DMCA.com Protection Status
title="৭

জোড়া খুনে আটক পূত্রকে বাচাতে এম.পি পিনু খানের দৌড়-ঝাপ !!!

pinuদৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে মাঝরাতে এলোপাতাড়ি গুলিতে জোড়া খুনের ঘটনায় আটক এমপিপুত্র বখতিয়ার আলম রনি এখনো কারাগারে মাদকের জন্য ছটফট করছেন। সোমবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পুত্রকে দেখতে যান তার মা সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য পিনু খান। মাকে দেখেই করজোরে মাদকের জন্য মিনতি করেন রনি।

কারা সূত্র জানায়, রনির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তার মা পিনু খান সোমবার দুপুর ১টা ১০ মিনিটি কারাগারে প্রবেশ করেন। কারাবিধি মোতাবেক বিচারাধীন কোনো বন্দির সঙ্গে মাসে একবার আধাঘণ্টা কথা বলার সুযোগ পান বন্দির আত্মীয়-স্বজন। কিন্তু পিনু খান সে বিধি ভঙ্গ করে ১টা ১০ মিনিট থেকে ২টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত এক ঘণ্টা ১৫ মিনিট কথা বলেন। এসময় তার সঙ্গে পিনুর ভাই, ভাবী ও একজন নারী ছিলেন।

কারাসূত্র আরো জানায়, সাক্ষাতের সময় মা ও ছেলে উভয়ই কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছেলের প্রিয় খাবার বরফি, কেক, মিষ্টি ও শুকনো খাবারের সঙ্গে ঠাণ্ডা পানি নিয়ে আসেন পিনু খান। এসময় ছেলের সঙ্গে একই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া গাড়ির চালক ইমরান ফকিরের সঙ্গেও দেখা করেন পিনু খান। দীর্ঘ সময় তিনি ও তার ভাইয়ের স্ত্রী মিলে রনি ও ইমরানের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে একান্তে অনুচ্চস্বরে আলাপ করেন।

কারাসূত্র আরো জানায়, কথা বলার মাঝে মাঝেই রনি চিৎকার করতে থাকেন। বলতে থাকেন, ‘আমি অসুস্থ, আমার চিকিৎসা করানো দরকার। মা আমার সারা শরীর জুড়ে নেশার প্রভাব পড়েছে। আমাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করো।’

এসময় পিনু খান তাকে বলেন, ‘তোমার চিকিৎসার সব ব্যবস্থা করছি, চিন্তা করো না।’ কিন্তু রনি কোনো কথা না শুনে তাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার ব্যবস্থা নিতে মা ও মামার কাছে বারবার অনুরোধ করেন। অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকেন, ‘দুর্ঘটনার সময় অমি মাদকাসক্ত ছিলাম। আমি তেমন কিছুই বলতে পারবো না।’ রনি তার শরীরে যে মাদকের কারণে অনেক প্রভাব পড়েছে তা টি শার্ট খুলে দেখাতে থাকেন। উচ্চস্বরে বলতে থাকেন, ‘আমার গায়ের সব রগে নেশার প্রভাব পড়েছে। উন্নত চিকিৎসা না করালে আমি মারা যাব।’

কারাসূত্র জানায়, পিনু খান তার ছেলেকে বারডেম হাসপাতালে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার আশ্বাস দিলেও ছেলে তাতে আশ্বস্ত হয়নি। তখন উপস্থিত একজনের কাছে বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া যাবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কারা অধিদপ্তরে সম্প্রতি চিঠি এসেছে যে কোনো বন্দিকে বারডেম হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়া যাবে না।’ এরপর পিনু খান ছেলেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রিজন্স এনেক্সে রেখে চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার কথা বলেন।

অপর একটি সূত্র জানায়, রনি দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার সম্পর্কে কী কী খবর হচ্ছে তা জানতে চাইলে পিনু খান তাকে জানান, দেশের প্রায় সব পত্রিকায় তার সম্পর্কে নানা খারাপ কথা বলা হচ্ছে। এসময় রনি বলতে থাকেন, ‘আমি ঘটনার সময় মাদকাসক্ত ছিলাম তাই কখন কী ঘটেছে তা কিছুই বলতে পারবো না।’ এসময় একজন সাক্ষাৎপ্রার্থী বলেন, ‘কয়েকটি পত্রিকায় অনেক বেশি খারাপ কথা বলছে, যা তোমার কর্মকাণ্ড বা চরিত্রের সাথে কোনো মিল নেই।’ সাক্ষাৎপ্রার্থীরা রনিকে এ বিষয়ে চিন্তা না করতে পরামর্শ দেন। বখতিয়ার আলম রনি বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মেডিকেল হাসপাতাল-১ এ ভর্তি রয়েছেন। আর ড্রাইভার ইমরানকে ফকির যমুনা-৪ এ রাখা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১৩ এপ্রিল রাত ২টার দিকে রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে রনির ছোঁড়া গুলিতে এক অটোরিকশা চালক এবং এক রিকশাচালক আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। নিহত রিকশাচালক আব্দুল হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম ঘটনার দু’দিন পর থানায় যে মামলা করেছেন তাতে বলা হয়, একটি মাইক্রোবাস থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছোঁড়া হলে তার ছেলে ও অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী মারা যান।

পরে তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, সাদা মাইক্রোবাস নয়, সেটি ছিল কালো রঙের একটি প্রাডো গাড়ি এবং ওই গাড়িতে পিনু খানের ছেলে রনিসহ কয়েকজন ছিলেন। তদন্তে রনির সম্পৃক্ততা পাওয়ার পর গত ৩১ মে তাকে এবং তার গাড়িচালক ইমরান ফকিরকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রনি গুলিবর্ষণের কথা স্বীকার করেন বলে তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন। ঘটনার দিন রনি কালো রঙের প্রাডো গাড়ি থেকে গুলিবর্ষণ করেন বলে তার গাড়িচালক ইমরান আদালতে জবানবন্দিতে বলেছেন।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!