দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ মিশরীয় স্বৈরশাসক আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির বিতর্কিত জার্মান সফরে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের সঙ্গে বার্লিনে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সিসি যখন কথা বলছিলেন তখন এক নারী সাংবাদিক সিসিকে ‘খুনি’ খুনি বলে চিৎকার করে উঠেন।
এ অবস্থায় বিশৃঙ্খলার মধ্যেই শেষ হয় সিসির সংবাদ সম্মেলন। স্বৈরশাসক সিসির মানবাধিবার লঙ্ঘনের জন্য তার জার্মান সফর বাতিলের দাবি করেছিল বিভিন্ন সংগঠন। মার্কেলও মাসের পর মাস ধরে সিসির সফরের আমন্ত্রণ নাকচ করে আসছিলেন।
শেষ পর্যন্ত বুধবার দুদিনের সফরে জার্মানি পৌঁছান সিসি। সফরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনৈতিক স্বার্থ ও বিদেশ নীতির মধ্যে অস্বস্তিকর সম্পর্ক পুরোদমে প্রদর্শন করা হয়। সফরে জার্মানির শিল্পগোষ্ঠী সিমেন্সের সাথে গ্যাস সরবরাহ ও বায়ু বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য ৯০০ কোটি ডলারের চুক্তি করেন সিসি। চুক্তিটি বাস্তবায়িত হলে মিশরের বিদ্যুৎ উৎপাদন ৫০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার কথা।
সংবাদ সম্মেলনে মার্কেল বলেন, জার্মানি ও মিশরের মধ্যে অনেক অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। তবে মৃত্যুদণ্ড ও অন্যান্য মানবাধিকার ইস্যুতে উভয় দেশে মতপার্থক্য রয়েছে।
এ সময় সিসি দাবি করেন, ‘আমরাও মিশরে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাকে ভালোবাসি। কিন্তু আমরা একটি কঠিন সময়ে বাস করছি।’ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও অন্যান্য কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন সিসির জার্মান সফরের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, কয়েক দশকের মধ্যে মিশরে সবচেয়ে ভয়াবহ মানবাধিকার লংঘনে সভাপতিত্ব করার পরও সিসি এ সফরের সুযোগ পাওয়ায় এটাকে তার দিক থেকে একটা বড় সফলতা হিসেবেই দেখা যায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, মার্কেল এর আগে বলেছিলেন যে মিশরে স্বচ্ছ সংসদ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত সিসিকে বার্লিনে আমন্ত্রণ জানানো হবে না। কিন্তু তেমন কোনো নির্বাচন মিশরে আজো হয়নি। সিসির আমন্ত্রণ পাওয়ার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে যে তিনি জার্মানির ঘনিষ্ঠ মিত্র ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রিয়পাত্র। এছাড়া সিমেন্সের সঙ্গে ৯০০ কোটি ডলারের চুক্তিও একটি বড় কারণ।
সিসির অগণতান্ত্রিক আচরণ ও মানবাধিকার লংঘনের কারণে জার্মান সংসদের স্পিকার নরবার্ট ল্যামার্ট তার সাথে বৈঠক বাতিল করে দিয়েছেন।
এদিকে সিসির সফরের প্রতিবাদে বুধবার দিনজুড়ে বার্লিনে মিশরীয় দূতাবাসের সামনেসহ জার্মানির বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভে করা হয়েছে। এ সময় মিশরীয় বংশোদ্ভূত একজন বিক্ষোভকারী বলেন, আরব দুনিয়ায় গণতন্ত্র নিযে বেশিরভাগ পশ্চিমা দেশের কোনো মাথাব্যথা নেই। তাদের উদ্বেগ তাদের নিজেদের স্বার্থ নিয়ে।