ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ নিবার্হী বিভাগের হস্তক্ষেপে দেশের বিচার বিভাগ বর্তমানে ‘বেশি নিয়ন্ত্রিত’ বলে অভিযোগ করেছেন খালেদা জিয়া। ‘‘ সত্যি কথা বলতে কি- বিচার বিভাগ বিভাগ পৃথক হয়েছে ঠিকই, স্বাধীন হয়নি। স্বাধীন বিচার বিভাগ নয়। তাদের স্বাধীনতা এখনো হরণ ও খর্ব করা হয়। বরং এখন বিচার বিভাগ আরো বেশি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।’’ দেশে ন্যায় বিচার ও আইনের শাসন না থাকার কারণে আইনের দুইরকম প্রয়োগ হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্যে‘র আয়োজিত ইফতার মাহফিলে একথা বলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ।
সুপ্রিমকোর্টসহ বিভিন্ন বারের তিন সহস্রাধিক আইনজীবী এই ইফতারে অংশ নেন। দেশের সবোর্চ্চ বিচারাঙ্গনের কথা স্মরণ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ এই সুপ্রিম কোর্টের মিলনায়তন থেকে আমি বলতে চাই, দেশে কি আইনের শাসন আছে, সকলের জন্য আইন সমান-এটা কি সত্য কথা। না তা ঠিক নয়। কারণ আমরা দেখেছি, সরকারি দল হলে এরকম বিচার হয়, বিরোধী দল ও সাধারণ মানুষ হলে আরেক রকম। এটা চলতে পারে না।’’ ‘‘ আইনের চোখে যে দলই অপরাধ করুক না কেনো, তারা অপরাধী, তার শাস্তি হবে।। আমরা দেখতে পাই বর্তমানে সরকারি দলের কাউকে অপরাধী বলা হয় না, তাদের শাস্তি হয় না। বিএনপির লোকেরা অপরাধ না করেও আজ অপরাধী হচ্ছে।’’
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘আমাদের আন্দোলন বন্ধ হতো না, বাসে আগুন দিয়েছে পুলিশ, পেট্রোলবোমা মেরেছে পুলিশ। পুলিশ নিজেই স্বীকার করেছে। তাদের কেন আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না?’ সারাদেশে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘‘ বিএনপির এমন একজনও নেই, তার বিরুদ্ধে মামলা নেই। বিএনপির কী সব অপরাধী। আর আওয়ামী লীগের কি সব সুফী হয়ে গেছে।’’‘‘ যারা একসময়ে কেউ ২০ হাজার, কেউ ৩০ হাজার মানুষ গুম-খুন করেছে, যা রেকর্ডে আছে। আজ তারা সব ভালো মানুষ হয়ে গেছে। এই হচ্ছে আজকের বিচার।’’ বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘ বিএনপির নেতা-কর্মীরা নাকী গাড়ি পোড়ায়।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, বাসে আগুন দিয়েছে পুলিশ, পেট্রোলবোমা মেরেছে পুলিশ। পুলিশ নিজেই স্বীকার করেছে। তাদের কেন আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না?’। পুলিশও যেভাবে সাজিয়ে দেয় বিচারকরা তা ভালোভাবে দেখে না। তারা(বিচারক) একতরফা শাস্তি দেয়। এ কারণে আমাদের নেতা-কর্মীদের দিনের পর দিন কারাগারে রাখা হয়, শাস্তি দেয়া হয়।’’ ‘‘
আমরা বলতে চাই, বিএনপি গাড়ি পোড়ানোর রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না।আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো সঠিক নয়।’’ ১৯৯৬ সালে গান পাউডার দিয়ে যাত্রীবাহী দোতলা বাসে আগুন লাগিয়ে মানুষ হত্যা ও পরবর্তিতে লৈগি-বৈঠার আন্দোলনে জীবন্ত মানুষ হত্যার প্রসঙ্গ টেনে খালেদা জিয়া ‘‘ তাহলে কি আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী দল নয় ? তারা সন্ত্রাসী। কত বাসে আগুন দিয়েছে তারা। এভাবে আওয়ামী লীগ প্রতি পদে পদে সন্ত্রাস করছে।’’
বিচারক অপসারণে ১৬ তম সংশোধনীর সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ এখন বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা এখন সংসদে হাতে দেয়া হচ্ছে। তার মানে আরো বেশি নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরফলে বিচারকরা বেশি নিয়ন্ত্রিত। এজন্য দেশে আজ ন্যায় বিচার নেই, আইনের শাসন নেই।’’
তিন সিটি করপোরেশনের নিবার্চনে সময়ে নিজের গাড়িতে গুলিবর্ষন ও হামলা ঘটনায় সরকার কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি। ‘‘ তাহলে একলা বিএনপিকে কেনো সন্ত্রাসী দল বলা হয়। তারা গাড়ি পোঁড়ায় এই অভিযোগ করা হয়।’’
নাশকতার মামলায় অভিযোগকৃত দলীয় সকল নেতা-কর্মীর মুক্তির দাবি জানিয়ে আদালতের কাছে ‘ ন্যায় ও সুবিচার’ বিচার প্রার্থনা করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আসন্ন নিবার্চনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী প্যানেলকে ঐক্যবদ্ধভাবে বিজয়ী করার জন্য আইনজীবীদের প্রতি আহবান জানান তিনি।‘‘ দেশে আজ গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা দরকার। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। গুম-খুন বন্ধ করা দরকার। তা না হলে দেশে শান্তি ফিরে আসবে না।’’
অবিলম্বে নিবার্চনের দাবি পূনরুর্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ প্রত্যেকে বলছে, একটা নিবার্চন দরকার। তবে সেটা আওয়ামী লীগের মার্কা সিটি করপোরেশন নিবার্চনের মতো নয়। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহনমূলক একটি গ্রহনযোগ্যমূলক সুষ্ঠু নিবার্চন হতে হবে।’’
খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক টেবিলে সুপ্রিম কোর্টের প্রবীন আইনজীবী অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি টিএইচ খান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন ছাড়াও ছিলেন মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, এজে মোহাম্মদ আলী, শাহজাহান ওমর, জয়নুল আবেদীন, আমীনুল হক, মীর মো. নাসির, গরীবে নেওয়াজ, আহমেদ আজম খান, নজরুল ইসলাম খান, লুৎফে আলম, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মাহবুবউদ্দিন খোকন ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মাসুদ আহমেদ তালুকদার।
এছাড়া সুপ্রিম কোটের আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া, খোরশেদ আলম, মহসিন মিয়া, বদরুদ্দোজা বাদল, ইকবাল হোসেন, বোরহান উদ্দিন, গোলাম মুস্তফা খান, ওমর ফারুক ফারুকীসহ জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরাও ছিলেন। শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমেদ, অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, অধ্যাপক সদরুল আমিন, অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার, কলামিস্ট মাহফুজউল্লাহ, বিএনপির চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ফজলুল হক মিলন, খাইরুল কবীর খোকনও ইফতার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।