ক্যাপ্টেন(অঃ)মারুফ রাজুঃ এবার ভারতের শীর্ষ জীবন বীমা কোম্পানি ‘লাইফ ইনস্যুরেন্স করপোরেশন অব ইন্ডিয়া’কে ( এলআইসি) বাংলাদেশে ব্যবসা করার অনুমতি দিয়েছে সরকার। ভারতের সর্ববৃহৎ এই জীবন বীমা কোম্পানী আসলে বাংলাদেশের সীমিত বাজারে তাদের সাথে প্রতিযোগিতায় অনেক দেশীয় বীমা প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকা মুশকিল হয়ে উঠতে পারে বলে সংশ্লিশ্টরা মনে করছেন।
আট শর্তে ‘এলআইসিকে সনদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। এলআইসি বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করলে গ্রাহক লাভবান হবে বলে মনে করছেন বীমাখাতের ব্যবসায়ীরা। ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত এ কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যবসা করবে ‘এলআইসি বাংলাদেশ লিমিটেড’ নামে। এর পরিশোধিত মূলধন হবে ১০০ কোটি টাকা, যার ৫০ শতাংশ ধারণ করবে এলআইসি। আর বাকি ৫০ শতাংশের মালিকানা থাকবে বাংলাদেশিদের হাতে। এর মধ্যে ১০ শতাংশ স্থানীয় উদ্যোক্তা এবং ৪০ শতাংশ পুঁজিবাজারের মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য রাখা হবে।
এর আগে ২০১৩ সালে এলআইসি ৩০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন নিয়ে ব্যবসা করার প্রস্তাব দিলেও আইডিআরএ তা নাকচ করে দিয়েছিল। এলআইসি গতবছর আপিল করলে তাদের পরিশোধিত মূলধন বাড়িয়ে ন্যুনতম ১০০ কোটি টাকা করার পরামর্শ দিয়ে আবারও প্রস্তাব পাঠাতে বলে আইডিআরএ।
সে অনুযায়ী আবেদন করেই গত ৩১ মে সম্মতিপত্র পায় এলআইসি, যারা ভারতের বীমা বাজারের সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রায় ছয় দশক ধরে জীবন বীমার ব্যবসা চালিয়ে আসা এলআইসির সম্পদের পরিমাণ বর্তমানে ১৫ লাখ কোটি রুপির বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের মেটলাইফ-আলিকো বাংলাদেশে ব্যবসা করলেও তারা কার্যক্রম চালায় মূল কোম্পানির শাখা হিসেবে, নিবন্ধিত কোম্পানি হিসাবে নয়। শর্ত অনুযায়ী এলআইসিকে কার্যক্রম শুরুর আগে স্থানীয় কোনো বিনিয়োগকারীর সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধন পেতে হবে।
এরপর উদ্যোক্তা অংশের ৫০ শতাংশ, অর্থাৎ ৫০ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ এলআইসিকে বৈদেশিক মুদ্রায় আনতে হবে। তবে স্থানীয় বিনিয়োগকারী হিসেবে কে বা কোন প্রতিষ্ঠান এলআইসির সঙ্গে থাকছে তা এখনও চুড়ান্ত হয়নি। নিবন্ধন পাওয়ার আগে প্রস্তাবিত কোম্পানিতে একজন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে, যিনি কোম্পানির কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে আইডিআরএকে জানাবেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের সময় এলআইসির চেয়ারম্যান এস কে রায়ের হাতে সম্মতিপত্র তুলে দিতে চায় আইডিআরএ।
এজন্য সরকারের অনুমোদন চেয়ে অর্থমন্ত্রীকে একটি চিঠিও লিখেছে এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, “আইডিআরএর সম্মতিপত্রটি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময় ৬ জুন সন্ধ্যা ৬টায় তাহার উপস্থিতিতে ভারতীয় জীবন বীমা করপোরেশনের চেয়ারম্যানের নিকট হস্তান্তর করা যেতে পারে। আমরা মনে করি, এর ফলে দুই দেশের মধ্যে বীমা ক্ষেত্রে সহযোগিতার নতুন যুগের সূচনা হবে।” বাংলাদেশের বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ বলেন, ‘কিছু শর্তে এলআইসিকে আমরা লেটার অব কনসেন্ট (সম্মতিপত্র) দিয়েছি। শর্তগুলো পূরণ করলে তাদেরকে ব্যবসা করার অনুমোদন দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান আহসানুল ইসলাম টিটো বলেন, এলআইসি কার্যক্রম শুরু করলে বাংলাদেশের বীমা কোম্পানিগুলো বড় ধরনের প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়বে। এলআইসি পুরনো কোম্পানি, তাদের অভিজ্ঞ জনবল আছে। তারা বাজারে নতুন প্রোডাক্ট আনবে। সেখান থেকে আমরাও নতুন প্রডাক্টের ধারণা পাব। আবার বীমা খাতের জনবল উন্নয়নেও তাদের কিছু কাজ থাকবে।
তিনি বলেন, সব মিলিয়ে বললে, এলআইসির বাজারে আসা ইতিবাচক-নেতিবাচক দুটোই হবে। তবে আমাদের গ্রাহকদের জন্য ভালো হবে। ২০১৩ ও ২০১৪ অর্থবছরে আইডিআরএ ১৪টি জীবন বীমা ও দুটি সাধারণ বীমা কোম্পানিকে বীমা ব্যবসা করার অনুমোদন দেয়। সব মিলিয়ে বর্তমানে দেশে ৭৭টি বীমা কোম্পানি কাজ করছে, যার মধ্যে জীবন বীমা কোম্পানি ৩১টি। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জীবন বীমা কর্পোরেশন ও বিদেশি মেটলাইফ আলিকোও রয়েছে এর মধ্যে।
আইডিআরএ স্থানীয় উদ্যোক্তাদের আরও কয়েকটি বীমা কোম্পানির অনুমোদন দেবে বলে জানা গেছে। ২০১৩ সালে সরকার বীমা কোম্পানির লাইসেন্স দেওয়ার ঘোষণা দিলে ৭৭টি আবেদন জমা পড়ে। সেসব আবেদন থেকেই নতুন লাইসেন্স দেওয়া হবে।