ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশ-ভারতের স্হলসীমা সংক্রান্ত মুজিব -ইন্দিরা সমঝোতা চুক্তি সাক্ষরের ৪০ বছর পর তা ভারতের সংসদে পাশ হয়েছে সম্প্রতি।একই ভাবে বাংলাদেশের মানুষের প্রানের দাবী তিস্তা পানি বন্ঠন চুক্তি বাস্তবায়ন হতেও যদি ২০-৪০ বছর অপেক্ষা করতে হয় তাহলে তা হবে অত্যন্ত দুঃখ জনক এবং অনাকাংখিত।
ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য বিবাদমান তিস্তা পানি বন্টন চুক্তিটি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা জরুরি হয়ে পড়লেও আপাতত স্থলসীমা চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে মোদির ঢাকা সফর দুদেশের মধ্যে ব্যাপক পারস্পরিক সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্কের সম্ভাবনা তৈরি করবে বলে মনে করেন ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা।
আসছে ৬ই জুন নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরকে সামনে রেখে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আইএএনএসকে দেয়া সাক্ষাতকারে এ মন্তব্য করেন তারা। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এবারের ঢাকা সফরেই তিস্তা চুক্তি হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছিল। তবে হঠাৎ করে মোদির সফরসঙ্গী হওয়ার ক্ষেত্রে এ যাত্রায় তিস্তা চুক্তি না হওয়ার শর্ত বেঁধে দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সোমবার মমতা নিজেই জানিয়েছেন যে, আসন্ন ঢাকা সফরে তিস্তা চুক্তি হচ্ছে না। আর তাতে শেষ হয়ে যায় এ যাত্রায় তিস্তা চুক্তি হওয়া নিয়ে দুদেশের জল্পনা-কল্পনা।
তবে এ দফায় তিস্তা চুক্তি না হলেও হতাশ হচ্ছেন না ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা। এ প্রসঙ্গে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ওম প্রকাশ মিশ্রা বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য তিস্তা চুক্তি খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে আপাতত স্থলসীমা চুক্তির সফল বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে এবং দুদেশের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার হবে। একইসঙ্গে তিস্তা চুক্তির মত ইস্যুগুলো সমাধানের পথ প্রশস্ত হবে বলে আমি আশা করি।’
বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বীণা সিক্রি বলেন, মোদির সফরের মধ্য দিয়ে যোগাযোগ খাতে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যুগান্তকারী সম্পর্ক তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও এ সফরে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে স্থলসীমা চুক্তি। তিনি বলেন, `গুয়াহাটি হয়ে শিলং-ঢাকা এবং আগরতলা হয়ে কলকাতা-ঢাকা বাস সার্ভিস, খুলনা ও কলকাতার মধ্যকার ট্রেন সার্ভিস নিয়ে আলোচনা এবং বাংলাদেশে ভারতের ছোট জাহাজ ঢুকতে দেয়ার অনুমতি দিয়ে সম্ভাব্য কোস্টাল শিপিং এগ্রিমেন্ট কানেকটিভিটিকে শক্তিশালী করবে এবং দেশের উত্তর-পূর্ব এলাকার উন্নয়নে সহায়তা করবে। এর মধ্য দিয়ে পশ্চিম বঙ্গ, নেপাল, বাংলাদেশ এবং ভুটানকে একটি উপ-আঞ্চলিক প্রবৃদ্ধি এলাকায় যুক্ত করা সম্ভব হবে।’
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়, গেল ফেব্রুয়ারিতে মমতার ঢাকা সফরের সময় তিস্তা চুক্তি নিয়ে বরফ গলার লক্ষণ মিলেছিল। সেসময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মমতা নিশ্চিত করেছিলেন যে, অদূর ভবিষ্যতে তিস্তা ইস্যুটি সমাধান করা সম্ভব হবে। সম্প্রতি পশ্চিম বঙ্গ সফরে গিয়ে মমতার সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করেন মোদি। এমনকি মমতার সমর্থন আদায়ে শুকনো মৌসুমে উত্তর বঙ্গে সেচ কাজ অব্যাহত রাখতে পানি সংরক্ষণার নির্মাণের জন্য প্যাকেজ প্রদানেরও প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে।
বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়, হয়তো আসছে বছর বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়ার ঝুঁকি নিতে চান না মমতা। তবে যাই হোক, তিস্তা পানি বন্টন চুক্তি বিলম্বিত হওয়ার ইস্যুকে সমস্যা বলে মনে করছেন না বীণা সিক্রি। তিনি বলেন, ‘এতদিন স্থলসীমা চুক্তিরই অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল। কিন্তু মমতাকে রাজি করানোসহ সব বাধা পেরুতে পেরেছেন মোদি। আর এবার তিস্তা চুক্তির ব্যাপারেও তিনি সফলতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেন। হতে পারে একবছরের মধ্যে আমরা তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে একেবারে প্রস্তুত থাকব, আর শেখ হাসিনা ভারত সফরে এসে তা স্বাক্ষর করছেন।’
মনমোহন সিং সরকারের সময় তিস্তা নিয়ে যে সমাধানসূত্রটি তৈরি করা হয়েছিল, তাতে বলা হয়েছিল শুকনো মৌসুমে তিস্তায় যে পরিমাণ পানি থাকবে, তা সমান ভাগে ভাগাভাগি হবে দুই দেশে। যার মধ্যে আবার প্রত্যেক দেশ থেকেই চার ভাগ পানি বরাদ্দ করা হবে নদীখাতে নাব্যতা বজায় রাখতে চার্জিংয়ের জন্য। কিন্তু মমতা এই প্রস্তাবে রাজি হননি। তাঁর যুক্তি, শুকনো মৌসুমে তিস্তায় কার্যত পানিই থাকে না। আর বর্ষার সময় বাংলাদেশ পানি পায় প্রকৃতির নিয়মেই। তাই সমস্যা মূলত শুকনো মৌসুমেই।
স্থলসীমা চুক্তির আওতায় ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করবে ভারত আর ভারতের কাছে ৫১টি ছিটমহল ফেরত দেবে বাংলাদেশ। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিহীন অবস্থায় এতদিন ছিটমহলগুলোতে দিনযাপন করে আসছেন ৫১ হাজার মানুষ।