ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ মহানবী (সঃ)এবং পবিত্র হজ্জব্রত নিয়ে চরম অবমাননাকর মন্তব্যকারী আওয়ামীলীগ মন্ত্রী ও নেতা আবদুল লতীফ সিদ্দিকীকে স্বসন্মানে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে নতুন খেলা শুরু করেছে অবৈধ হাসিনা সরকার।সংসদ সচিবলয় সূত্রে জানা যায় দল থেকে কোন চিঠি না পাওয়ায় লতীফের সংসদ সদস্যপদ এখনও বহাল আছে।এমনকি অচিরেই তাকে আবার মন্ত্রীসভায় ফিরিয়ে আনা হতে পারে বলে জনমনে ব্যপক গুন্জন রয়েছে।
ধানমণ্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয় থেকে জাতীয় সংসদে যেতে পার হতে হয় আড়াই কিলোমিটার। সময় লাগে সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট। কিন্তু বিস্ময় উদ্রেক করা বিষয় হলো, লতিফ সিদ্দিকীকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের চিঠি গত ৮ মাসেও এই আড়াই কিলোমিটার পথ পারি দিতে পারেনি। অর্থাৎ লতিফকে বহিষ্কার করে ইস্যু করা চিঠি পৌঁছেনি জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে।
চিঠিটি ডাকে দেওয়া হয়েছিল জানিয়ে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী জানান, এর দায় কি ডাক বিভাগের, নাকি ওনাকে বহিষ্কারের ঘোষণাতেই দলীয় ব্যবস্থা সীমাবদ্ধ? অনেকের সন্দেহ, ওই চিঠি কি আদৌ ডাকে দেওয়া হয়েছে? হজ ও মহানবী (সা.) নিয়ে কটূক্তি করার অপরাধে গত বছর ২৪ অক্টোবর দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে লতিফ সিদ্দিকীকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ।
পরদিন আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডি কার্যালয় থেকে দলীয় প্রধানের স্বাক্ষরযুক্ত তিনটি চিঠি জাতীয় সংসদের স্পিকার, নির্বাচন কমিশন ও লতিফ সিদ্দিকীর টাঙ্গাইলের ঠিকানা বরাবর পাঠানোর কথা জানান দলটির দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ। কিন্তু সে চিঠি এই তিন ঠিকানায় এখনো পৌঁছেনি। এ বিষয়ে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, আমার কাছে লতিফ সিদ্দিকী বিষয়ে আওয়ামী লীগের বহিষ্কারাদেশের কোনো চিঠি আসেনি। চিঠি পেলে ব্যবস্থা নিতে আমি তা নির্বাচন কমিশন বরাবর পাঠাতাম। নির্বাচন কমিশনের ফিরতি চিঠির উত্তরে কার্যকর ব্যবস্থা নিত জাতীয় সংসদ। যেহেতু তার বিষয়ে জাতীয় সংসদকে তার দল কিছু অবহিত করেনি, তাই লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদ বহাল রয়েছে।
স্পিকার আরও বলেন, দল বহিষ্কার করলে সংসদে স্বতন্ত্র সাংসদ হিসেবে থাকারও এখতিয়ার নেই তার। কারণ স্বতন্ত্র সাংসদরা যেভাবে ভোটারদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে নির্বাচনে অংশ নেন, তার ক্ষেত্রে তেমনটি হয়নি।
এদিকে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ চিঠি ডাকে দেওয়ার বিষয়টি থেকে সরে এসেছেন। তিনি বলেন, বিশেষ কারণে শেষ পর্যন্ত চিঠি পোস্ট করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
অবশ্য প্রবীণ এ নেতাকে বহিষ্কারের পর গত বছর এক প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, লতিফ সিদ্দিকীকে কারণ দর্শাও নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। তিনি যে জবাব দিয়েছেন তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে তার প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিল করে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দল থেকে বাদ পড়ায় লতিফের সংসদ সদস্যপদ থাকছে কি-না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, দল থেকে বহিষ্কারের পর লতিফ সিদ্দিকী আর সাংসদ থাকতে পারবেন না। আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত দ্রুততম সময়ে ইসিতে পাঠিয়ে দেব।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে এক অনুষ্ঠানে মহানবী (সা.) ও হজ নিয়ে অত্যন্ত আপত্তিকর মন্তব্য করায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন লতিফ সিদ্দিকী। বিভিন্ন জেলায় তার বিরুদ্ধে কয়েক ডজন মামলা হয়, জারি হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। এ ঘটনার জেরে গত ১২ অক্টোবর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তাকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ওইদিন লতিফ সিদ্দিকীর প্রাথমিক সদস্যপদ স্থগিতেরও সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। তাকে কেন চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হবে না, তা জানতে চেয়ে ১৪ অক্টোবর কারণ দর্শাও নোটিশ পাঠানো হয়। এদিকে সব হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে গত ২৪ নভেম্বর দেশে ফেরেন লতিফ সিদ্দিকী।
পরদিন আদালতে আত্বসমর্পণ করলে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। কয়েকদফা শুনানির পর গত সোমবার তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়। গত মঙ্গলবার সংসদে যাচ্ছেন এই গুঞ্জন থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি সংসদে উপস্থিত হননি।