ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ যতো কলা-কৌশল করুক কেনো সরকারকে অবশ্যই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিবার্চনের ব্যবস্থা করতেই হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
মঙ্গলবার রাতে এক মতবিনিময় সভায় বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘‘ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নিবার্চনের কথা বাদই দিলাম। গত সিটি নিবার্চন দেখে বিদেশীরাও বলেছে, আওয়ামী লীগের অধীনে কোনোদিন সুষ্ঠূ নিবার্চন হতে পারে না। কারণ তারা হতে দেবে না। ওরা (আওয়ামী লীগ) জানে সুষ্ঠু নিবার্চন হলে তাদের কী অবস্থা হবে। সেজন্য ওরা ভোটেও যেতে চায় না।’’ ‘‘
আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, আওয়ামী লীগকে অবশ্যই একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিবার্চনের ব্যবস্থা করতেই হবে। দেশে সেই নিবার্চন ভবিষ্যতে অবশ্যই হবে ইনশাল্লাহ।’’
একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ ক্ষমতাসীনরা জানে একটি সুষ্ঠু নিবার্চন হলে তাদের কি পরিণতি হবে ? আগে তারা ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিলো। এবার তারা ক্ষমতার থেকে বিদায় নিলে এবার তাদের অবস্থা মুসলিম লীগের মতো হবে। মুসলিম লীগ এতো টুকরা হয়েছে, আওয়ামী লীগেরও একই অবস্থা হবে। আওয়ামী লীগ আর আওয়ামী লীগ থাকবে না।’’
গুলশান কাযার্লয়ে নোয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির নবনিবার্চিত কর্মকর্তারা যারা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফেরামের প্যানেলে বিজয়ী হন, তাদের সাক্ষাৎ উপলক্ষে এই মতবিনিময় সভা হয়।
দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ দেশে আজ গণতন্ত্র নেই, সুশাসন, মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও জনগনের নিরাপত্তা নেই।আইনের শাসনও নেই। আদালতে গেলে আমরা (বিরোধী দল) জামিন পাই না।’’ ‘‘ আজকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া এই অনুষ্ঠানে আসার কথা ছিলো, তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়ে পারোয়ারা জারি করেছে। সে খারাপ বিপদের মধ্যে আছে। অ্যাডভোকেট পাপিয়া আদালতে হাজিরা দিতে গেছে, তাকে কারাগারে ভরে দিয়েছে। এখন যেই যায়, তাকে ভরে দেয়। ওরা মনে করে জেলে ভরে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপিকে শেষ করা, বিএনপিকে ধবংস করা। এতে কোনো লাভ হবে না।’’ আসন্ন বার কাউন্সিল নিবার্চনে আইনজীবীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতীয়তাবাদী প্যানেলকে বিজয়ী করার আহবানও জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।
দলের বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ আজকে সরকার খবরের কাগজগুলো নিয়ন্ত্রন করছে। বিএনপির নামে উল্টা-পাল্টা, মিথ্যা-বানোয়াট যা মর্জি হচ্ছে, তা লিখছে। ওইসব তাদের বানোয়াট ও মিথ্যা। ‘‘ আমি বলতে চাই, বিএনপি শক্তিশালী ছিলো, আছে এবং ইনশাল্রাহ থাকবে। বিএনপি ঐক্যবদ্ধ আছে, এই দলে কোনো বিভেদ নেই।’’
দলকে পূর্ণগঠন করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন ‘‘ দলকে সচল রাখার জন্য পূর্ণগঠন করতে হয়। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। এটা করতেই হয়। এটাই আমরা করছি। সেজন্য বিএনপি শেষ হয়ে গেছে, বিএনপি নাই বা বিএনপি শক্তিশালী হতে পারছে না, এটা ঠিক নয়। আমরা ঠিক আছি। আমরা শুধু সময়ের অপেক্ষায় আছি।’’ ছাত্রদল,যুবদল, মহিলা দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষকদল, শ্রমিকদলসহ সব সংগঠনে নতুন নেতৃত্ব এনে পূর্ণগঠিত করা হবে বলেও জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।
জঙ্গিবাদের উত্থানের জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ আওয়ামী লীগের তৈরি। আওয়ামী লীগই এর সঙ্গে জড়িত। কিছুদিন পর পর আনসারুল্লাহ, রহমাতুল্লাহ বানানো হয়। যখনই তাদের (আওয়ামী লীগ) অবস্থা খারাপ হয়, তখন বিদেশীদের দেখানোর জন্য আনসারুল্লাহ, রহমাতুল্লাহকে ধরছি। বিদেশীদের বলে আমরা না থাকলে এই জঙ্গিবাদের উত্থান হবে।’’ ‘‘
আমরা বলতে চাই, আওয়ামী লীগের সময়ই জঙ্গিবাদ ও বোমাবাজে উত্থান হয়েছিলো। যশোরে উদিচী বোমা বিস্ফোরণ, পল্টন ময়দানে সিপিবির সমাবেশে, রমনা বটমুলে, গোপালগঞ্জে বোমার ঘটনা হয়েছিলো কোন সময়ে। যত ঘটনা ঘটেছে আওয়ামী লীগের আমলে।ওই সময়ে জঙ্গিদের তারা ধরেনি। আমরা জঙ্গিদের ধরেছি, সাজাও দিয়েছি।’’ শেখ হাসিনা নিয়ন্ত্রণে দেশ নেই দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ হাসিনার নিয়ন্ত্রণে নয়, পুলিশের নিয়ন্ত্রণে দেশ চলছে। পুলিশ বলছে যে আমরা এই সরকারকে টিকিয়ে রেখেছি। আমরা সবকিছু করি।’’ ‘‘
ছাত্রলীগ হয়ে গেছে দৈত্য। একদিকে পুলিশ অন্যদিকে ছাত্রলীগ-যুবলীগ মিলে বিএনপিকে ধ্বংস করতে চায়। আমরা বলতে চাই- বিএনপিকে জনগনের দল। একে শেষ করা যাবে না।’’ রাজধানীতে এক নারী পুলিশ তারর সহকর্মীদের দ্বারা লাঞ্ছনার ঘটনার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। সরকার দুর্নীতিতে নিমজ্জিত বলে অভিয়োগ করে খালেদা বলেন, ‘‘ তারা বড় বড় প্রকল্প নিয়ে কমিশন খায়।’’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ হাসিনা কেবল স্বৈরাচারিই নয়। সে খুনী। গুম-হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত।
সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম থেকে যতজন গুম হয়েছে, খুন হয়েছে- সব খুন-গুমের সঙ্গে তেনারা জড়িত।’’ ‘‘আওয়ামী লীগ হলো, সন্ত্রাসী, লুটেরা দল। তারা হলো গণতন্ত্র হত্যাকারী, আইনের শাসন ও মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করার দল।’’ তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু প্রতি ইংগিত করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ এই সরকার সন্ত্রাসের কথা বলে। তাদের সরকারে একদল দুই দল থেকে আসা মন্ত্রী হয়েছেন। এরা কী সন্ত্রাসী নয়। এরা অতীতে কত মানুষ হত্যা করেছে।’’
সংসদ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘ একটা সংসদ বসিয়েছে। এটা জনগনের সংসদ নয়। ওখানে শুধু আমাদের বিরুদ্ধে গালমন্দ করা হয়। আমরা সংসদের বাইরে। ’’ দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘‘ গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। আসবেও। তবে খুব বেশি দেরি হবে বলে সেটাও না।আবার গণতন্ত্র ফিরে আসবে।আপনার একটু ধর্য়্য ধরুন।’’
প্রধান বিচারপতির সাম্প্রতিক এক বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ প্রধান বিচারপতি সিনহা বলেছেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ব্যাপারে অনেকে কটাক্ষ করে। আমরা চুপ করে থাকি। উচ্চ আদালত সব সময় স্বাধীন ছিলো। এখন কথা উঠেছে নিম্ন আদালত —।’’ ‘‘ প্রধান বিচারপতি বলেছেন, উচ্চ আদালত সব সময় স্বাধীন ছিলো। তিনি বলেছেন, ‘ছিলো’। তার মানে এখন নেই। আরো বলেছেন, নিম্ন আদালত নিবার্হী বিভাগের হাতে। আমি প্রধান বিচারপতির এই কথার পর বলছি, মানুষ আজ কোথাও ন্যায় বিচার পাচ্ছে না।’’ দলীয় বিচারপতি নিয়োগের ফলে ন্যায় বিচার বাধাগ্রস্থ হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন খালেদা জিয়া।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবিএম জাকারিয়া, সাধারণ সম্পাদক সাহাদাৎ হোসেন, সমিতির সাবেক নেতা আবদুর রহীম, কামরুল ইসলাম, আবদুর রহমান প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সানাউল্লাহ মিয়া, বর্তমান সভাপতি মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারুকীসহ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের শতাধিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন।