ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার বিতর্কিত কর্মকান্ডের উপর বিএনপি হাইকমান্ড নিষেধাজ্ঞা জারী পর ঢাকার সাবেক মেয়র এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা তথা নয়া পীর এবার নতুন ফন্দি এটেছেন।
৩০শে মে ২০১৫ এ শহীদ জিয়ার শাহাদৎ বার্ষিকী পালন উপলক্ষ্যে এই পীর সুইডেন বিএনপির একটি অংশের আমন্ত্রনে প্রায় সপ্তাহ খানেক আগে সুইডেন যান ।ডাঃ সাজিদ রুবেল এর নেতৃত্বাধীন সুইডেন বিএনপির মুলধারা এই ভন্ড পীর খোকাকে সুইডেনে অবাঞ্চিত ঘোষনা করেন এবং প্রায় সকল স্থানে কালো পতাকা প্রদর্শন করেন।তার পরও এই নির্লজ্জ এবং ক্যান্সারাক্রান্ত(???)খোকা সুইডেনে শহীদ জিয়ার স্মরন অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
সুইডেন থেকে ৩ দিন আগে বিনা আমন্ত্রনে খোকা চলে আসেন লন্ডনে।বিমানবন্দরে তাকে যুক্তরাজ্য বিএনপির কোন নেতৃস্থানীয় নেতা অভ্যর্থনা জানাননি,বদলে তার নিজস্ব কিছু লোকজন তাকে আনতে যান।এরপর শুরু হয় তার লন্ডন মিশন।লন্ডন সহ দেশে বিদেশে ঢোল পিটিয়ে বলে বেড়াছ্ছেন ,তিনি এসেছেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের সাথে দেখা করতে এবং দেশনায়ক তাকে নতুন কোনো দায়ীত্ব দেবেন বলে তিনি আশা করছেন তিনি।অথচ প্রায় ৩/৪ দিন লন্ডনে থেকেও এই ভন্ডপীর খোকা দেশনায়কের ত্রিসীমানায় এখনও ভিড়তে পারেননি ,সাক্ষাত করা তো দূরের কথা।
অবশ্য খোকার এই লন্ডন মিথ্যাচার নতুন কিছু নয়।ইতিপূর্বে গেলো বছরের শেষভাগে তিনি লন্ডনে সপ্তাহ দুয়েক অবস্থান করেও দেশনায়কের সাক্ষাত পাননি।অথচ তার বরাৎ দিয়ে বাংলাদেশের একটি বহুল আলোচিত পত্রিকা আমাদের সময় 'খোকাকে নতুন দায়ীত্ব দিলেন তারেক' শিরোনামে সংবাদ প্রচার করার পর তার এই জালিয়াতি ধরা পড়ে যায়। একজন বিতর্কিত ব্যক্তি হয়েও অন্যায় ভাবে দেশনায়কের নাম ভাঙ্গিয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করায় দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ এই অসত্য সংবাদের প্রতিবাদ করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছিলো।
উল্লেখ্য ঢাকার দির্ঘকালীন মেয়র এবং ঢাকা মহানগর বিএনপির সভাপতি থাকা কালে খোকার বিতর্কিত এবং গা বাচানো কর্মকান্ড প্রচুর নিন্দার ভাগীদার হয়েছে।বিশেষ করে ৫ই জানুয়ারী ১৪ এর নির্বাচন পূরবর্তি আন্দোলন কালে ২৯শ ডিসেম্বর'১৩ এ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আহুত 'মার্চ ফর ডেমোক্রেসী' ভেস্তে যাবার মূল কারন হচ্ছে এই খোকার নির্লিপ্তিতা ও নিষ্ক্রিয়তা।খোকা বেঈমানী না করলে এই সরকারের পক্ষে ৫ই জানুয়ারীর বিতর্কিত ও পাতানো নির্বাচন করা কোনভাবেই সম্ভব হতো না।
ঢাকার সাবেক মেয়র এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার গত ২০১৩ এর শেষভাগের আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে রহস্যজনক ভাবে নিস্ক্রিয়তা এবং সরকারের সাথে গোপন আতাতের অভিযোগ বেশ জোরেশোরেই ঐ সময়শোনা যাচ্ছিল।
ঐসময়ের ৫ই জানুয়ারী ২০১৪ এর দলীয় সরকারের অধীনের ঘোষিত নির্বাচন প্রতিহত সকল প্রচেষ্টা সারা বাংলাদেশে সফল হলেও শুধু মাত্র খোকার কারনে ২৯ ডিসেম্বর ২০১৩ এর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আহুত 'মার্চ ফর ডেমোক্রেসী' মাঠে মারা যায়। সরকারের চরম বাধার মুখেও হাজার হাজার বিএনপি নেতা কর্মী ঢাকায় এসে পৌছালেও সমন্বয়হীনতা আর খোকা সহ ঢাকা মহানগরীর নেতাদের নিষ্ক্রিয়তায় এই আন্দোলন তুঙ্গে গিয়েও সফল হতে পারেনি।
ইতিপূর্বে ২০১৩ সালের প্রথমার্ধেও খোকা আওয়ামী সরকার সমর্থিত শাহবাগের গনজাগরন মঞ্চে গিয়ে তার সাথে সংহতি প্রকাশ করেন ,বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে।কার্যত তার কারনেই একদার ঢাকা মহানগরীতে বিএনপির বিপুল জনপ্রিয়তা এবং শক্ত সাংগঠনিক অবস্থান ধীরে ধীরে লোপ পেতে থাকে।
এমতাবস্থায় ২০১৪ সালের সম্ভবত মে মাসে তিনি যুক্তরাষ্ট্র গমন করেন এবং এর পর থেকে সেখানেই অবস্থান করছেন ।তার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ,যুক্তরাষ্ট্রে এই মরনব্যাধীর চিকিৎসা করাচ্ছেন।এই চিকিৎসার ধারাবাহিকতায় তিনি কেমোথেরাপী নিচ্ছেন বলেও জানান। তবে নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশীদের মতে তাকে মোটেও অসুস্থ মনে হয় না এবং তিনি ফোবানা সম্বেলন সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশ নিয়ে বিভিন্ন বিতর্কিত মতামত দিয়েছেন যা কিনা ক্যান্সারাক্রান্ত একজন গুরুতর অসুস্থ রোগীর পক্ষে প্রায় অসম্ভব ।ঐ সময় তারকরা একটি মন্তব্যে তিনি বলেন,প্রবাসে আওয়ামী লীগ বিএনপি করার কোনো কারন দেখিনা ,যা কিনা সারা বিশ্বের প্রবাসীদের মাঝে প্রবল নিন্দা এবং ক্ষোভের সঞ্চার করে।
ইতিমধ্যে তার অবর্তমানে ২০১৪ এর শেষভাগে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দলের স্বার্থে তাকে বাদ দিয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব মির্জা আব্বাস কে ঢাকা মহানগরী বিএনপির আহবায়ক করেন এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি জনাব হাবিবুন নবী সোহেল হন সদস্য সচীব।এই নতুন কমিটি অত্যন্ত সফলতার সাথে ঢাকা মহানগরী বিএনপির নেতা কর্মীদের উদ্ভুদ্ধ করে তোলেন এবং শত প্রতিকূলতার মধ্যেও আন্দোলন চালিয়ে গেছেন।
পক্ষান্তরে খোকা গত ১ বছরের প্রবাসে অবস্থান কালে অন্ততঃ দু দুবার লন্ডনে অবস্থান রত দেশনায়ক তারেক রহমানের সাথে দেখা করার চেষ্টা করেও সফল হননি।এব্যাপারে এই প্রতিবেদক শতভাগ নিশ্চিত ।কি কারনে খোকা দেশে ফিরে না গিয়ে নিউইয়র্ক লন্ডন ছোটাছুটি করছেন তা আমাদের বোধগম্য নয়।বিশেষ করে তার কিছু কার্যকলাপ দলের স্বার্থ রক্ষা না করে,বরং আওয়ামী সরকারের স্বার্থ রক্ষা করেছে বলে মনে হয়।
২০১৫ এর প্রথম ভাগে ৬ কংগ্রেসম্যানের বিবৃতি নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কিত ঘটনার অভিযোগে ,অভিযুক্ত দুই করিৎকর্মা এবং নিবেদীত প্রান, বিএনপি চেয়ারপারসনের বৈদেশিক উপদেষ্টা ও বিশেষ দূত দ্বয়কে কোন বিশেষ মহলের(আওয়ামী লীগ)প্ররোচনায় আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ না দিয়েই তড়িধড়ি করে তিনি অব্যহতির ব্যবস্থা করান।
দলের চরম ক্রান্তি লগ্নে তার এধরনের আচরন আওয়ামী সরকারকে আনন্দিত করেছে তা নিশ্চিত।পদ-পদবী না থাকার পরও এদুজন উপদেষ্টা এখনও অক্লান্ত ভাবে কাজ করে চলেছেন মার্কিন সরকারী মহলে,জাতিসংঘ সদর দফতরে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা সমূহের সাথে ।এ ব্যাপারে গত ১ বছরে জনাব সাদেক হোসেন খোকা দলের জন্য কি কি করেছেন তা বিএনপির সর্বস্তরের নেতা- কর্মীরা জানতে চান।
ঐসময় বিএনপির অবরোধ চলাকালে খোকা নিউইয়র্কের এক সভায় বলেন,'মাত্র আধ ঘন্টার মধ্যে তিনি ঢাকা অচল করে দিতে পারেন"।এধরনের বালখিল্য হুমকি ধমকি দেয়ে তিনি কার স্বার্থ রক্ষা করছেন আমরা জানিনা।
কিছুদিন পূর্বের সিটি নির্বাচনেও খোকা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মির্জা আব্বাস কে সমর্থন না দিয়ে সমর্থন দেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাঈদ খোকনকে।বাংলাভিশন টিভি চ্যানেল সহ যে বিপুল বিত্তবৈভব খোকা অর্জন করেছেন বিএনপি শাসনমলে তা তিনি কখনও দলের গত দু বছরের চরম দূর্দিনে খরচ করেন নি।যেখানে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাংকের সাধারন হিসাব পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত করে রেখেছে এই অবৈধ সরকার,সেখানে খোকার বাংলাভিশন সহ বিশাল ব্যবসা বানিজ্য অক্ষত আছে কোন বোঝাপড়ার মাধ্যমে তা আমরা জানতে চাই।
কিছুদিন পূর্বে ভাইবার কেলেংকারীর মাধ্যমে ডাকসুর সাবেক ভিপি মান্নাকে চুড়ান্ত ভাবে ফাঁসিয়ে দেন খোকা।ভাইবার কোম্পানীর ভাষ্যমতে ভাইবারে কথোপকথনরত যেকোন এক পক্ষ যদি নিজে তা রেকর্ড না করে তবে ভাইবারের সাংকেতিক ইথার অবমুক্তকরা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়।
এভাবেই অসংখ্য প্রশ্নবিদ্ধ এবং বিতর্কিত কর্মমালার মধ্য দিয়ে এই মিথ্যাচারী এবং চরম সুবিধাবাদী সাদেক হোসেন খোকার সততা,নিষ্ঠা এবং দলের প্রতি আনুগত্য আজ প্রশ্নের সম্মুখীন।এমতাবস্থায় বিএনপির স্বার্থেই খোকাকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রনে নিয়ে উপযুক্ত দলীয় ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।