ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রদল নেতা জসীম উদ্দীনকে গতকাল সন্ধ্যায় পুলিশ গ্রেফতার করে। তার বিরূদ্ধে কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকলেও তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়।
জসীম গ্রেফতারের পর পরই বাংলাদেশ সময় রাত ৯.৫৭ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক বৈদেশিক উপদেষ্টা ও বিশেষ দূত জাহিদ এফ সরদার সাদী লক্ষ্মীপূর জেলা পুলিশ সুপার এস এম শাফিউর রহমানকে ফোন করে জসীমের খোজ খবর নেন এবং তাকে অবিলম্বে কোর্টে প্রেরনের অনুরোধ করেন।এ ব্যাপারে জনাব সাদীর পোস্ট কৃত তার সাথে পুলিশ সুপারের কথোপকথনের অডিওতে শোনা গিয়েছে রাত ৯ঃ৫৭ মিনিটে এসপি বলেছেন জসীম তাদের কাস্টডিতে নাই অথচ বাংলাদেশ প্রতিদিনের সংবাদ অনুযায়ী জসীম নিহত হন রাত দশটার দিকে।কিন্তু এসপি শাফি পরবর্তিতে বলেছেন ক্রশ ফায়ারে জসীম নিহতের খবর তিনি পেয়েছেন ভোর রাতের দিকে ।ঐ সময় পুলিশ সুপার শাফি বলেন,' আপনি এডভান্স এসব কেন বলছেন'?সাদী বলেন, 'আমাদের আশংখা করার মতো তথ্য আছে বলেই এডভান্স আপনাকে জানাচ্ছি'।আর এডভান্স বলেও তো জসীম কে বাঁচাতে পারলাম না'।এর থেকেই পরিষ্কার হয়ে যায় যে জসীম পুলিশী হেফাজতে থাকাকালেই নিহত হন(Extra Judicial Custodial Killing)।
জসীমের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গ্রেফতারের পর তারা পুলিশ ফাড়ীতে গিয়ে তার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়,জসীমের ব্যাপারে অনেক উপর মহল থেকে চাপ আছে তাই তাকে সত্বর কোর্টে চালান দেয়া হবে।এর পর পরই এ এস পি(সার্কেল)মোঃ নাসিম মিয়া এবং এএসপি(সদর)মোঃ জুনায়েদ কাউছার জসীম কে ফাড়ী থেকে নিয়ে যান এবং যাবার সময় জসীমের পরিজনদের বলেন,তাকে কোর্টে চালানোর নিমিত্তে নেয়া হচ্ছে।
এর কিছুক্ষন পরই পুলিশ কাস্টডিতে থাকা অবস্থায় খুব কাছ থেকে বুকে গুলী করে হত্যা করা হয় জসীমকে।আবার খালি হয় জসীমের দূঃখিনী মায়ের বুক।জসীমের এই মর্মান্তিক মৃত্যুসংবাদে তার স্নেহময়ী মাতা অসুস্থ হয়ে লক্ষ্মীপূর সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।তার সমগ্র পরিবার তথা এলাকা বাসী শোকে মূহ্যমান ও বাকরুদ্ধ।
জসীম হত্যার কিছুক্ষন পরই সরকার সমর্থক দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন এর অনলাইন সংস্করনে পুলিশের গুলিতে জসীম নিহতের খবর প্রচারিত হয়। এই মর্মান্তিক ঘটনার খবর জানতে পেরে জনাব সাদী আজ সকালে এসপি শাফিকে পুনরায় টেলিফোন করেন এবং পুলিশ হেফাজতে এই ক্রশ ফায়ারের ব্যাখা দাবী করেন। এসপি শাফি আমতা আমতা করে কথা এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করলেও সাদীর বাক্যবানে জর্জরিত হয়ে একপর্যায়ে টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এব্যাপারে জনাব সাদীর প্রতিক্রিয়া এবং অনূভূতি জানতে চাইলে,তিনি বাষ্পরুদ্ধকন্ঠে বলেন,গ্রেফতারের পরপরই পুলিশ সুপার শাফির সরকারী মোবাইলে ফোন করে অনুরোধ করেছি ,'জসীমের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তা কোর্টে প্রমানের জন্য উপস্থাপন করা হোক। আমি নিশ্চিত যে ঐ সময় জসীম জীবিত ছিলো এবং এর কিছুক্ষন পরই তাকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়।যেভাবে স্বয়ং পুলিশ সুপার কে সরাসরি অনুরোধের পরও ক্রশ ফায়ারে জসীমকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হলো তা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিনা।প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা আজ জনগনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছে মনে হয়।আগামী দিনে প্রতিটি বিচার বহির্ভূত হতাকান্ডের বিচার করে এই হত্যাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হবে ,ইন শা আল্লাহ।
একজন ভদ্র ও মার্জিত ছাত্রনেতা ও অনলাইন একটিভিস্ট হিসাবে জসীম সকলের কাছে পরিচিত ছিলেন।এলাকার সম্ভ্রান্ত অবস্থাপন্ন পরিবারের সন্তান জসীমরা ৪ ভাই এর ৩ ভাই রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।তার পিতার নাম শহীদ উল্লাহ।তার বড় ভাই আনোয়ার হোসেন ছিলেন জেলা যুবদলের একজন নেতা যিনি ২০১২ সালে আওয়ামী পুলিশের ক্রশফায়ারে নিহত হন।জসীমের মেঝো ভাই ছিলেন ইউনিয়ন পরিষদের বিএনপি সমর্থিত জনপ্রিয় নির্বাচিত চেয়ারম্যান(দপ্তর পাড়া ইউনিয়ন) যিনি ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ নেতা কাশেম এবং আজিজ বাহিনীর হাতে নির্মম ভাবে নিহত হন। তার ছোটভাই ইমরান হোসেন সোহাগ চাকুরী সূত্রে সৌদী আরবে অবস্থান করছেন।
পুলিশ সুপার শাফির সরকারী মোবাইল নং ০১৭১৩৩৭৩৭৬০ এর মাধ্যমে হওয়া সাদীর সঙ্গে এই কথোপকথনের রেকর্ড নীচে দেয়া হলোঃ
পুলিশ সুপার ও সাদীর ফোনালাপ শুনুনঃ
ফেসবুকের লিংকঃ
https://www.facebook.com/ZahidFSarderSaddi/videos/vb.459794924083689/918314164898427/?type=2&theater
ইউটিউবের লিংকঃ