ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ভারতের লোকসভায় ‘সীমান্ত চুক্তি’ পাস হওয়ায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন খালেদা জিয়া্। শনিবার রাতে গুলশান কাযার্লয়ে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি এই ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, ‘‘৪০ বছর ধরে ঝুলে থাকা পর সীমান্ত চুক্তি ভারতের লোকসভায় পাস হয়েছে। এজন্য মোদী সরকারকে আমি ধন্যবাদ দেবো। মোদী সাহেব বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব সম্পর্ক তৈরি করতে তিনি এটি করেছেন।’’
‘‘ তিনি (ভারতের প্রধানম্ন্ত্রী) আরো বলেছেন, আমি প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই। কোনো দলের সঙ্গে নয়, জনগনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।বিএনপিরও এটাই চায়।’’
খালেদা জিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘‘ আওয়ামী লীগ কংগ্রেস সরকারের সঙ্গে অনেক দালালী করেছে। তাদের বলব, কংগ্রেসের দালালী করেছেন। কংগ্রেসের কাছ থেকে কিছুই আনতে পারেনি, শুধু দিয়েছেন।’’
রাতে গুলশান কাযার্লয়ে ঢাকা কর আইনজীবী সমিতির নবনিবার্চিত সভাপতি অ্যাডভোকেট মাজম আলী খান ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাফর উল্লাহ‘র নেতৃত্বে ১৭ জন নিবার্চিত কর্মকর্তাসহ জাতীয়তাবাদী কর আইনজীবী ফোরামের নেতৃবৃন্দের সাক্ষাৎ উপলক্ষে এই মতবিনিময় অনুষ্ঠান হয়।
গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা কর আইনজীবী সমিতির নিবার্চনে ২২ সদস্যের কাযর্করী কমিটির মধ্যে জাতীয়তাবাদী কর আইনজীবী ফোরামের ১৭ জন প্রার্থী বিজয়ী হন
দল পূর্নগঠনের ইংগিত
খালেদা জিয়া তার বক্তব্যের শুরুতে দলের পূর্নগঠনের ইংগিত দিয়ে বলেন, ‘‘ আমাদেরকে দলের পূর্ণগঠনে যেতে হবে। ইতিমধ্যে আমরা প্রক্রিয়াও শুরু করেছি। যারা ত্যাগী-পরীক্ষিত, যারা দলের বিপদের সময়ে কাজ করেছেন, তাদের কমিটিতে আনা হবে। তাদের মূল্যায়ন করা হবে।’’
কমিটি পূর্নগঠনের সময়ে কর আইনজীবীদের মধ্য থেকে প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে কাজ করার সুযোগ দেয়ার কথাও বলেন তিনি।
র্যাবের কাছেই সালাহউদ্দিন আছে
খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ দলের যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদকে র্যাবের লোকজন তুলে নিয়ে গেছে। সে র্যাবের কাছেই আছে। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, তাই এখনো বলছি, সালাহউদ্দিনকে দ্রুত তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিন। পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে না পারলে যেখান থেকে তাকে তুলে নেয়া হয়েছে, সেখানেই তাকে ফিরিয়ে দিন।’’
‘‘ অন্যথায় সালাহউদ্দিনের কিছু হলে এর পরিণতি ভালো হবে না। আমি বলতে চাই, বন্দুক দিয়ে সব কিছু হয় না।’’
গত ১০ মার্চ উত্তরার একটি বাসা থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদকে র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে বলে তার পরিবার অভিযোগ করেছে।
র্যাবের তৎপরতার ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘‘ এরা মানুষ খুন করে। নারায়নগঞ্জের ঘটনা দেশবাসী জানে। এই র্যাবকে ব্যান্ড করা দরকার।’’
নারায়নগঞ্জের ৭ খুনের ঘটনায় জড়িত র্যাব সদস্যদের কারাগারে ‘জামাই আদরে’ রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া।
তিন সিটি নিবার্চন প্রসঙ্গে
খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ আজ দেশে গণতন্ত্র নেই, আইনের শাসন নেই। কারণ দেশে জনগনের ভোটে কোনো নিবার্চিত সরকার নেই। একে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলা যায় না। এটি একটি পুলিশি স্টেট হয়ে গেছে। পুলিশরাই বলছে, তারাই এই সরকারকে টিকিয়ে রেখেছে। তারা (পুলিশ) যতদিন চাইবে, ততদিন তাদের রাখবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই। সিটি নিবার্চনে তারা ভোট ডাকাতি করেছে। পুলিশ ও সন্ত্রাসীরা নিয়ে তারা নিবার্চন করেছে, জিতেছে।।’’
ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি নিবার্চনে ভোট কারচুপির ঘটনাবলী গণমাধ্যম সঠিকভাবে উপস্থাপন করায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
ভোট কারচুপির মাধ্যমে ঢাকা ও চট্টগ্রামের নিবার্চিত মেয়রদে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘ ভোট ডাকাতি করে ওরা তিন সিটি দখল করেছে। এখন কাজের কাজ কিছুই হবে না। টেন্ডারবাজী, চাঁদাবাজী হবে। সর্বত্র চাঁদাবাজী ও সন্ত্রাসীর দৌরাত্ম চলছে।’’
যুক্তরাজ্যে গতকাল অনুষ্ঠিত নিম্ন কক্ষ হাউজ অব কমন্সের নিবার্চন প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘ সেখানে কি সুন্দর নিবার্চন হয়েছে। এটা চিন্তাই করা যায় না। ভারতেও সুষ্ঠু নিবার্চন হয়েছে। ওইসব নিবার্চনে নিবার্চন কমিশন কোনো পক্ষ নেয় না। আমরা কি ওইসব নিবার্চন দেখে কিছু শিখতে পারি না।’’
যাত্রাবাড়ীর মামলা প্রসঙ্গে
খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ আমাকে তিনমাস অন্তরীন করে রাখা হয়েছিলো। টেলিফোন লাইন, বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেয়া হয়েছিলো। গেইটের বাইরে তালা, ভেতরে তালা দিয়ে রাখা হয়েছিলো। বালুর ট্রাক এনে রাস্তা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিলো। এসময়ে তারা(সরকার) যাত্রাবাড়ীতে বোমা মেরে মামলা দিয়েছে আমার বিরুদ্ধে। ওইসব প্রেট্রোল বোমা পুলিশের পাহারায় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা মেরেছে।’’
প্রেটোল বোমায় মানুষ হত্যার রেকর্ড আওয়ামী লীগের রয়েছে দাবি করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘‘ সব প্রেটো্ল বোমার সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ জড়িত। অবরোধের সময়ে পুলিশ পাহারায় বাসে বোমা ছোড়া হয়েছে, কিন্তু একজনকেও গ্রেপ্তার করা হয়নি। জনগনের দৃষ্টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে সরকার বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের বিরুদ্ধে প্রেট্রোল বোমার মারার অপপ্রচার চালাচ্ছে।’’
লৈগি-বৈঠার নামে মানুষ হত্যা, শাহবাগের কাছে দোতলা বাসে গানপাউডার দিয়ে মানুষ হত্যারসহ বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের মানুষ হত্যার নানা ঘটনাও তুলে ধরেন খালেদা জিয়া।
সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘ এদের উন্নয়ন হচ্ছে বড় বড় প্রকল্প গ্রহন করা আর তার কমিশন খাওয়া। অনেক বিদ্যুৎ প্রকল্প করা হয়েছে। তারপরও ঢাকা শহরে বিদ্যুতের লোডশেডিং চলছে। মানুষজন গ্যাস পায় না।’’
খালেদা জিয়া আসন্ন বার কাউন্সিল নিবার্চনে আইনজীবীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতীয়তাবাদী প্যানেলের জন্য কাজ করার আহবান জানান। তিনি বলেন, ‘‘ ২০ মে বার কাউন্সিল নিবার্চন। এই নিবার্চনে আমাদের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে প্যানেল ভোট দেওয়া চাই। আমরা কর আইনজীবী সমিতি, ঢাকা আইনজীবী সমিতি ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নিবার্চনে বিজয়ী হয়েছে। আমি আশাবাদী অতীতের মতো এবারও বার কাউন্সিল নিবার্চনেও আমাদের প্রার্থীরা বিজয়ী হবে।’’
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা কর আইনজীবী সমিতির নিবার্চিত সভাপতি মাজম আলী খান ও জাতীয়তাবাদী কর আইনজীবী ফোরামের সভাপতি আবদুল মজিদ বক্তব্য দেন।
এই মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, আহমেদ আজম খান, সহ আইন বিষয়ক সম্পাদক নিতাই রায় চৌধুরী, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মাসুদ আহমেদ তালুকদার, জাতীয়তাবাদী কর আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব হুমায়ুন কবীর, ঢাকা কর আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আবদুল গফুর মজুমদার প্রমূখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।