দেশে জঙ্গীবাদ যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন ধরনের জঙ্গীবাদী কর্মকান্ড যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে দিকে সকলে লক্ষ্য রাখবেন। জঙ্গীবাদকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করতে হবে। এটি নির্মূলে সব সময় ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে হবে।
বৃহস্পতিবার সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে এসে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন। বর্তমান সরকারের আমলে প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয়বারের মতো এ মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ জঙ্গীবাদ মোকাবেলা। এই জঙ্গীবাদ দুই ধরনের হয়ে গেছে। একটা পেশাগত জঙ্গীবাদ, আরেকটা হলো বিএনপি জামায়াত জোটের বিশ দলীয় জঙ্গীবাদ। বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াও সন্ত্রাসী কর্মকা- আমাদের মোকাবেলা করতে হবে। অবশ্য আপনারা এসব মোকাবেলায় অত্যন্ত সফল হয়েছেন। দীর্ঘদিন আন্দোলন করেও তারা কিছুই করতে পারেনি। চরমভাবে তারা ব্যর্থ হয়েছে।
হরতাল-অবরোধের সহিংসতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেখানে যারা এই ধরনের কাজের সঙ্গে লিপ্ত হবে, তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির বিধান নিশ্চিত করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ আর এ ধরনের কাজ করার সাহস না পায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইভটিজিং ও এসিড সন্ত্রাস যখন শুরু হয় তখন কঠোর শাস্তি দিয়ে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। ঠিক একইভাবে অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে নইলে এ সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি এই আন্দোলন জীবনেও দেখিনি। যিনি আন্দোলন করবেন তিনি ঘরের মধ্যে নিজেকে অবরুদ্ধ করে রেখে জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ খুন করা, মানুষকে পুড়িয়ে মারা এটা কখনও দেখিনি। তিনি বলেন, কোন রাজনৈতিক দল জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারলে এর চেয়ে জঘন্য ও গর্হিত কাজ আর কিছুই হতে পারে না। বিএনপি অবরোধ প্রত্যাহার করতে লজ্জা পাচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবরোধ তারা এখনও প্রত্যাহারই করেননি। যদিও এর কার্যকারিতা নেই। হয়তো এখন অবরোধ প্রত্যাহার করতে লজ্জা পাচ্ছে। প্রত্যাহার করছি এ কথাটা বলবেই বা কি করে। এটা আছে না নাই তাই কেউ জানে না।
মাদক, চোরাচালান, শিশু ও নারী পাচার বন্ধে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা। তথ্য আদান-প্রদান করা, সহযোগিতা নেয়ার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে মানুষকে সচেতন করার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। চোরাচালান রোধে জাতীয় কমিটিকে চোরাচালান রোধে আরও সচেতন হতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের বিচারটা যেন দ্রুত হয় এবং শাস্তি যাতে হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কল্যাণ ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের নেয়া বিভিন্ন কর্মকান্ডের কথা তুলে ধরেন।
সীমান্ত বিল পাস ‘কূটনৈতিক সাফল্য’ ॥ ভারতের রাজ্যসভায় সীমান্ত বিল পাস হওয়ার ঘটনাকে ‘সরকারের কূটনৈতিক সাফল্য’ অভিহিত করে এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত সবাইকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এটি এ সরকারের কূটনৈতিক সাফল্য। বুধবার ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় দেশটির সংবিধান সংশোধনের এই বিল পাস হওয়ার মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যকার সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের পথ প্রশস্ত হয়। এ চুক্তির আওতায় ভারত ও বাংলাদেশের ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় হওয়ার কথা। রাজ্যসভায় পাস হওয়া বিলটি এখন লোকসভায় যাবে। ক্ষমতাসীন বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকসভায় বিলটি পাস হলে দুর্ভোগের অবসান ঘটবে বলে আশায় আছেন ছিটমহলের বাসিন্দারা।
বাংলাদেশী ছিটমহলগুলোতে জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ১৪ হাজার। আর ভারতীয় ছিটমহলগুলোর জনসংখ্যা ৩৭ হাজারের মতো। সীমান্ত চুক্তির মধ্যে দিয়ে যে ভূখ- পাওয়া যাবে তার নিরাপত্তা নিশ্চিতে মতবিনিময়ে উপস্থিত বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের ওপর বড় দায়িত্ব চলে আসছে।
রাজ্যসভায় পাস হওয়া বিলের সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সংবিধানে প্রথম সংশোধন করে কিন্তু এই বিল আনা হয়েছিল এই চুক্তির জন্য। সে সময় অনেক কথা শুনতে হয়েছে। দেশ বেচার চুক্তি, অমুক-সমুক, নানা কথা। তখন কিভাবে অপপ্রচার করা হয়েছিল অনেকে তা জানেই না। অনেকের জন্মই হয়নি। অনেকে ছোট ছিল। বিলটি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জন্য এটা প্রয়োজন ছিল।
তিনি বলেন, পঁচাত্তর পরবর্তী কোন সরকারই অমীমাংসিত এই বিষয়টির সমাধানে উদ্যোগ নেয়নি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন দেশভাগ হলো সাতচল্লিশ সালে, তখন থেকে ওই সমস্যার সমাধান হয় নাই। স্বাধীনতা অর্জনের পর বঙ্গবন্ধু উদ্যোগ নিলেন। তিনি কাজ করে গেলেন। কিন্তু, পঁচাত্তরের পর থেকে কোন সরকার কোন রকম উদ্যোগই নেয়নি- এটা হলো বাস্তবতা। ল্যান্ড বাউন্ডারি আর সমুদ্রসীমা নিয়ে কোন সরকার কোন উদ্যোগ নেয়নি। শুধু গালি দিয়ে গেছে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য কেউ কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
এ পর্যায়ে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ফেনীতে সাড়ে ছয় কিলোমিটার সীমান্ত চিহ্নিতকরণের বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরের কথা স্মরণ করেন তিনি। ২০০৯-এ ক্ষমতায় আসার পর সেটা সমাধান হয়ে গেল। আমাদের ওই জায়গাটা আমরা পেয়ে গেলাম। ওটা ফেনীতে। বিএনপি নেত্রীর নির্বাচনী এলাকার বেশ কিছু জায়গা আমরা ভারতের কাছ থেকে আদায় করে দিলাম।