DMCA.com Protection Status
title=""

জোড়া খুনঃ ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে দলীয় পদ হারাচ্ছেন পিনূ খান

pinuদৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ ছেলে বখতিয়ার আলম রনির জোড়া খুনের ঘটনা এবং স্বয়ং পিনু খানকে নিয়ে সংগঠনের অভ্যন্তরে নানাবিধ বিতর্ক থাকায় সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় এই সংসদ সদস্যকে মহিলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যহতি দেওয়া হতে পারে।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডন থেকে দেশে ফিরে পিনু খানের ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। মহিলা লীগের সভানেত্রী সাবেক এমপি আশরাফুন্নেছা মোশারফ জানিয়েছেন, অচিরেই সংগঠনের কাযনির্বাহী কমিটির জরুরি সভা ডাকা হবে। সভায় সদস্যদের সম্মতিতে পিনু খানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

গত ১৩ মে রাজধানীর ইস্কাটনে সংসদ সদস্য পিনু খানের প্রাডো গাড়ি থেকে ছেলে রনি এলোপাতাড়ি গুলি চালালে দুই জন নিরীহ ব্যক্তি নিহত হয়। ঘটনার বেশ কিছুদিন পরে দৈনিক জনকণ্ঠ ভবনে স্থাপিত সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখে পিনু খানের গাড়িটি সনাক্ত করে পুলিশ। এরপর পিনু খানের গাড়ি চালক ইমরান ফকিরকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ইমরান স্বীকার করে যে, পিনু খানের ছেলে রনি নিজের লাইসেন্সকৃত অস্ত্র থেকে গুলি ছুড়লে দুই জন আহত হয়। পরে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে তারা মারা যান।

চালকের স্বীকারোক্তির পর পুলিশ পিনু খানের ছেলে রনিকে গ্রেফতার করে। ঘটনার সময় রনির সঙ্গে থাকা তিনজন এরই মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়ে বলেছে, রনি মাতাল অবস্থায় গাড়ি থেকে গুলি ছুটেছিল। এর পর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিনু খানের প্রাডো গাড়িটি জব্দ করে। শুক্রবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, পিনু খানের ছেলে রনির লাইসেন্সকৃত অস্ত্র থেকে ছোড়া গুলিতেই দুইজন মারা গেছে এটি প্রমাণিত হয়েছে। মনিরুল বলেন, জোড়া খুনের ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি না দিলেও একের পর এক সব সাক্ষ্যপ্রমাণই যাচ্ছে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনির বিরুদ্ধে।

শুক্রবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। মনিরুল ইসলাম বলেন, রনির যে আগ্নেয়াস্ত্র (৭ পয়েন্ট ৬৫) থেকে সেদিন গুলি করা হয়েছিল সেটি ব্যালাস্টিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সেই রিপোর্ট আমরা হাতে পেয়েছি। নিহতদের শরীরের বুলেট এবং পরীক্ষাগারে পাঠানো অস্ত্রের বুলেট একই ক্যালিবারের বলে রিপোর্ট এসেছে। এই আগ্নেয়াস্ত্র দিয়েই সেদিন ফায়ার (গুলি) করা হয়েছিল। মনিরুল ইসলাম বলেন, এ মামলার সব ধরনের সাক্ষ্যপ্রমাণ এখন আমাদের হাতে। সেই গাড়িতে রনি এবং গাড়িচালক ছাড়াও আরো তিনজন ছিল। তাদের দেয়া বক্তব্যের সঙ্গে গাড়িচালকের দেয়া বক্তব্যের হুবুহু মিল পাওয়া গেছে। ব্যালেস্টিক প্রতিবেদনেও রনির পিস্তল দিয়ে গুলি ছোড়ার প্রমাণ মিলেছে। তাই আশা করছি আগামী সপ্তাহেই এ মামলার চার্জশিট দিতে পারবো আমরা।

মনিরুল আরও বলেন, রনি আমাদের কাছে খুনের ঘটনায় নিজের দোষ স্বীকার করলেও আদালতে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে অস্বীকৃতি জানান। কিন্তু তার গাড়ি-চালক ইমরান ফকির আমাদের কাছে সেদিনকার ঘটনার বিবরণ দিয়েছে। সে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছে। ইমরান আমাদের জানিয়েছিল, সেদিন গাড়িতে রনির তিনজন বন্ধুও ছিল। তার হলেন- জাহাঙ্গীর আলম, টাইগার কামাল ও কামাল মাহমুদ। এদের মধ্যে জাহাঙ্গীরকে ঘটনার আগেই মগবাজারে তার বাসায় নামিয়ে দেয়া হয়েছিল। অন্য দুইজন ঘটনার সময় গাড়িতেই ছিল। তারা তিনজনই আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

ছেলে রনিকে গেফতারের পর থেকেই পিনু খান আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদেরকে বলেছিলেন, মিথ্যা অভিযোগেই তার ছেলেকে জোড়া খুনের সঙ্গে জড়ানো হচ্ছে। ঘটনার সময় রনি ইউনাইটেড হাসপাতালে ছিল বলেও দাবি করে আসছিলেন পিনু খান। তবে সেদিন গাড়িতে থাকা রনির তিন বন্ধুর আদালতে স্বীকারোক্তি এবং গাড়ি চালকের স্বীকারোক্তির পর পর্দার আড়ালে চলে গেছেন পিনু খান।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও এখন পিনু খানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। ফলে মহিলা লীগের আগামী কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় পিনু খানকে তার পদ থেকে অব্যহতি বা বহিষ্কার করা হতে পারে বলে অনেকটাই নিশ্চিত বলে জানান একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!