আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল বলেছেন, পয়লা বৈশাখের ঘটনায় পুলিশ আবার তাদের সনাতন কৌশল গ্রহণ করেছে। সেটা হল সেদিন উৎসবের আনন্দে যারা শামিল হচ্ছিল তাদের ওপরে দোষ চাপিয়ে দেয়া। তাদের ভাষায় শুধুমাত্র একটু দুষ্টুমি করছিল। এসময় তিনি পূর্ববর্তী বক্তার বক্তব্যের সুত্র ধরে বলেন, তার বক্তব্য থেকেই বোঝা যায় আমরা পুলিশ প্রধানের বক্তব্য কতটা ন্যাক্কারজনক মনে করি, কতটা অসমর্থ মনে করি, কতটা অথর্ব মনে করি। একথা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এরকম অথর্ব রক্ষকের আমাদের কোনো প্রয়োজন নাই।
তিনি আজ বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে একথা বলেন। পাল্টা আঘাতের ব্যানারে পয়লা বৈশাখের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তিসহ ছয় দফা দাবি এবং আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সুলতানা কামাল বলেন, নারীর ওপর নির্যাতন ধারাবাহিকভাবে চলছে। যখনই নারীরা তাদের উপস্থিতি প্রমাণের চেষ্টা করেছে তখনই আঘাত এসেছে। সেদিন যারা টিএসসিতে দায়িত্বে ছিলেন তারা বার বার দায় এড়াতে চেয়েছেন, অস্বীকার করেছেন। ডিএমপি সেদিন সন্ধ্যার আগেই সবাইকে বাড়ি চলে যেতে বলেছিল। অর্থ্যাৎ সন্ধ্যার পরে কিছু হলে তারা এর দায় নেবে না। এর মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে তারা কতটা অক্ষম।
তিনি আরো বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে এদেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। সংবিধান বলেছে এই দেশের মালিক জনগণ। তাদের করের টাকায় দায়িত্বপ্রাপ্তরা যদি নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হন, তাহলে তাদেরকে বিদায় নিতে হবে। জনগণ তাদের বিদায় করে দেবে। এদেশ দুর্বৃত্তদের হাতে তুলে দিতে স্বাধীনতা হয়নি। এ সময় সব মৌলিক নীতিগুলো জীবনের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে রক্ষা করতে সবার প্রতি আহবান জানান তিনি।
সমাবেশে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, পয়লা বৈশাখের ঘটনা অনেক কিছুর প্রতিফলন। এটা বিচ্ছিন্ন হলেও প্রতিকার প্রয়োজন। অপরাধীদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে। এখন পুলিশের কথা শুনলেও অবাক হতে হয়। অপরাধী ধরা এবং ব্যবস্থা নেয়া পুলিশের প্রধান কাজ। কিন্তু জনগণের পক্ষ থেকে তারা সংবিধান প্রদত্ত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ।
তিনি বলেন, পয়লা বৈশাখের ঘটনাকে হালকাভাবে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এমন ভাব দেখানোর চেষ্টা করেছে যে এটা নিয়ে হৈ চৈ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ক্ষুণ্ণ হবে। কিন্তু এটা তাদেরকে জানান উচিৎ, সেদিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই অপরাধীদের প্রতিরোধে এগিয়ে এসেছিল।
তিনি আরো বলেন, পুলিশ এখন নিজেরাই অপরাধীতে পরিণত হয়েছে। ১০ তারিখে তাদের নির্যাতনে এটি প্রমাণিত হয়েছে। এটা আমরা পরিস্কারভাবে দেখেছি। দায়িত্বে অবহেলার পাশাপাশি অপরাধ করেছে। যে কারণে পুলিশ প্রধান এখন দুষ্টুমি বলেছে।
সমাবেশে বক্তারা পয়লা বৈশাখের নারী লাঞ্ছিত করা ও যৌন হয়রানির ঘটনা এবং পরে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদেরকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার আহবান জানান।
ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লাকী আক্তারের পরিচালনায় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, যুব ইউনিয়নের সভাপতি কাফি রতন, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হাসান তারেক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লিটন নন্দী, সাধারণ সম্পাদক তুহিন কান্তি দাস প্রমুখ।