ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ৩০০ বছরের পুরোনো স্থাপত্য সম্পদ লালবাগের কেল্লা ধংস করে তাতে পার্কিং লট তৈরী করার পরিকল্পনা অবিশ্বাস্য এবং অবিবেচনা প্রসূত।কোন অবস্থাতেই এই স্বেচ্ছাচারীতা মেনে নেয়া যায় না।
দেশের প্রত্নসম্পদ সংরক্ষণে সরকারের আর্থিক দৈন্যতার অজুহাত থাকলেও লালবাগ কেল্লার মতো স্থাপত্য ধ্বংসে খুব সহজেই টাকার বরাদ্দ মিলেছে। কেল্লার দেয়াল ভেঙে ভেতরে কার পার্কিয়ের জায়গা করা প্রত্ন আইনের পরিপন্থি। আমাদের ঐতিহ্যের ধারক লালবাগ কেল্লার প্রাচীর পুনর্নির্মাণ ও কেল্লার ভেতরের নির্মাণ কাজ অনতিবিলম্বে বন্ধ করে আগের আদলে ফিরিয়ে আনতে হবে।
লালবাগ কেল্লার সামনে পরিবেশবাদী ১৬টি সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে শনিবার বেলা ১১টায় আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানানো হয়। বক্তারা বলেন, ৩০০ বছরের পুরনো মুঘল কীর্তি লালবাগ কেল্লার মহিমা বিনষ্ট করে প্রাচীর ভেঙে কেল্লার ভেতরে পার্কিং অবকাঠামো নির্মাণ করা জাতির জন্য লজ্জাজনক। খোদ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর পুরাকীর্তি বিনষ্টের এই দায়িত্ব নিয়েছে। বিদেশি পর্যটকদের গাড়ি পার্কিংয়ের কথা বলে কর্তৃপক্ষ একটি বিশেষ গোষ্ঠীর ব্যবসায়ী স্বার্থ রক্ষা করছে। অথচ বিদেশি পর্যটকেরা বরং অধিক ঐতিহ্য সচেতন। তারা দূর পথও পায়ে হেঁটে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখতে মনস্তাত্ত্বিকভাবে প্রস্তুত থাকে।
তারা বলেন, সারা দুনিয়াতে যেখানে প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ সংরক্ষণে মূল নকশাকেই সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়া হয়। সেখানে লালবাগের কেল্লার ভেতরে অবকাঠামো নির্মাণ করে মূল নকশার পরিবর্তন ঘটানো হচ্ছে। যা ১৯৬৮ পুরাকীর্তি আইনের পরিপন্থি।
পার্কিংয়ের মাধ্যমে গাড়ির শব্দ ও ধূয়ার দূষণে এই প্রত্ননিদর্শনের বরং ক্ষতিই বয়ে আনবে। এই কার পার্কিং সুবিধা তৈরি করে দেয়ার মাধ্যমে এলাকায় যানজটেরও সৃষ্টি হবে।
বক্তারা আরো বলেন, লালবাগ কেল্লার চারপাশের সব অবৈধ স্থাপনা অপসারণে হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। কেল্লা কর্তৃপক্ষ মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনার বাস্তবায়ন না করে বরং স্বার্থান্বেষী মহলের ইতিহাস ঐতিহ্যকে মুছে দেয়ার ষড়যন্ত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। দেশের ঐতিহ্য রক্ষার স্বার্থে অবিলম্বে এই আত্মঘাতী কার্যক্রম বন্ধ করার দাবি জানানো হয় মানববন্ধন থেকে।
সেই সাথে লালবাগ কেল্লার মহিমা রক্ষায় কেল্লার প্রাচীর আগের আদলে পুনর্নির্মাণ ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে যারা পরিকল্পিতভাবে লালবাগ কেল্লা বিনিষ্টের সঙ্গে জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় আনার দাবিও জানানো হয়। দাবি মানা না হলে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়া হয় মানববন্ধন থেকে।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে ও সমন্বয়কারী আতিক মোরশেদের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহিদুল হক খান, যুগ্ম-সম্পাদক আলমগীর কবির, বিআইপির যুগ্ম-সম্পাদক মো. আরিফুল ইসলাম, গ্রীন মাইন্ড সোসাইটির সভাপতি আমির হোসেন, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের ন্যাশনাল অ্যাডভোকেসি অফিসার মারুফ হোসেন, প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর আমিনুল ইসলাম সুজন, স্থপতি সাজ্জাদুর রশিদ, পবার সহ-সম্পাদক নজরুল ইসলাম, মো. সেলিম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাজী আলেয়া পারভীন রনজু, পীসের মহাসচিব ইফমা হুসাইন, দেবীদাস ঘাট সমাজ কল্যাণ সংসদের সভাপতি মো. মুসা, ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরিজম স্টুডেন্টস কনফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট মো. আশিকুর রহমান অভি, পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটির সভাপতি বুরহান উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।