ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ যশোরের কেশবপুরের লক্ষ্মীনাথকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ছাউনির জায়গায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সম্পূর্ন নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সুদৃশ্য এই স্কুল ভবনটির উদ্বোধন করা হয়।
সেনাবাহিনীর ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এবং যশোর অঞ্চলের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান ভবনটির উদ্বোধন করেন। এ সময় বক্তব্য দেন কেশবপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি আশরাফ উজ জামান খান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু মুসা প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন কর্নেল নাহিদ, কর্নেল আশরাফ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইসতিয়াক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনোয়ার, মেজর সাহাব উদ্দীন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরীফ রায়হান কবির, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনিছুর রহমান, মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর প্রমুখ।
মেজর জেনারেল মতিউর রহমান বলেন, ‘প্রথম আলোয় খবর দেখার আগে আমি ভাবতেই পারিনি যে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এত অবহেলিত থাকতে পারে। সে কারণে কোনো সরকারি অর্থ না নিয়ে আমাদের সেনানিবাসের কল্যাণ তহবিলের অর্থ বাঁচিয়ে এই বিদ্যালয়টি নির্মাণ করে দিয়েছি আমরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, এখানে অর্থ বিনিয়োগ করা মানে সর্বাপেক্ষা লাভজনক বিনিয়োগ। কারণ, এখানকার ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখতে পারলে পুরো সমাজ অলোকিত হবে।’ বিদ্যালয়ের নামফলক উন্মোচন করেন যশোর সেনানিবাসের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান।
ভবন নির্মাণের কাজ তদারকের দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর ওয়ারেন্ট অফিসার আবদুল আওয়াল বলেন, ‘২৪ মার্চ আমরা কাজ শুরু করি। ৫৪ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে সক্ষম হয়েছি।’ ৮৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২২ ফুট প্রস্থের টিনশেড ভবনটিতে চারটি কক্ষ রয়েছে। ৬৪টি বেঞ্চ, চারটি চেয়ার ও চারটি টেবিলও দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দুটি শৌচাগার নির্মাণ ও একটি অগভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের নিচু মাঠটিকে মাটি ফেলে ভরাট করা হয়েছে। খেলাধুলার জন্য দুটি ফুটবলও দেওয়া হয়।
স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির তানজিলা ইসলাম বলে, ‘যখন বাইরের গ্রামে গিয়ে দেখতাম ছেলেমেয়েরা ভালো ভবনের ভেতরে বসে ক্লাস করছে, তখন মনটা খারাপ হতো। এখন আমরা নতুন ভবনে নতুন বেঞ্চে বসে ক্লাস করতে পারব—ভাবতেও ভালো লাগছে।’
পঞ্চম শ্রেণির মুশফিকুর রহমান বলে, ‘আগে মাটিতে বসে ক্লাস করতাম। এখন বেঞ্চে বসে ক্লাস করতে পারব। খুবই ভালো লাগছে।’ শিক্ষক জাহানারা পারভিন বলেন, ‘আগে আমাদের বিদ্যালয়ে টয়লেট (শৌচাগার) না থাকার কারণে অন্যের বাড়িতে যেতে হতো। শিশুদের পাশাপাশি আমরা চরম কষ্টে ছিলাম।’
শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, কাদা মাড়িয়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, মাটিতে বসে ক্লাস নিতে হয়েছে। এ ভবন নির্মাণের কারণে শিক্ষাবান্ধব একটি পরিবেশ পাওয়া যাবে। অভিভাবক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের গ্রামে এমন বিদ্যালয় ভবন হবে—এটা আমরা কল্পনাও করতে পারিনি।’
গত ১ মার্চ প্রথম আলোয় ‘জরাজীর্ণ ছাউনির নিচে ১৫ বছর’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। মেজর জেনারেল মতিউর রহমান প্রতিবেদনটি পড়ে বিদ্যালয়টি নতুনভাবে নির্মাণের আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরপর সেনাবাহিনীর প্রকৌশল ইউনিটের তত্ত্বাবধানে বিদ্যালয়টির ভবন নির্মাণ করে দেওয়া হয়।