠি চার্জ করলেও পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি।

 

পাশে মিলন চত্বরে থাকা পুলিশের কাছে এ বিষয়ে সহযোগিতা চাইলে তারা বলে স্পট ভাগ করা। ওই স্পটের দায়িত্ব তাদের না। ওই সময়েই ফোনে ঢাবি প্রক্টরের কাছে সহযোগিতা চেয়েছিলেন লিটন। লিটন বলেন, একটা কিশোরী মেয়েকে যৌন নির্যাতন করে অজ্ঞান করে ফেলেছে বখাটেরা।

 

তখন বখাটেদের কাছে হাত জোড় করে বলেছেন ভাই মেয়েটাকে মারবেন না। ওই মেয়েটি মারা যাবে। তাকে ছেড়ে দিন। কিন্তু তাদের কথা শুনেনি বখাটেরা। একপর্যায়ে জোর করেই সরিয়ে দিয়ে ওই কিশোরীকে উদ্ধার করেন তারা। ওই কিশোরীর সঙ্গে এক তরুণ ছিলেন। তাকেও বখাটেরা মারধর করেছে বলে জানান লিটন।

 

লিটন জানান, ১০-১২ বছরের একটি মেয়েকে তার মায়ের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েও নির্যাতন করা হয়েছে। এমনকি পাঁচ-ছয় বছরের সন্তান নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে এসেছিলেন এক নারী। সন্তানকে কেড়ে নিয়ে শাড়ি খুলে যখন তাকে নির্যাতন করা হচ্ছিল। তখন তিনি চিৎকার করে বলছিলেন, আমার বাচ্চাকে দিন। আমার বাচ্চার সামনে আমাকে লাঞ্ছিত করবেন না। ওই নারীকেও তারা উদ্ধার করেন। ওই সন্তানসহ ওই নারী তার সঙ্গীকে রিকশায় তোলে দিলে তারা প্রেস ক্লাবের দিকে যান।

এভাবে একের পর এক নারীদের নির্যাতন করা হচ্ছিল। লিটন বলেন, যেন যৌন নির্যাতনের মহোৎসবে পরিণত হয়েছিল ঢাবির ওই এলাকার বর্ষবরণ অনুষ্ঠান।

 

তিনি বলেন, শাড়ি-ব্লাউজ খুলে এক তরুণীকে নগ্ন করা হয়েছিল। বখাটেরা তাকে ঘিরে উল্লাস করছিল। যে যেভাবে পারে যৌন নির্যাতন করছিল তাকে। তখন তার সঙ্গী যুবক তাকে জড়িয়ে ধরে রক্ষার চেষ্টা করছিল। ওই সময়ে নিজের পাঞ্জাবি খুলে ওই তরুণীকে পরিয়ে দেন তিনি। পরে রিকশায় করে তারা ধানমন্ডির শঙ্কর এলাকায় যান।

 

লিটন অভিযোগ করে বলেন, আমরা অন্তত পাঁচজন নির্যাতনকারীকে ধরে এসআই আশরাফের কাছে দিয়েছিলাম। কিন্তু ৭টার পর তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের ছেড়ে দিয়েছেন।

 



ঘটনার শুরু সম্পর্কে লিটন নন্দী জানান, তারা মেয়র প্রার্থী কাফি রতনের পক্ষে লিফলেট বিতরণ করে শাহবাগ থেকে রাজু ভাস্কর্যের দিকে যাচ্ছিলেন। রাজু ভাস্কর্য এলাকায় পৌঁছলে নারীদের আর্তনাদ কানে আসে। আর্তনাদ শুনে ছাত্র ইউনিয়নের মহানগর নেতা সুজনসেন, রমনা থানার সাধারণ সম্পাদক অমিত দে ও তিনি এগিয়ে যান। লিটন বলেন, বখাটেরা তিনটি গ্রুপে ছিলো।

 

প্রতিটি গ্রুপ গোল হয়ে নারীদের যৌন নির্যাতন করছিল। তারা অনেকেই বাঁশি বাজাচ্ছিল। বাঁশির শব্দে নারীদের চিৎকার প্রথমে বুঝা যায়নি। কৌতূহলবশত এগিয়ে গেলে নারী নির্যাতনের দৃশ্য চোখে পড়ে। তারপরই নির্যাতিতাদের উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন তারা। একপর্যায়ে সংগঠনের আরও কর্মী এবং আশপাশের কয়েকজন তাদের সঙ্গে যোগ দেন।

 

লিটন বলেন, সাধারণ মানুষ কার সাহায্য চাইবে বুঝতে পারেনি। কারণ, উপস্থিত প্রায় সবাইকে তখন নির্যাতনকারী মনে হচ্ছিল। লিটন বলেন, উদ্ধার করার একপর্যায়ে তারা ক্লান্ত হয়ে যান। এ সময় তার হাতে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন। হাতটা ফুলে যায়। একই অবস্থা হয় অমিত দে’র। সময় তখন প্রায় ৭টা। তখন পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!