অবৈধ পথে মানব পাচারের ঘটনায় হাজার হাজার বাংলাদেশীর জীবন বিপন্ন হওয়ার সংবাদে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
সংস্থাটি বলেছে, এ দুরবস্থার জন্য অভিবাসন খাতে সুশাসনের ঘাটতি, যোগসাজশের দুর্নীতি ও আইন প্রয়োগের দুর্বলতা দায়ী। রোববার এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ কথা বলেন।
বিবৃতিতে অভিবাসীদের এই দুর্দশার জন্য দায়ী চক্রকে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, “সম্প্রতি দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে সমুদ্রে মানব পাচারের ওপর ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে এটি সুস্পষ্ট যে, অভিবাসন ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সুশাসনের ঘাটতি, আইন প্রয়োগে দুর্বলতা, পাচারকারীদের পাশাপাশি একশ্রেণীর ক্ষমতাবান ব্যক্তি, প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যোগসাজশের দুর্নীতির ফলে অভিবাসনে ইচ্ছুক বাংলাদেশের নাগরিকরা এরূপ নির্মম মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে।”
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কর্মসংস্থান প্রত্যাশী সরল, দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে প্রতারিত করে জীবনের ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেয়ার এসব ঘটনায় আরো একবার প্রতীয়মান হলো যে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন নিশ্চিতে ব্যর্থতা শুধু আর্থ-সামাজিক ক্ষতিই করে না, বরং মানুষের জীবন বিপন্ন করে; দুর্নীতি নিরপরাধ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে।” বিবৃতিতে টিআইবির ২০১২ সালের জাতীয় খানা জরিপের অভিবাসন খাতের তথ্য তুলে ধরা হয়।
তাতে বলা হয়, ১৪টি সেবা খাতের মধ্যে শ্রম অভিবাসন খাতে দুর্নীতির শিকার হওয়ার মাত্রা ছিল সর্বাধিক। উক্ত জরিপ অনুযায়ী শ্রম অভিবাসন খাতে নিয়মবহির্ভূত অর্থ দেয়ার হার ছিল ৭৭% এবং নিয়মবহির্ভূত অর্থের গড় পরিমাণ ছিল প্রায় দুই লাখ টাকা। বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করে বলা হয়, প্রতিবেদনের তথ্য ও সুপারিশমালা ব্যাপকভাবে আলোচিত হলেও সংশ্লিষ্ট মহল দুর্নীতি প্রতিরোধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। ড. জামান বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিজিবি সতর্ক ও দায়িত্বশীল হলে এত বড় মানবিক বিপর্যয় এড়ানো যেত।
তিনি বলেন, অবৈধ পাচারকারী অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃতদের ক্রসফায়ারের শিকার হওয়া সমস্যার সমাধান হওয়া দূরে থাকুক, বাস্তবে প্রকৃত অপরাধী, বিশেষ করে ক্ষমতাধর কুচক্রী মহলকে সুরক্ষা প্রদানের সমতুল্য কি না এমন প্রশ্ন উত্থাপন হওয়াই যৌক্তিক। পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে না পারলে সমস্যার মূলোৎপাটন অসম্ভব। বর্তমানে সাগরে ভাসমান সব বাংলাদেশীকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে উচ্চপর্যায়ের একটি জাতীয় টাস্কফোর্স গঠনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ড. ইফতেখার।
তিনি মনে করেন, জাতিসংঘ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইন সরকারের সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে মানব পাচারের শিকার বাংলাদেশী নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে কূটনৈতিক দক্ষতা ও কার্যকরতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট খাতে বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ কূটনীতিকদের সম্পৃক্ত করে সমন্বিত উদ্যোগের আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে।