ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ লেবাননে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গিয়েছিলেন সরকার দলীয় সাংসদ ও সংগীতশিল্পী মমতাজ। কিন্তু অনুষ্ঠানস্থলে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংর্ঘষের ঘটনায় একজন নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী মমতাজসহ প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাউকেই দেশে ফিরতে দিচ্ছে না।
লেবাননে বাংলাদেশের শিল্পী ও আওয়ামী লীগের এমপি মমতাজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সেখানকার আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কোন্দলকে কেন্দ্র করে দলের এক কর্মী খুনের ঘটনায় লেবানন থেকে দেশে ফিরতে চাওয়া সব বাংলাদেশিকেই বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠাচ্ছে দেশটির সরকার।
কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কোনো উড়োজাহাজেই বাংলাদেশিদের তোলা হচ্ছে না। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন ছুটিতে দেশে আসতে চাওয়া বাংলাদেশি শ্রমিকরা। অনেকে দেশে ফিরতে না পেরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন বিমানবন্দরেই। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কোন্দলের ওই খুনের ঘটনায় এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে প্রবাসী কল্যাণ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
খুনিকে ধরতে প্রবাসী বাঙালিদের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে লেবানন পুলিশ। এ ঘটনায় এখনো দেশে ফিরতে পারেননি শিল্পী ও আওয়ামী লীগের এমপি মমতাজ। তবে দুই-একদিনের মধ্যেই মমতাজ দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছে ঢাকার একটি সূত্র।
এদিকে ওই খুনের ঘটনায় জড়িত হানিফকে ধরতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপের সভাপতি লুৎফর রহমান শ্যামলকে আটক করেছে লেবানন পুলিশ। তিনি হানিফকে পালাতে সাহায্য করেছেন বলেও জানা গেছে। অনুষ্ঠানের দিন ঘটনা ঘটলেও এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে শিল্পী মমতাজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান জড়িত নয় বলে দাবি করেছে দূতাবাস সূত্র। আওয়ামী লীগ নেতা শ্যামলের অনুরোধেই শিল্পী মমতাজ লেবাননের অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
সংশ্লিস্ট সূত্র জানায়, গত রোববার রাতে বৈরুতে অনুষ্ঠিত শিল্পী মমতাজের অনুষ্ঠানে এ খুনাখুনির ঘটনা ঘটে। পরদিন ফেরার কথা থাকলেও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও শিল্পী মমতাজ এখনও লেবাননেই অবস্থান করছেন। লেবাননের বৈরুতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাঠানো এক চিঠিতে প্রবাসী কল্যাণ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়। চিঠিতে জানানো হয়, ঘটনার দিন প্রায় মধ্য রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার হরষপুর গ্রামের শামসু শিকদারের ছেলে সজীব শিকদারকে (২৩) গুলি করে হত্যা করেন হানিফ ওয়াহেদ আলী নামের আরেক বাংলাদেশি।
এ সময় শিল্পী নামের আরেক নারী শ্রমিকও গুলিবিদ্ধ হন। তারা সবাই শ্রমিক হিসেবে দেশটিতে গিয়েছিলেন। দূতবাস আরও জানায়, ওই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আওয়ামী লীগ লেবানন শাখা। স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে সজীব ও হানিফের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরেই কোন্দল চলছিল। এরইমধ্যে আহত শিল্পীকে নিয়েও তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। পরে সেখান থেকে ফেরার পথে বৈরুতের আয়নাল রুমানি এলাকায় এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হানিফ সজীবকে লক্ষ্য করে গুলি চালান।
তাৎক্ষণিকভাবে তাকে উদ্ধার করে মাউন্ট লেবানন হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। আর স্থানীয় সিন এল ফিল হাসপাতালে লেবাননের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনীর অধীনে (আইএসএফ) আহত শিল্পীর চিকিৎসা চলছে বল ওই চিঠিতে জানানো হয়। এতে আরও বলা হয়, সন্দেহভাজন বাংলাদেশির ছবি দিয়ে প্রচারণা চালিয়ে তার সন্ধানও চেয়েছে আইএসএফ।।