ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির দুই বছর পূর্ণ হল আজ শুক্রবার। বিশ্বের ইতিহাসে ভয়াবহ এই শিল্প বিপর্যয়ে নিভে গেছে এক হাজার ১ শত ৩৭টি তাজা প্রাণ। মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে আরো দুই হাজার চারশ’ পোশাক শ্রমিক। লাশের গন্ধে ভারী হয়ে উঠেছিল গোটা সাভার।
ভয়স্কর এক ট্র্যাজেডি ছিল রানা প্লাজা, যা গোটা বিশ্বকেই কাঁপিয়ে দিয়েছিল। ধসে পড়ার আগের দিনেই ধরা পড়েছিল বিশাল এক ফাটল। পরের দিন কাজে যোগ দিতে গিয়েও থেমে যায় শ্রমিকরা। শেষ রক্ষা হয়নি তারপরও। জোর করেই তাদের নিয়ে যাওয়া হয় মৃত্যুকুপে। এরপরই ঘটে স্মরণ কালের ভয়াবহ এই শিল্প বিপর্যয়।
অথচ শুধুমাত্র শাসকদল আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন যুবলীগের নেতা হওয়ার কারনে এই ভবন মালিক কুখ্যাত রানার কিছুই হোলো না এবং হেও ন কখনও।
বামের ছবিতে তৎকালীন সাভারের আওয়ামী এমপি মুরাদ জং এর সাথে অতি ঘনিষ্ট অবস্থায় রানা।
সে এক বিভীষিকার গল্প। নয়তলা ভবনটি ধসে মুহূর্তেই দুই তলার সমান হয়ে যায়। ইট কংক্রিটে চাপা পড়ে হাজারো তাজা মানুষ। বাঁচার জন্য আকুতি ছড়িয়ে পড়ে দেয়াালের কোণে কোণে। কারো মৃত্যু হয়েছে নিমিষেই, কেউ মারা গেছেন অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে।
ধসে পড়ার পরপরই ঘটনাস্থলে ছুটে যায় নিবেদিত মানুষ। প্রাণপণ চেষ্টা শুরু হয় জীবন বাঁচানোর। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যরাও নামেন উদ্ধার তৎপরতায়। টানা বিশ দিন চলে উদ্ধার অভিযান। প্রাণে বেঁচে থাকার সম্ভবনা যখন ক্ষীণ হয়ে যায়, তখনি শুরু করা হয় যান্ত্রিক উদ্ধার অভিযান।
ঘটনার দুই বছর পরেও সেই বিভীষিকার কথা মনে পড়লেই আঁতকে ওঠেন আহত শ্রমিকরা। এদের একজন বরিশালের তানিয়া। বর্তমানে আজিম গ্রুপের সুইং সেকশনে কর্মী তিনি। অন্ধকার ধ্বংসস্তুপেই টানা চার দিন আটকে থেকেছেন হতভাগ্য এই পোশাক শ্রমিক। দুর্বিষহ সেই স্মৃতি এখনো তাড়া করে তানিয়াকে।
তানিয়া বলেন, ‘মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রানা প্লাজার সেই স্মৃতি আমি ভুলতে পারব না। টানা এক বছর আট মাস আমি কোনো কাজ করার সাহস পাইনি। বারবার কাজে ফিরতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মায়ের কষ্ট দেখে আবার পোশাক কারখানায় কাজ নিয়েছি। সকালে কাজে যোগ দেওয়ার জন্য কারখানার সিড়িতে পাঁ ফেলতেই সেসব দিনের কথা মনে ভেসে ওঠে।’
রানা প্লাজা ধসে শ্রমিকদের প্রাণহানির পাশাপাশি বাংলাদেশের পোশাক শিল্পেও নীতিবাচক প্রভাব পড়ে। বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে শ্রমিকদের দুর্বিষহ জীবনযাপনের কাহিনী। ফল হিসেবে অনেক বিদেশি ক্রেতাই অসন্তুষ্ট হন পোশাক মালিকদের ওপড়। আমেরিকার মত বড় বাজারে পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা হারায় বাংলাদেশ।
রানা প্লাজার ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কর্মক্ষেত্রে পোশাক শ্রমিকদের নিরাপত্তা বাড়ানোর ব্যপারে সরকার ও পোশাক মালিকদের চাপ দিতে থাকে বিদেশি ক্রেতারা। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের এই খাতটিকে বাঁচাতে বিভিন্ন পরিকল্পনাও নেয় সরকার। তবে দুই বছর যেতে না যেতেই রানা প্লাজার সেই স্মৃতি ভুলতে বসেছেন সরকার ও পোশাক মালিকরা। কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নিয়ে যুক্তরাষ্টসহ বিদেশি ক্রেতাদের অসন্তোষ রয়ে গেছে এখনো।