দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ সাধারণত নতুন ব্যবসা শুরুর পর প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই ব্যর্থ হন। তবে এটিই শেষ কথা নয়। বহু মানুষই অসাধারণ আইডিয়ার জোরে সাফল্য পান। এ লেখায় থাকছে তেমন কয়েকজন সফল ব্যক্তিদের কথা। যারা নিজস্ব আইডিয়ার কারণেই বিলিয়নেয়ার হয়ে উঠেছেন। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে বিজনেস ইনসাইডার।
১. ল্যারি পেইজ ও সার্জে ব্রিন স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিলেন। সে সময়েই তাদের একটি ভিন্ন ধরনের সার্চ ইঞ্জিন তৈরির পরিকল্পনা মাথায় আসে। এরপর তারা তাদের সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সফল হন। বর্তমানে গুগল শুধু বিশ্বসেরা সার্চ ইঞ্জিনই নয়, গুগল এখন নানা দিকে সম্প্রসারিত করেছে তার ব্যবসা।
২. মার্ক জাকারবার্গ হারভার্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় ‘হট অর নট’ ধরনের ওয়েবসাইট নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। এ সময়েই তিনি প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন মানুষের অনলাইনে যোগাযোগ ব্যবস্থার আইডিয়া পান। পরবর্তীতে তিনি এ আইডিয়া ব্যবহার করে গড়ে তোলেন ফেসবুক। এটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। আর এর প্রতিষ্ঠাতা কামিয়ে নিয়েছেন অঢেল অর্থবিত্ত।
৩. ওয়াল স্ট্রিট ট্রেডার মাইকেল ব্লুমবার্গ ১৯৭০ সালে বুঝতে পারেন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নির্ভরযোগ্য তথ্যের জন্য অর্থ প্রদান করতে রাজি। আর এ বিষয়টিকেই ব্যবসার মূলমন্ত্র হিসেবে ধরে নেন ব্লুমবার্গ। তিনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য আর্থিক তথ্য সরবরাহের ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। আর এ থেকেই তিনি গড়ে তোলেন ব্লুমবার্গ। বর্তমানে ব্লুমবাগের সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৩৭ বিলিয়ন ডলার।
৪. ৯০ দশকের শুরুতে জেফ বেজস কাজ করতেন ওয়াল স্ট্রিটের একটি ফার্মে। এ সময়েই তিনি নিজস্ব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন। তবে সাধারণ দোকান হিসেবে নয়, তিনি অনলাইন ব্যবহার করে বই বিক্রি শুরুর সিদ্ধান্ত নেন। আর এ আইডিয়াই তাকে ব্যবসায় নতুন দিগন্তের সন্ধান দেয়। বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন ডটকমের বার্ষিক বিক্রি ৮৮ বিলিয়ন ডলার।
৫. শিকাগোতে বড় হয়ে ওঠা ল্যারি এলিসনের শিশুকাল ভালো ছিল না। ৬০ দশকে তিনি ক্যালিফোর্নিয়াতে যান ২২ বছর বয়সে। এ সময়ে তিনি এসকিউএল ব্যবহার করে ওরাকল ডেটাবেস তৈরি করেন। এটি আইবিএম কম্পিউটারে চলে। কয়েক বছর পরে ওরাকল বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির মূল্য ১৯৫ বিলিয়ন ডলার।
৬. ১৯৭৫ সালে মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস ও পল অ্যালেন একত্রে কিছু সফটওয়্যার প্রোগ্রামিং শুরু করেন। কিছুদিনের মধ্যেই তারা ডস তৈরি করেন। তারপর উইন্ডোজ তৈরি করেন, যা ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এখনও মাইক্রোসফট বিশ্বের সফটওয়্যার বাজারের শীর্ষে এবং বিল গেটস ও পল অ্যালেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।
৭. মার্ক কিউব্যান ১৯৯০ সালের একজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা। তিনি ব্রডকাস্ট ডট কম নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন। এটি স্যাটেলাইট ব্রডকাস্টগুলোকে ওয়েবে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে তিনি এ প্রতিষ্ঠানটি ইয়াহুর কাছে ৫.৭ বিলিয়ন ডলারে বিক্রি করেন।
৮. চীনা একজন ব্যক্তি জ্যাক মা ১৯৯৫ সালে নানা ব্যবসার আইডিয়া নিচে চিন্তাভাবনা শুরু করেন। তিনি দুটি ইন্টারনেট স্টার্টআপস করেন, যার দুটিই ব্যর্থ হয়। তৃতীয় প্রচেষ্টা হিসেবে তিনি আলিবাবা ডট কম প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ব্যাপক সফলতা অর্জন করে। বর্তমানে তিনি ২৪ বিলিয়ন ডলার সম্পদের মালিক।
৯. জ্যান কউম ও ব্রায়ান অ্যাকটন ফোনবুক তৈরি করেন, যা স্ট্যাটাস আপডেট ও ব্যক্তির নাম প্রকাশ করত। এছাড়া আরও কিছু আপডেটের ব্যবস্থা ছিল। ২০১৪ সালে হোয়াটসঅ্যাপকে ফেসবুক কিনে নেয় ১৯ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে। বর্তমানে এর ৮০০ মিলিয়ন মাসিক ব্যবহারকারী রয়েছে। কউমের সম্পদের পরিমাণ একন ৬.৮ বিলিয়ন ডলার।
১০. স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময়ে জেরি ইয়াং ও ডেভিড ফিলো একটি ওয়েবসাইট তৈরির চিন্তা করেন। তারা এ সাইটটির নাম দেন "Jerry and David's Guide to the World Wide Web." উদ্বোধনের এক বছরের মধ্যে এটি বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ওয়েবসাইট হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে তারা ওয়েবসাইটটির নাম পরিবর্তন করে ইয়াহু! রাখেন।
১১. ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসে পড়ার সময় মাইকেল ডেল বুঝতে পারেন ক্রেতাদের সরাসরি পছন্দ করে কম্পিউটার কেনার বিষয়টি জনপ্রিয় হতে পারে। এরপর তিনি ডেল নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলেন যেখানে প্রতিষ্ঠান সরাসরি ক্রেতাদের অর্ডার অনুযায়ী পিসি তৈরি করে সরবরাহ করত। এতে পিসির দামও কম পড়ত। পরবর্তীতে এ প্রতিষ্ঠানই বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা লাভ করে। বর্তমানে মাইকেল ডেল ১৮ বিলিয়ন ডলারের মালিক।
১২. গোপ্রো প্রতিষ্ঠাতা নিক উডম্যান একজন সার্ফার। তিনি সার্ফারদের ভালো ছবি তুলতে উৎসাহিত করতে গোপ্রো ক্যামেরা প্রতিষ্ঠা করেন। গত বছর প্রতিষ্ঠানটি শেয়ার মার্কেটে প্রবেশ করে। বর্তমানে এর মোট সম্পদের পরিমাণ ৭.৮ বিলিয়ন ডলার এবং উডম্যানের সম্পদের পরিমাণ ২.৫ বিলিয়ন ডলার।