DMCA.com Protection Status
title="৭

নববর্ষে গন যৌন নিপিড়নঃ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নিষেধাজ্ঞায় নারী কর্মীদের বিক্ষোভ কমর্সূচি বাতিল

du4পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসিতে যৌন হয়রানির ঘটনায় আয়োজিত প্রতিবাদ কর্মসূচিতে দলের নারী কর্মীদের অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। অজ্ঞাত কারণে বর্ষবরণে যৌন হয়রানির প্রতিবাদে ঢাবি ছাত্রলীগের আহ্বান করা গত শনিবারের পূর্বনির্ধারিত প্রতিবাদ কর্মসূচিও বাতিল করা হয়।

 

গত শুক্রবার বিকালে সাধারণ ছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে একটি প্রতিবাদ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নারী নেতাকর্মীরা। মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে ক্যাম্পাসের ছাত্রীদের এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছিলেন ঢাবির বিভিন্ন ছাত্রী হলের সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদকরা। বিষয়টি নিয়ে সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেন ছাত্রী হলগুলোর নেত্রীরা। নেতাদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার পর তারা শনিবারের প্রতিবাদ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

 

সূত্র জানায়, শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম ছাত্রলীগের নেত্রীদের ডেকে প্রতিবাদ কর্মসূচি আয়োজন করায় 'তীব্র ভর্ৎসনা' করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাবি ছাত্রলীগের এক নেতা জানান, 'আমাদের প্রোগ্রাম না করার জন্য বলা হয়েছে। ফলে আমরা কর্মসূচি বাতিল করেছি। সিনিয়রদের বক্তব্য মেনে নেওয়া ছাড়া আমাদের কিছু করার নেই।'

 

প্রসঙ্গত, পহেলা বৈশাখে বেশ কয়েকজন নারী যৌন হয়রানির শিকার হন। খবরে প্রকাশ হয়, এক নারী প্রায় অর্ধনগ্ন অবস্থায় দৌঁড়ে ঢুকে পড়েন রোকেয়া হলে। এলোমেলো শাড়ি আর ছেঁড়া ব্লাউজে ওই নারীর চোখেমুখে ভয়-আতঙ্কের ছাপ ছিল স্পষ্ট। টিএসসি'র রাজু ভাস্কর্যের কাছে কিছু যুবকের হাতে চরমভাবে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন তিনি। পরে ওই হলের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইশাত কাশফিয়া ইরা তাকে পুনরায় শাড়ি পরিয়ে দেন। ছাত্রলীগের বাতিল করা ওই প্রতিবাদ কর্মসূচির অন্যতম আয়োজক ছিলেন ইশাত কাশফিয়া ইরা।

 

রবিবার তিনি বলেন, বড় প্রোগ্রামগুলোয় টিএসসি এলাকায় এ ধরনের যৌন নিপীড়ন সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা কেন প্রতিবাদ কর্মসূচি বাতিল করেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ইরা বলেন, 'আমাদের অবশ্যই সিনিয়র নেতাদের নির্দেশ পালন করতে হয়। আমাদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।' এর বেশি কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের এই সাধারণ সম্পাদক।

 

শনিবারের প্রতিবাদ কর্মসূচি বাতিলের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান দাবি করেন, তাদের কখনও এ ধরনের কোনও কর্মসূচির পরিকল্পনা ছিল না। মেহেদী হাসানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ওমর শরীফ বলেন, এটা (নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ) ছাত্রলীগের দায়িত্ব নয়। একই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে ছাত্রলীগ নেত্রীদের নিবৃত্ত করার অভিযোগ অস্বীকার করেন।

 

তিনি বলেন, 'আমি এ সম্পর্কে কিছু জানি না। আমরা আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত আছি।' এদিকে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন নববর্ষের দিন থেকে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে সারাদেশে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়।

 

এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এ ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন। কর্মসূচি পালন করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলও। তবে সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের পক্ষে সামাজিক ও রাজনৈতিক নানা বিষয়ে বিক্ষোভ বা প্রতিবাদ কর্মসূচি নতুন কিছু নয়। এ কারণে অনেকে পহেলা বৈশাখের ওই ঘটনায় ছাত্রলীগের নীরবতাকে 'অদ্ভূত' বলছেন।

 

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধাপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের প্রতিবাদ কর্মসূচির ঘণ্টা খানেকের মধ্যে ছাত্রলীগ আনুষ্ঠানিকভাবে এর প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছিল। চলতি বছরের ৮ এপ্রিল যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের প্রতিবাদে জামায়াতের হরতালের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ প্রদর্শনও করেছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!