ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ পুলিশ বাহিনীর কিছু সংখ্যক সদস্য অতিরিক্ত ‘বাড়াবাড়ি’ করছেন বলে অভিযোগ করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
‘‘ কয়েকজনের নাম তো সবাই জানে। এদের নাম উচ্চারণ করা ঠিক হবে না। এরা এতো বেশি বাড়াবাড়ি করছে, তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই, আপনারা বাড়াবাড়ি বন্ধ করুন। এর পরিণত খুব খারাপ ও ভয়াবহ হবে।’’
রাতে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের এক মতবিনিময় সভা বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘‘ সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই। তারা পুলিশ ও র্যাবের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় টিকে আছে। তারা গত রোববার কিভাবে ছাত্রদের মাথা লক্ষ্য করে অত্যাচার করেছে। সব পুলিশের কথা বলছি না। সরকারি দলের
পদলেহনকারী কিছু সংখ্যক সদস্য এসব করছে।’’
দলীয় সমর্থিত পুলিশ সদস্যদের হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ এখনো সময় আছে, মানুষের ওপর অন্যায় অত্যাচার বন্ধ করুন। আপনারা যে অন্যায় অত্যাচার করছেন-পাঁচ বছর, দশ বছর বিশ বছর হউক এর বিচার হবেই হবে। কেউ ছাড় পাবে না।’’
গুলশানে চেয়ারপারসনের কাযার্লয়ে ‘বর্তমান রাজনৈতিক ক্রান্তিকালে রনাঙ্গনের মুক্তিযোদ্থাদের করনীয়’ শীর্ষক এই মতবিনিময় সভা হয়। এতে মুক্তিযোদ্ধা দলের শতাধিক নেতা-কর্মী অংশ নেন।
দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ তিলে তিলে দেশকে সরকার অক্টোপাসের মতো আটকিয়ে ফেলেছে। এই কঠিন অক্টোপাসের বন্দি দশা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে মুক্তিযোদ্ধাসহ আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’’ ‘‘ মুক্তিযোদ্ধা আরো সক্রিয় হতে হবে। আপনাদের কর্মসূচি দিতে হবে। সারাদেশ ঘুরে সরকারের অপকর্ম তুলে ধরতে হবে।’’
রোববার ছাত্র ইউনিয়নের ডিএমপি কমিশনার কাযার্লয় অভিমুখে ঘেরা কর্মসূচিতে পুলিশি হামলার নিন্দা জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘‘ পয়লা বৈশাখে টিএসসির কাছে নারী লাঞ্ছনার ঘটনার কথা আপনারা সবাই জানে। ওই ঘটনা সব মুক্তিযোদ্ধাসহ বাংলাদেশের জন্য লজ্জার। অথচ এই সরকার এতোই নিলর্জ্জ ও বেহায়া যে ওই হামলার ঘটনার সঙ্গে তাদের লোকজন জড়িত বলে ওদের গ্রেপ্তার করেনি।’’
‘‘ কেবল তাই নয়, ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে গিয়েছিলো ছাত্র-ছাত্রীরা। দেশটাকে সরকার একটা পুলিশি রাষ্ট্র হয়ে বানিয়েছে।ওই পুলিশরা ছাত্র-ছাত্রীদের মাথা টার্গেট করে। তারা পায়ে গুলি করে। প্রতিবাদ করা ছাত্র-ছাত্রীদের কিভাবে পুলিশ মেরেছে, আপনারা দেখেছেন। এভাবে নতুন প্রজন্মকে সরকার ধবংস ও পঙ্গু করে দিতে চায়।’’
দেশকে দুর্নীতিগ্রন্থ করে ফেলা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘‘ সরকারের উপর থেকে নিচ পযর্ন্ত দুর্নীতিতে ডুবে গেছে। নিজেরা টাকা বানাচ্ছে। ছাত্রলীগ-যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগকেও বলছে, টাকা কামাও। টেন্ডারবাজী, জমি দখল, সন্ত্রাস, কবরাস্থানের জমি দখল কোনো কিছু বাদ দিচ্ছে না।’’
মুক্তিযোদ্ধার প্রতি আহবান রেখে খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ ইনশাল্লাহ সত্যের জয় হবেই হবে। ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবে। আমরা আশা করছি জীবতদশা হলেও এদের করুন পরিণতি দেখে যেতে আমরা পারবো।’’
কারাগারে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জ্যেষ্ঠ নেতাদের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘‘ আমরা দল গুছানোর কাজ শুরু করেছি। আমাদের নেতাদের কারাগারে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের জামিন পযর্ন্ত দেয়া হচ্ছে না। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শমসের মবিন চৌধুরীকে বিনা কারণে
আটকিয়ে রাখা হয়েছে। আমি শমসের মবিনসহ সকল নেতা-কর্মীদের মুক্তি দাবি করছি।’’ আদালতের বিচারকদের নিরপেক্ষ থেকে বিচারপ্রার্থীদের সুবিচার করার আহবানও জানান তিনি।
তিন সিটি নিবার্চনে সরকারের ভোট কারচুপির নানা অভিযোগ তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ সিটি নিবার্চনে কিভাবে ভোট ডাকাতি ও গুন্ডামী হয়েছে যা দেশবাসী সবাই দেখেছে। পুলিশসহ ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা নিজেরা সিল মেরেছে। এটা কোনো দেশের পুলিশ বাহিনী হতে পারে না। পুলিশ কখনোই দলের হতে পারে না, তারা হবে রাষ্ট্রের।’’
‘‘ সিটি নিবার্চনে কারচুপি থেকে প্রমাণ হয়েছে, কেনো আমরা ৫ জানুয়ারি জাতীয় নিবার্চন বর্জন
করেছিলাম। আওয়ামী লীগের অধীনে কখনোই সুষ্ঠু নিবার্চন হতে না এ্টা আজ সত্য।’’ প্রধান নিবার্চন কমিশনার রকিব উদ্দিন আহমদকে ‘অন্ধ ও অর্থব’ অভিহিত করে নিবার্চন কমিশনের ভুমিকার কঠোর সমালোচনা করেন তিনি।
খালেদা জিয়া দেশের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘‘ দেশ আজ কঠিন সময় অতিক্রান্ত করছে। দেশে আজ কোনো গনতন্ত্র, মানবাধিকার, সুশাসন ও আইনের শাসন বলে কিছু নেই। আজ মানুষের মৌলিক অধিকার নেই, জান-মালের নিরাপত্তা নেই। যখন তখন গুম-খুন হচ্ছে। দেখে দেথে পদোন্নতি হয়। আওয়ামী লীগের পদলেহন না করলে পদোন্নতি পাওয়া যায় না। জনপ্রশাসন, পুলিশ ও সামরিক বাহিনীতে পছন্দসই কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে।’’
ব্যবসা-বানিজ্যেও দলীয়করণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘‘ দেশ বলতে এখন কিছু নেই। বাংলাদেশকে একটি কারাগারে পরিণত করা হয়েছে। একলাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা, হাজার হাজার নেতা-কর্মী কারাগোরে। এই অবস্থার অবসান করতে হলে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।’’
জোট সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় গঠন, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচির কথাও তুলে ধরেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘‘ গত ৫ বছরে অনেক কর্মসূচি আমরা বাস্তবায়ন করে আসতে পারিনি। আগামীতে ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ পেলে আমরা মুক্তিযোদ্ধা যাতে শেষ বয়স পযর্ন্ত ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারেন, তার ব্যবস্থা নেবো।’’
প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্যের প্রতি ইংগিত করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ এখন আওয়ামী লীগ জাতীয়তাবাদ চুরি করতে চায়। তারা নাকী জাতীয়তাবাদী। যারা দেশের মানুষকে গুম-খুন করে, নিযার্তন করে, অর্থের পাহাড় গড়ে, লুটপাট করে, বিদেশে থাকে, তারা আর যা-ই হোক জাতীয়তাবাদী ও দেশপ্রেমিক হতে পারে না।’’
‘‘ এই দলটি (আওয়ামী লীগ) নিজের মুক্তিযুদ্ধে দল বলতে পারে না। তারা মুক্তিযোদ্ধা ভয় পায়। এরা মুক্তিযুদ্ধে স্বপক্ষের দল বলে নিজের দাবি করে।’’
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, আসম হান্নান শাহ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাহজাহান ওমর, সহ আইন বিষয়ক সম্পাদক নিতাই রায় চৌধুরী, কল্যান পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, শাহ আবু জাফর, ইসলামইল হোসেন বেঙ্গল, ফজলুর রহমান, সাদেক আহমেদ খান, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের শ্যামা ওবায়েদ প্রমূখ নেতৃবৃন্দসহ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন।