DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

খালেদা-মোদী বৈঠক নিয়ে মিথ্যাচারঃ তোপের মূখে অবৈধ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাহমুদ আলী

mahmudক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  সংসদ সদস্যদের তোপের মূখে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে দেয়া এক বিবৃতিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সম্ভাব্য বৈঠক প্রশ্নে গত ৫ই জুন সাংবাদিক সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যের জগাখিচূরী মার্কা ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মিথ্যাচার করেছেন। কিন্তু তাতে বিষয়টি পরিষ্কার হয়নি বরং নতুন করে তা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। নয়াদিল্লিভিত্তিক রোববারের পত্রিকা দ্য সানডে গার্ডিয়ানের এক সাংবাদিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়া অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশ সফরকালে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তিনি যাতে বৈঠক করতে না পারেন সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছিল।

দ্য সানডে গার্ডিয়ানের এক সাংবাদিক সৌরভ সান্নালকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর বৈঠক, ২০১৩ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখ্যার্জির সঙ্গে দেখা না করা, জামায়াতে ইসলামী, নির্বাচন নিয়ে খালেদা জিয়া খোলামেলা কথা বলেন। ৬ ও ৭ জুন দুদিনের ঢাকা সফরে আসা মোদির সঙ্গে ৭ জুন খালেদা জিয়ার বৈঠক হয়। আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ‘গত ১৩ জুন ভারতের দ্য সানডে গার্ডিয়ান পত্রিকায় খালেদা জিয়ার একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। এই সাক্ষাৎকারে তিনি (খালেদা) অভিযোগ করেছেন, আমি নাকি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় তার সঙ্গে সাক্ষাতের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছিলাম। তার এই দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্যের আমি নিন্দা জানাই।’

ziamodiমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া বরাবরই ‘নাৎসি’ কায়দায় মিথ্যাচারের একনিষ্ঠ অনুসারী। তিনি মনে করেন একটি মিথ্যাকে বারবার বললেই সত্য হয়ে যায়। যমুনা টেলিভিশনের কূটনৈতিক প্রতিবেদক মাহফুজ মিশু প্রশ্নটি করেছিলেন। তার প্রশ্নের দুটি অংশ ছিল। অডিও টেপ থেকে নেয়া ভাষ্যে দেখা যায়, তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, ‘মাননীয় মন্ত্রী, আমার জানার বিষয় হচ্ছে বাইলেটারাল টকস-এ দুই প্রধানমন্ত্রীর, বাংলাদেশের এক নম্বর এজেন্ডা কি? আমরা কোন বিষয়ে সবচেয়ে জোরালো অবস্থানে থাকবো? এবং দ্বিতীয় হচ্ছে- একটা গুঞ্জন মাননীয় মন্ত্রী, সেটা হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক এখনও নির্ধারিত না। সেটি হওয়ার কোন সম্ভাবনা আপনারা দেখছেন কিনা? দ্বিতীয় প্রশ্নটির জবাব আগে দেন মন্ত্রী। বলেন, “এটাতো আমার মনে হয় না এখানে এটার কোন সুযোগ আছে।” দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশের এজেন্ডা কি থাকছে সে বিষয়ে তিনি বলেন, “কানেকটিভিটি, আমাদের প্রধান উপজীব্য। এই দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় আদান-প্রদান কিভাবে বাড়ানো যায় সেটাই হবে প্রধান প্রতিপাদ্য।”

 

গতকাল মঙ্গলবার সংসদে মন্ত্রী বলেন, “উত্তরে আমি বলেছিলাম, ‘এই প্রশ্নের অলোচনার’ এখানে কোন সুযোগ আছে বলে আমার মনে হয় না।” উল্লেখ্য যে, মন্ত্রী গতকাল তার বিবৃতিতে প্রশ্নকর্তা সাংবাদিককে “বিএনপিপন্থি” বলে চিহ্নিত করেন। অথচ ওই সাংবাদিক নিজকে বিএনপিপন্থি বা কোন পন্থি হিসেবে পরিচয় দেন না। তিনি পেশাদার সাংবাদিক। উপরন্তু সাংবাদিক সম্মেলনে কোন বিএনপিপন্থি সাংবাদিকের প্রবেশাধিকারে বাধা-নিষেধও ছিল না। ওই সাংবাদিক সম্মেলনের পরে এ বিষয়ে অনেক ঘটনা ঘটে। তাঁর ওই মন্তব্য নিউজ রুমগুলোতে স্বাভাবিক চমক সৃষ্টি করেছিল। তাই বিভিন্ন চ্যানেল ও অনলাইনের স্ক্রলে তাঁর ওই মন্তব্য ফলাও করে প্রচারিত হয়। ঢাকার বিভিন্ন পত্রিকাতেও ছাপা হয়।

 

কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহিঃপ্রচার অনুবিভাগ বা সরকারের তরফে এর তাৎক্ষণিক কোন প্রতিবাদ হয়নি। কোন ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। অথচ এ রকম একটি ‘মিথ্যা’ খবরের কূটনৈতিক তাৎপর্য ছিল অসাধারণ। এর প্রতিবাদ করা হয় ৯ই জুন ইত্তেফাকে রিপোর্ট ছাপা হওয়ার পরে। যুগান্তর পত্রিকা ও যমুনা টেলিভিশন একই মিডিয়া হাউসের পত্রিকা। এর একজন সাংবাদিককে ‘বিএনপিপন্থি’ এবং অপরজনকে মন্ত্রী তাঁর দেয়া বক্তব্যের স্বপক্ষে নিরপেক্ষ সাংবাদিক হিসেবে হাজির করেন।

 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর বিবৃতিতে যমুনার “বিএনপিপন্থি” সাংবাদিকের নাম পর্যন্ত উল্লেখ করেননি। আবার তিনিই বিবৃতিতে বলেন, যুগান্তরের সাংবাদিক জনাব মাসুদ করিম মোহনা টিভিতে বলেছেন, আমি ছিলাম ওই ব্রিফিংয়ে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে, “এই প্রশ্ন নিয়ে এখানে আলোচনার কোন সুযোগ নেই।” ইত্তেফাকের রিপোর্টমতে মন্ত্রিসভার বৈঠকে মন্ত্রী তার ওই মন্তব্যের জন্য সমালোচিত হন।

 

এরপরই তিনি প্রতিবাদ করেন। অথচ ঢাকায় তার ওই মন্তব্যের সরাসরি প্রতিক্রিয়ায় কিংবা কাকতালীয়ভাবে হোক বা না হোক, দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জয়শঙ্কর ৫ই জুনেই নিশ্চিত করেন যে, মোদি-খালেদা বৈঠকটি হচ্ছে। এই ঘটনা দৃশ্যত বাংলাদেশ সরকার বা আওয়ামী লীগের মর্যাদা বাড়ায়নি। তাছাড়া ৫ই জুনের বরাতে যেসব খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল তা ছিল কূটনৈতিকভাবে ভুল। কারণ বিদেশী মেহমান কার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বা করবেন না, সে বিষয়ে স্বাগতিক দেশের আগ বাড়িয়ে কোন মন্তব্য সাজে না। সুতরাং ভুলভাবে খবরটি প্রচারিত হয়ে থাকলেও তা ছিল যথেষ্ট স্পর্শকাতর, সে কারণে গতকাল বা তার আগে ৯ই জুন যা বলা হয়েছে তা বলা উচিত ছিল ৫ বা ৬ই জুনেই।

 

লক্ষণীয় যে, সানডে গার্ডিয়ানকে দেয়া সাক্ষাৎকার প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল মঙ্গলবার সংসদে বিবৃতি দিলেন। কিন্তু তিনি ওই পত্রিকার সাংবাদিকের নিজস্ব বক্তব্যকে খণ্ডন করেননি। তিনি বাংলাদেশী সাংবাদিককে আক্রমণ করলেন। ভারতীয় সাংবাদিককে নয়।

 

বেগম খালেদা জিয়ার জবানিতে নয়, সানডে গার্ডিয়ানের সাংবাদিক সৌরভ স্যানাল নিজের জবানিতে তার লেখার সূচনাতেই সর্বাধিক গুরুত্বের সঙ্গে প্রথম বাক্যেই লিখেছেন, “উইল শি অর ওয়ান্ট শি, দ্যাট ওয়াজ দ্য কোয়েশ্চেন।” প্রধানমন্ত্রী মোদি তার প্রথম শুরুর আগেই বাংলাদেশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা দেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে মোদির বৈঠকের সামান্যই সম্ভাবনা রয়েছে। সেই বিবৃতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জয়শঙ্কর কোন অনিশ্চিত ভাষায় নয়, দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন, মোদি-খালেদা বৈঠকটি হবেই।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!