চট্টগ্রাম নগরীতে নিরাপত্তারক্ষীকে জবাই করে ব্যাংক ডাকাতির চেষ্টার সঙ্গে জড়িতদের রাজনৈতিক পরিচয় এড়িয়ে গেছে পুলিশ। কোন ধরনের রাজনৈতিক চাপ ও তদবিরের কথাও অস্বীকার করেছেন নগর পুলিশ কমিশনার মোহা. আব্দুল জলিল মন্ডল।
শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আমরা কারও রাজনৈতিক পরিচয় দেখিনি। কারও রাজনৈতিক পরিচয় দেখারও আমাদের দরকার নেই। এদের মূল পরিচয় হচ্ছে এরা কিলার (হত্যাকারী)।’ ব্যাংকের নিরাপত্তারক্ষী খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া চারজনকে শনিবার দুপুরে সাংবাদিকদের সামনে আনে পুলিশ। চারজন হল- মো.সাগর (২৫), মাহাবুল (২৬), গিয়াস উদ্দিন (৩০) এবং মাজারুল ইসলাম আরিফ (২৪)।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে, গিয়াস উদ্দিন যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং আওয়ামী লীগ দলীয় এক ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠজন। আরিফ সাবেক এক মন্ত্রীর এপিএস’র দেহরক্ষী। বাকিরা সবাই যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। গিয়াসকে গ্রেপ্তারের পর থেকে ওই ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং একটি রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা তাকে ছাড়াতে তদবির শুরু করেন বলেও গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘কোন ধরনের তদবির ছিলনা। আসামিদের গ্রেপ্তারে অপারেশন চলছিল। অপারেশন শেষ হওয়ার পর সাংবাদিকদের সামনে এনেছি।’ সংবাদ সম্মেলনে আসামিদের হাজির করা হলেও তাদের সঙ্গে কথা বলতে দেয়া হয়নি।
লিখিত বক্তব্যে তাদের পরিচয় লেখা হয়েছে, গিয়াস বেকার হলেও নিজেকে ব্যবসায়ী পরিচয় দেয়। আরিফ ও সাগর গার্মেন্টস কর্মী। মাহাবুল ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতা এবং রায়হান একজন আইনজীবীর সহকারি। মাসুদের কোন পরিচয় দেয়া হয়নি।
তবে আসামি আরিফ গত বৃহস্পতিবার দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদকের সামনে নগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন, আরিফ নগরীর দেওয়ানবাজারে ফার্নিচারের দোকানে কাঠমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার আরও জানান, গ্রেপ্তার হওয়া চারজনের সঙ্গে আরও দু’জন ঘটনায় জড়িত ছিলেন। এরা হলেন, রায়হান এবং মাসুদ। ছয়জন মিলে ঘটনার এক মাস আগে আরিফের বাসায় বসে ডাকাতির পরিকল্পনা করে। ঘটনার আগে দু’দিন রায়হান ব্যাংকের ভেতরে ঢুকে রেকি করে। তবে ঘটনার সময় রায়হান ও আরিফ ঘটনাস্থলে ছিলনা। ঘটনাস্থলে যায় গিয়াস, মাহাবুল, মাসুদ ও সাগর। দলনেতা গিয়াস বাইরে অপেক্ষা করতে থাকে। ভেতরে ঢুকে মাসুদ, মাহাবুল ও সাগর।
বৃহস্পতিবার (৭ মে) রাত ২টা ২৪ মিনিটের দিকে নগরীর মুরাদপুরে আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের পেছনের দিকের জানালার গ্রিল কেটে তিনজন ভেতরে প্রবেশ করে। তিনজন যখন ব্যাংকের ভেতরে প্রবেশ করে তখন ক্যাশ শাখার সামনে মেঝেতে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন নিরাপত্তারক্ষী মো. ইব্রাহিম। ঢুকেই ঘুমন্ত ইব্রাহিমের মাথায় আঘাত করে মাসুদ। আঘাতের পর ইব্রাহিম ধড়মড়িয়ে উঠলে মাসুদ তার মাথা ও মুখ চেপে ধরে। মাহবুল তার দুই পা চেপে ধরে। আর সাগর গলা কেটে তাকে খুন করে। এরপর সাগর নিরাপত্তারক্ষীর মোবাইল সেটটি নিজের হেফাজতে নেয়। পরে তারা ব্যাংকের ভল্ট ভাঙার চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে তারা আবারও গ্রিল কাটা জানালা দিয়ে বেরিয়ে যায়। খুন হওয়া নিরাপত্তারক্ষী মো. ইব্রাহিম (৩৪) চট্টগ্রামের চন্দনাইশ পৌরসভার আলী আহমদের ছেলে।
এ ঘটনায় পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক, অর্থ ও প্রশাসন) একেএম শহীদুর রহমান, অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদার, নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার কুসুম দেওয়ান ও অতিরিক্ত উপ কমিশনার এস এম তানভির আরাফাত।