ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশের বিনা ভোটের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ লন্ডনে বলেছেন, বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও মিয়ানমার মিলে আমরা যৌথভাবে যোগাযোগের মাধ্যমে আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়েছি। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের যে ভৌগলিক অবস্থার গুরুত্ব রয়েছে, সেটাকে কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নতি করাই সরকারের লক্ষ্য। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেই বাংলাদেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হবে। শুধু নিজেদের কথা নয়। প্রতিবেশীদের কথাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে হাতজোড় করে বসে থেকে কী অর্জন করলেন, ‘ এত তোষামোদি কীসের ? ’।
রোববার লন্ডনের পার্কলেন হোটেলে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেয়া সংবর্ধনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য শেখ হাসিনাকে এ নাগরিক সংবর্ধনা দেয়া হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকসহ নির্বাচিত বাংলাদেশি বৃটিশ পার্লামেন্ট সদস্যদের অভিনন্দন জানানো হয়।
যদিও অনুষ্ঠানে টিউলিপ ছাড়া আর কোন বাংলাদেশ বংশদ্ভূত এমপিকে দেখা যায়নি।জানা যায় অপর দুজন নব নির্বাচিত ব্রিটিশ এমপি রুশনারা আলী এবং রুপা হক শেখ হাসিনার অনুষ্ঠানে অংশ নিতে রাজি হননি।
সফরকালে স্থানীয় বিএনপির ব্যপক বিক্ষোভে বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বিরুদ্ধে ডেমোনস্ট্রেশন কীসের জন্য? স্থলসীমানা চুক্তি বাস্তবায়ন করেছি তার প্রতিবাদে? সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি তার প্রতিবাদে? লন্ডনে বসে আমাকে অপমান করবে, সেটা হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান চলাকালেও হিলটন হোটেলের সামনে যুক্তরাজ্য বিএনপির শত শত নেতা-কর্মী বিক্ষোভ করেন। পুলিশ এ সময় বিক্ষোভকারীদের ঘিরে রাখে। নিরাপত্তা বেষ্টনী মধ্যে বিএনপির বিক্ষোভকারীরা মাথায় কালো কাপড় বেধে ব্যানার ও পোস্টার নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এর আগে গত শুক্রবার এবং শনিবার প্রধানমন্ত্রী যে হোটেলে অবস্থান করছেন (পশ্চিম লন্ডনের হিলটন পার্ক লেইন) তার সামনেও একইভাবে বিক্ষোভ করেছে বিএনপি।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন করে দেশের দুই শতাধিক মানুষকে হত্যা করে কী অর্জন করল। কী লাভ হলো দেশের। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে কয়টি চুক্তি হয়েছে, সেগুলো আওয়ামী লীগ ও তার সরকারের কূটনৈতিক সাফল্য। আজ সারাবিশ্বে বাংলাদেশ একটি মডেল।
তিনি বলেন, দেশ আজ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অনেক বাঁধা আসবে। সেই প্রতিকূলতা ঠেলেই এগিয়ে যেতে হবে। দারিদ্র্যকে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অভিন্ন শত্রু হিসাবে উল্লেখ করে এর বিরুদ্ধে সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি ।
অনুষ্ঠানে শুরুতেই যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতারা শেখ হাসিনার হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেন। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুকের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত ওই সভায় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে একটি মানপত্র পড়েন প্রবীণ সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী।
এ সময় হাসিনা বলেন, এত প্রশংসা পাওয়ার যোগ্যতা তাঁর নেই। তিনি বলেন, ‘বাবার কন্যা হিসেবে আমি গর্বিত। কারণ আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমার এর চাইতে বড় কিছু পাওয়ার নেই’। ১৯৭৫ ও ২০০৭ সালে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় তাঁর প্রতি যুক্তরাজ্যপ্রবাসীদের ভালোবাসা ও অবদানের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য এখন তাঁর কাছে আরও আপন। কারণ তাঁর ভাগনি টিউলিপ ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তিন কন্যা ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এমপি নির্বাচিত হওয়ায় একজন বাঙালি হিসেবে তিনি গর্বিত।
বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়নমুখী কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রায় চার কোটি ৫৭ লাখ ইন্টারনেট গ্রাহক রয়েছে বাংলাদেশে। আধুনিক প্রযুক্তির শিক্ষার পাশাপাশি নিশ্চিত হয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা। নেপালে ভূমিকম্প দুর্গত মানুষদের তাৎক্ষণিকভাবে ১০ হাজার মেট্রিকটন চাল সহায়তা দেওয়া হয়েছে। নেপাল চাইলে বাংলাদেশ এক লাখ মেট্রিকটন চাল সহায়তা দিতে প্রস্তুত বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। দেশের পাঁচ কোটি মানুষ নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে উঠে এসেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ২২ দশমিক ৬০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। হতদরিদ্রের সংখ্যা ৭ ভাগে নেমে এসেছে। এসব বিষয়ে শিগগিরই আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন প্রকাশ হবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্দিষ্ট করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে গৃহহীন, ভূমিহীন কোনো মানুষ থাকবে না। এ ব্যাপারে প্রত্যেক জেলা প্রশাসককে (ডিসি) নির্দেশ দেওয়া আছে। গৃহহীন, ভূমিহারা মানুষ থাকলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাঁদের সরকারি অর্থে বাড়ি করে দেবেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী ভাগনি টিউলিপসহ উপস্থিত ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি লেবার দলের মাইক গ্যাপস, জো স্টিভেনস, ওয়েস স্ট্রিটিং ও কনজারভেটিভ দলের এমপি পল স্কালির হাতে ফুলের তোড়া ও বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ইংরেজি সংস্করণ তুলে দিয়ে অভিনন্দন জানান। এ সময় টিউলিপ বলেন, ‘কখনো ভাবিনি এ রকম একটি অনুষ্ঠানে নিজের খালার হাত থেকে ফুল নেব। আপনাদের দোয়া ও সমর্থন ছাড়া আমি ব্রিটিশ এমপি হতে পারতাম না।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফ। বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এদিকে আমন্ত্রণপত্র থাকার পরও প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা সভায় সাংবাদিকদের প্রবেশে বাঁধা দেবার ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা।