ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনিচ্ছার কারনে চরম বিপাকে পড়ে বোল পাল্টাতে বাধ্য হলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ।
বিপাকে পড়ে তিনি শুধু বোলই পাল্টানি সিটি নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন সংক্রান্ত চিঠিটি সশস্ত্র বিভাগে পাঠানোর পর ভাষা পরিবর্তন করে আবার পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরিবর্তিত চিঠিতে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনী সেনানিবাসে রির্জাভ ফোর্স হিসেবে অবস্থান করবে, প্রয়োজন হলে রিটার্নিং অফিসারের অনুরোধে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।
এদিকে কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করতে চাইলেই সরাসরি নির্বাচন কমিশন তা করতে পারবে না। আইনী বাধ্যবাধকতার কারণে তারা সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছেও সরাসরি সেনা সদস্য চাইতে পারবেন না। তাদেরকে সেনা মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিলে অবশ্যই এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হবে। তবে এটা তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দিবেন এমন নয়। প্রধানমন্ত্রী পদে থাকলেও তিনি দুই ভাবে এই বিষয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
এক হচ্ছে তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী, অন্যদিকে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগও তার হাতে ন্যস্ত। সেই হিসাবে তিন সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করতে হলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রধান হিসাবে শেখ হাসিনার অনুমোদনের প্রয়োজন হবে-এই কথা বলেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন।
তিনি বলেন, এর আগের সরকারের আমলে নারায়ণগঞ্জের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর স্থানীয় সরকার নির্বাচন সংক্রান্ত আইন ও আরপিও সংশোধন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞা থেকে সেনাবাহিনী শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। ওই শব্দটি বাদ দেওয়ার কারণে নির্বাচনে সরাসরি সেনাবাহিনী মোতায়েন করার জন্য সরাসরি চাইবার যে এখতিয়ার ছিল সেই পথ ও সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই শব্দটি তুলে নেওয়ার কারণে এখনকার নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সেনাবাহিনীর কাছে সরাসরি নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের জন্য তারা সদস্য চাইতে পারবে না।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন চাইলে নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবেন সেটাই নিয়ম রয়েছে। সেনাবাহিনী যদি কমিশন সরকারের কাছে চায় তাহলেও সেটা দিতে হবে। কিন্তু কথা হলো সরকার সেনাবাহিনী মোতায়েনের আগ্রহী নয়। সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ইতোমধ্যে বলেছেন, সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন হবে না। তারা যখন এই কথা বলেন, সেটা প্রচারিত হয় তখন কমিশনের আর বুঝতে বাকি থাকে না। সরকার কি চাইছে। আর সেই কারণেই কমিশন সেনা মোতায়েন নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। আরো সময় নিচ্ছে।
তিনি তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, আমরা যখন নারায়ণগঞ্জে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন করেছিলাম ওই নির্বাচনে আমরা অবস্থা বিবেচনা করে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সেনাবাহিনীর সদস্যদের সরাসরি চেয়েছিলাম। আমাদের সুবিধা ছিল আমাদেরকে সরকারের কাছে সেটা চাইতে হয়নি। কারণ ওই সময়ে স্থানীয় নির্বাচন সংক্রান্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনা বাহিনী শব্দটি ছিল। সেই জন্য আমাদের কোন বাধা ছিল না। আমরা নির্বাচনের বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই সেনা মোতায়েনের চেষ্টা করছিলাম। সব রকম চেষ্টা করার পরও তা সম্ভব না হওয়ায় তিনদিন আগে আরো জোরালোভাবে চেষ্টা করি। কিন্তু সফল হতে পারিনি। একদিন আগে আমাদের জানানো হলো সেনা মোতায়েন করার পরিবর্তে আমাদেরকে এক হাজার র্যাব সদস্য দেওয়া হচ্ছে। আমরা ওই সময়ে চেয়েছিলাম দুই ব্যাটেলিয়ন সেনা সদস্য । তা না দিয়ে র্যাব দেওয়ায় পরে তাদেরকে দিয়ে আমাদেরকে কাজ সম্পন্ন করতে হয়েছে। এবারও এই ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে কিনা সেটা বলতে পারছি না।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে আমরা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ছিলাম। কারণ ওই সময়ের অবস্থা সবার মনে আছে। এই কারণে আমরা রিটানির্ং অফিসারের সঙ্গে ২৪ ঘন্টাতো যোগাযোগ রাখতামই। এর পাশাপাশি ব্যবস্থা নিতাম। আমরা ভোটারদের কাছে চলে যেতাম বাস্তব অবস্থা জানার জন্য। সেখানে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক কেমন, তারা কি চায়, কি করলে ভোট সুষ্ঠু হবে, তারা কি চাইছে। সব মিলে মাঠ থেকে নিজেরাও তথ্য সংগ্রহ করেছিলাম। আমি দুইবার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার দুই বার ও আরেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসেনও দুই বার নারায়ণগঞ্জে যাই। সেখানে গিয়ে আমরা সরেজমিনে অবস্থা দেখে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেই। তিনি বলেন, আইনী জটিলতা থাকায় ও সরকারের কাছে সেনা বাহিনী নির্বাচনে মোতায়েনের জন্য চাওয়ার পর না পেলে পরে একটা সমসা হবে।
কারণ নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনী না চাওয়ার পেছনে কিংবা এই ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত না নিতে পারার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। সেটা আমি বলতে পারবো না। তবে যেখানে সরকারের মন্ত্রীরা সেনা মোতায়েনের বিপক্ষে সেখানে কমিশন পক্ষে অবস্থান নিবে কিনা, কমিশন চাইলেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ সে উদ্যোগ নিবে কিনা সেটা দেখতে হবে। এই জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনে সেনা মোতায়েন এখনও পর্যন্ত করবে কি করবে না সেই বিষয়ে কমিশন এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। রোববার হওয়ার কথা ছিল।
তিনি আরও বলেন,পরে দেখা এই জন্য তারা আরো সময় নিতে চাইছেন। তবে আমি মনে করি সময় এখনও শেষ হয়ে যায়নি। সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য এখনও সময় অাছে। বিএনপি, শত নাগরিক কমিটি, আদর্শ ঢাকা আন্দোলন ও অন্যান্য যারা সেনা মোতায়েনের পক্ষে রয়েছে তাদের বিষয়টিও কমিশনকে বিবেচনা করতে হবে। তারা সিদ্ধান্ত নিতে না পারার কারণ হতে পারে যে, তারা পরিস্থিতি আরো দেখতে চাইছে কি হয়।