ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ যারা মানবপাচারে জড়িত(দালাল) শুধু তারা নয়, তাদের পাশাপাশি যারা সাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে অভিবাসনের চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
রবিবার শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেছিলেন। যা পরবর্তীতে ফলাও করে প্রচার করে বিদেশি গণমাধ্যমগুলো। আর তাতে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যকে অযৌক্তিক দাবি করা হয়। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কর্মরত ব্যক্তিরাও বিভিন্ন নিউজ লিংক টুইট করে প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন।
রোববার প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছিলেন, অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা ‘সংক্রামক' আকার ধারণ করেছে। মানসিক অসুস্থতার মতো হয়ে যাচ্ছে মানুষের। বাইরে যেতে হবে, গেলেই যেন অনেক টাকা পাবে। এতে জীবনটা যাচ্ছে, অথবা অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেছিলেন, একটা ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা এভাবে অবৈধভাবে যাবে, যারা দালাল তাদের যেমন শাস্তি হতে হবে, যারা যাবে তাদেরও শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ তারা তো আমাদের দেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ করছে।
বিশ্ব গণমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের কড়া সমালোচনাঃ
কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের সমালোচনা করা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে তৈরি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, নৌকা করে যারা সাগর পাড়ি দিচ্ছেন তাদের ‘মানসিকভাবে অসুস্থ' বলেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তারা এভাবে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে বলেও অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
সিঙ্গাপুরের ‘দ্য স্ট্রেইটস টাইমস' এএফপির এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।
অন্যদিকে দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত 'মালয়েশিয়ায় অধিক গণকবরের সন্ধান' শীর্ষক সংবাদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।
একই রকম বক্তব্য পাওয়া গেছে প্রকাশিত আরও কয়েকটি সংবাদে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম দ্য এইজ-এ প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়, অন্নহীন অভিবাসীদের মানসিক অসুস্থ বললেন প্রধানমন্ত্রী। সংবাদে উল্লেখ করা হয়, ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর রোহিঙাদের ব্যাপারে তিনি হার্ডলাইনে যান।
২০১২ সালে মায়ানমার থেকে সংঘাতে বাংলাদেশে চলে আসা রোহিঙাদের তিনি প্রবেশ করতে অনুমতি দেননি বলে উল্লেখ করে সংবাদমাধ্যমটি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য সংবলিত এই সংবাদটি গুরুত্ব দিয়ে ছেপেছে আলজাজিরা। সংবাদটিতে উল্লেখ করা হয়, অধিকাংশ মুসলিম রোহিঙাই মায়ানমার থেকে আসছে, যাদের দেশটি নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে না। অন্যদিকে দারিদ্রের কষাঘাতে নাকাল বাংলাদেশিরা আসছে তা থেকে মুক্তি পেতে। তবে দেশে যথেষ্ট কাজ রয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্যও প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যমটি।
এসব সংবাদমাধ্যম ছাড়াও সিএনএন, দ্য সানডে টাইমস প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য জুড়ে দিয়ে ফলাও করে সংবাদ ছেপেছে।
বিশ্ব মিডিয়ায় প্রকাশিত এই খবরটি টুইটারে শেয়ার করছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার খবরটি শেয়ারের সঙ্গে তাদের মন্তব্যও জুড়ে দিচ্ছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর এশিয়া বিভাগের উপ-পরিচালক ফিল রবার্টসন এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এনজিওগুলোর সঙ্গে কাজ করেন এমন একজন, যার নাম ফ্রান্সেসকো। ফ্রান্সেসকো লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের অধিকারকে প্রত্যাখান করেছে।